Site icon Aparadh Bichitra

ইলিশের সাফল্য ধরে রাখতে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সকল মহলের এগিয়ে আসা উচিত

ইলিশ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। গবেষক ও বিজ্ঞানাীরা ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্যও উন্মোচন করেছেন। গত ৯ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। বিলুপ্ত প্রায় ৬৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৮টির প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চলতি অর্থবছরের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ বায়োলজি এ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলমের নেতৃত্বে ইলিশের পূর্র্ণাঙ্গ জীবন রহস্যের গবেষণা করা হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বল্প সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও গবেষক বিজ্ঞানীদের পাটের পর ইলিশের সাফল্য ধরে রাখতে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সকল মহলের এগিয়ে আসা উচিত। অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, ইলিশের জীবন রহস্য জানতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে টানা দুই বছর গবেষণার পর তারা সফলতা পেয়েছেন। প্রথমে বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদী থেকে পূর্ণবয়স্ক ইলিশ সংগ্রহ করেন। এরপর বাকৃবি ফিশ জেনেটিকস আ্যান্ড বায়োটেকনোলজি এবং প্লোল্ট্রি বায়োটেকনোলজি আ্যন্ড জিনোমি ল্যাবরেটরি থেকে সংগৃহীত ইলিশের উচ্চ গুণগত মানের জিনোমিক ডিএনএ প্রস্তুত করা হয়। তিনি জানান, পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিনউইজ জিনোম সিকোয়েন্সি সেন্টার থেকে সংগৃহীত ইলিশের পৃথকভাবে প্রাথমিক জিনোম তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার কম্পিউটারের বিভিন্ন বায়ইনফরম্যাটিকস প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্য থেকে ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডি-নোভো জিনোম সিকোয়েন্স বা জীবন রহস্য আবিষ্কার করা হয়। সামছুল আলম বলেন, ‘জিনোম’ হচ্ছে কোনো জীবন প্রজাতির সব বৈশিষ্ট্যের নিয়ন্ত্রক। অন্য কথায় জিনোম হচ্ছে কোন জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, জীবের অঙ্গসংস্থান, জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াসহ সব জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এর জিনোমে সংরক্ষিত নির্দেশনা দ্বারা। পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে কোন জীবের জিনোমে সব নিউক্লিওটাইড কিভাবে বিন্যস্ত রয়েছে, তা নিরূপণ করা। একটি জীবের জিনোমে সর্বমোট জিনের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের কাজ পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স থেকেই জানা যায়। তিনি আরও জানান, বছরে দু’বার ইলিশ মাছ প্রজনন করে থাকে, জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এ দু’সময়ের ইলিশ জিনগতভাবে পৃথক কি-না তা জানা যাবে। এমনকি কোনো নির্দিষ্ট নদীতে জন্ম নেয়া পোনা সাগরে যাওয়ার পর বড় হয়ে প্রজননের জন্য আবার একই নদীতে ফিরে আসে কি-না সেসব তথ্যও জানা যাবে এ জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে। গবেষকদলের অপর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, ইলিশের সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখার স্বার্থে ডিমওয়ালা মা-ইলিশ রক্ষায় এবং জাটকা নিধনে বছরে নির্দিষ্ট সময় অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর প্রায় ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার নৌ-সীমায় ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করে মৎস্যবিভাগ। প্রশ্ন ওঠেছে এর সময় নির্ধারণ নিয়েও। গবেষকরাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত সমন্বয় করে নিষিদ্ধকালীন সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সময় আগে বা পরের কারণেও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে এ জাতীয় সম্পদের। এ সময়ে দেশের স্বার্থে কঠোর আইন করা উচিত যাতে প্রভাবশালীরা জেলেদের নদীতে নামাতে সাহস না পায়। অভিযোগ রয়েছে, মৎস্য অধিদপ্তর এবং জেলা-উপজেলায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ফটোসেশন করেই দায়িত্ব শেষ করছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনটি লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকরা জানান, মৎস্য অধিদপ্তর সঠিকভাবে মনিটরিং করছেন না। জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাতে পারলেই মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধন বন্ধ হবে। না হয় কাগজে-কলমেই সাফল্য নির্দিষ্ট হয়ে থাকবে, বাস্তবে নয়। মৎস্য গবেষণা সূত্রে জানা যায়, ইলিশ শুধু জাতীয় সম্পদই নয়, অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে এর ওপর। অর্থনীতিতেও রয়েছে বিরাট অবদান। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১৩ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। জিডিপিতে ইলিশের অবদান প্রায় ২ শতাংশ। প্রায় ৫ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং প্রায় ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। পৃথিবীর সব দেশেই ইলিশের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি বছর ইলিশ রপ্তানি থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা ও জাটকা বন্ধ থাকে তাহলে ২১ থেকে ২৪ হাজার কোটি নতুন পরিপক্ক ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বাজার সৃষ্টি হবে বাংলাদেশে।