এসব গাড়ি নিলামে তুলে বিক্রি করে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি

0
728

প্রায় এক বছর থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে নামিদামি ৭২টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করে। নিয়ম অনুযায়ী এসব গাড়ি নিলামে তুলে বিক্রি করে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অথচ ঢাকা কাস্টমস হাউসসহ বিভিন্ন গুদামে অব্যবহূত অবস্থায় ফেলে রাখায় নামিদামি গাড়িগুলোর গুণগতমান প্রতিদিনই কমছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকার সম্পদশালী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জব্দ গাড়ি প্রাথমিকভাবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত গ্যারেজে রাখা হয়। এরপর গাড়িগুলো পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কাস্টমস হাউসের গুদামে পাঠানো হয়। গাড়িগুলো গুদামে অব্যবহূত পড়ে আছে। গুদামে রাখা গাড়িগুলো কোনো ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এতে গাড়িগুলোর অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ছে। বেশি সময় ফেলা রাখা হলে গাড়িগুলোর মান আরো খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রসঙ্গত, অধিকাংশ কাস্টমস হাউসের গুদামে প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা কম। এতে জব্দ করা একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি গুদামে রাখায় অন্য অনেক মূল্যবান সামগ্রী সংরক্ষণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক কাস্টমস হাউস থেকে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠিয়ে অচিরেই গাড়িগুলো সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউসের গুদাম থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে আবেদন জানিয়েছে। এনবিআর সূত্র জানায়, কারনেট ডি প্যাসেজ সুবিধার আওতায় শুল্ক না দিয়ে ৩১৫টি গাড়ি এনবিআর থেকে দেশে আনার অনুমতি দেওয়া হয়। এসব গাড়ি নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত দিতে নির্দেশ থাকলেও ১৪৮টি গাড়ি ফেরত যায়নি। এসব গাড়িতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। কারনেট ডি প্যাসেজ সুবিধার বাইরে আরো কিছু খাতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আরো প্রায় ৯০টি গাড়ি এ দেশে আনা হলেও ফেরত যায়নি। নামিদামি ব্র্যান্ডের এসব বিলাসবহুল গাড়ি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কিভাবে, কাদের সহযোগিতায় আনা হচ্ছে বা ব্যবহূত হচ্ছে তা জানতে তদন্ত করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে নামিদামি ৭২টি গাড়ি জব্দ করা হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা বিলাসবহুল গাড়ি বিদেশ থেকে আনার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারসাজি করে ভুয়া কাগজপত্রে নিবন্ধন নিয়ে ব্যবহার করছে ও বিক্রি করে দিচ্ছে। ভুয়া নিবন্ধন ছাড়াও ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহারেরও প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরেরকর্মকর্তারা। জব্দ গাড়ির মধ্যে বিএমডাব্লিউ, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার স্টেশন ওয়াগন, প্রাডো টিএক্স, ডিজেলচালিত ভিএক্স, হ্যামার, পোরশে, মার্সিডিস বেঞ্জসহ বিভিন্ন উচ্চ মূল্যের গাড়ি আছে। বিদেশ থেকে আনা এসব গাড়ি দুই থেকে চার হাজার সিসির। বিভিন্ন মডেলের এসব গাড়ির দাম এক কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত। এ ধরনের গাড়ি আমদানির শুল্ক, সম্পূরক শুল্কসহ মোট শুল্ককর পরিশোধ করতে হয় ৮৪০ শতাংশ হারে। নামিদামি গাড়ি আটকের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে মামলা করা হয়েছে। এসব গাড়ি নিলামে তুলতে হলে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মাসের পর মাস গুদামে অব্যবহূত থাকায় অনেক গাড়ির যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ছে। আরো বেশি সময় গাড়িগুলো ফেলে রাখা হলে গুণগতমান আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই এখনই বিক্রিতে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। চলতি (সেপ্টেম্বর) মাস থেকে প্রস্তুতি নিলেও বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ শেষ করতে ছয় মাসের বেশি সময় প্রয়োজন হবে।’শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আইনি ধাপ পার করে জব্দ গাড়ির ব্যাপারে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনি ধাপ পার করতে হয়তো কিছু সময় লাগবে। আশা করছি শেষ পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া শেষ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারব।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − eight =