ডি সি অফিসের এলএ শাখা টাউট-দালারদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সার্ভেয়ার আজাদ, আনিস ও ফরিদ

0
915

অপরাধ বিচিত্রা:
ঢাকা জেলা প্রশাসনের আওতাধীন এলএ (ভূমি অধিগ্রহন) শাখা চিহ্নিতকিছু টাউট-বাটপারদের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিপূরনের হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার জন্য চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে গেছে প্রকৃত ভূমি মালিকরা। তাদেরকে নানা হয়রানি করে টাউট-বাটপার এবং দালালচক্রের সদস্যরা মোটা অংকের ঘুষ আদায় করে নিচ্ছেন। আর এদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলএ শাখার সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ, আনিসুল ইসলাম ও ফরিদ উদ্দিন। তাদের এসব কার্যকলাপের কারনে পুনরায় এলএ শাখাটির ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।

এলএ শাখা সূত্রে জানা যায়, অতীতে এ শাখাটি দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, জালিয়াত এবং অসাধূদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। নির্দিষ্ট হারে ঘুষ প্রদান করে একজনের ক্ষতিপূরন আরেক জন তুলে দিতেন। চাহিদামত ঘুষ না দিলে প্রকৃত ভূমি মালিকরা তাদের ক্ষতিপূরনের চেক পেতেন না। এমন কি সরকারি জমির ক্ষতিপূরনের টাকা পর্যন্ত সাধারণ পাবলিক তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করতেন। বর্তমান ডিসি যোগদানের পর তিনি এলএ শাখার সংস্কারে হাত দেন। ঘুষখোর দুর্নীতিবাজদেরকে উক্ত শাখা থেকে বদলী করে দেন। ফলে এখানকার ইমেজ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ডিসি অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন,‘সম্প্রতি শক্তিশালী একটি জালিয়াতিচক্র তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে কৌশলে উক্ত শাখার কয়েক জন কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ার হাত করে ফেলেন। একই সঙ্গে কর্মঠ এবং অভিজ্ঞ কর্মচারি এবং সার্ভেয়ারদের এখান থেকে বদলী করতে সক্ষম হন। এসব তৎপরতার কথা ডিসি স্যার জানেন না। অনেক ক্ষেত্রে তাকে ভুল তথ্য দিয়ে নিরীহ কর্মচারিদের বদলি করাচ্ছে সেই দালাল টাউটচক্র। যার করনে এলএ শাখাটি আবারও ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে’।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পূর্বাচল ৩০০ ফুট, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সহ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ভূয়া জমির মালিকদের কয়েকটি চক্র এলএ শাখার ফান্ড থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা জাল দলিলপত্র, পর্চা, নামজারি জমা দিয়ে টাকা দাবি করতে থাকে। কিন্তু এলএ শাখার কয়েক জন কর্মচারি ও কর্মকর্তা দৃঢতার জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তারা বর্তমানে একজোট হয়ে এসব কর্মচারি ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করছে। এ জন্য তারা বেনামি চিঠিপত্র চালাচালি, অখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রপত্রিকা ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করতে যাচ্ছে।
উল্লেখিত সার্ভেয়ার এবং দালালচক্র পূর্বাচল ৩০০ ফুট রাস্তার অধিগ্রহনকৃত এক একর ৬৫ কাঠা জমির ভূয়া মালিক জীবন বক্সের নামে ক্ষতিপূরনের ১৩৪ কোটি টাকা ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করছে। অথচ এসব জমি জীবন বক্সের ওয়ারিশরা অনেক আগেই একটি আবাসন কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। উক্ত সম্পতি কিনে আবাসন কোম্পানী নামজারি ও খাজনা পরিশোধ সহ নিজেদের দখলীস্বত্ব বজায় রেখেছে। সরকারের এ ১৩৪ কোটি টাকা ভূয়া মালিকের কাছে হস্তান্তর করতে বাধা দেওয়ায় এলএ শাখার সার্ভেয়ার কবির হোসেন তাদের রোষানলে পড়ে অন্যত্র বদলি হয়েছেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় বেনামী উড়ো চিঠি দিয়ে এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে তা বিভিন্ন জায়গায় বিলি করছেন।
এলএ শাখা সূত্র জানায়, উক্ত চক্রের নেতৃত্বদানকারি সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) তিনটি মামলা রয়েছে। ঢাকা কোতয়ালী থানায় দায়ের কৃত মামলা নম্বর হলো-২৭ (৮) ও ২৯ (৮)১৬। মামলা গুলোর চার্জশীট দেওয়া হয়েছে। কেরানীগঞ্জের একটি এলএ কেসে ভূয়া ভূমি মালিককে ৮৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়। দুদক তদন্ত করে দেখতে পায়, যাকে ক্ষতিপূরনের টাকা দেওয়া হয়েছে তার কোন অস্তিত্ব নেই। যে নাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ভূয়া। দুদকের মামলায় আদালত তাকে চার্জশীট দেওয়ার আগ পর্যন্ত জামিন দেয়।
তার নামে চার্জশীট হওয়ার পরও বিনা জামিনে তিনি কিভাবে চাকরি করছেন সেটা বর্তমানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সবার মুখে মুখে ফিরছে। দুদকের চার্জশীটকৃত আসামী হওয়া সত্বেও তিনি কিভাবে ঢাকা জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে সার্ভেয়ার হিসাবে চাকুরি করছেন সেটা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠলেও জেলা প্রশাসন এভাবে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছেন না। ফলে আজাদ বর্তমানে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। অফিসে তার টেবিলের সামনে নানা দালাল, টাউট-বাটপার নিয়ে তিনি আড্ডা দেন। এমন কি এলএ শাখার নিচে ওদেরকে সংঘবন্ধ ভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। এরা এলএ শাখাটি জিম্মি করে সাধারন মানুষকে জিম্মি করে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করছেন বলে একাধিক ভূক্তভোগী জানান।
সার্ভেয়ার আনিসুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ঘুষপ্রীতির নির্দেষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তাকে ভিপি শাখা থেকে বদলি করে এলএ শাখায় আনা হয়েছে। প্রায় দু’বছর আগে তিনি ভিপি শাখার সার্ভেয়ার ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + nine =