এরপরও থেমে নেই শফিকের ধর্ষণের নেশা

0
1068

বিয়ে করেছে চারটি। চার বউই রয়েছে ঘরে। একটি ‘গ্যাং রেপ’ মামলার আসামিও। পরকীয়ায় মত্ত কর্মস্থলের আরেক নারীর সঙ্গে। এরপরও থেমে নেই শফিকের ধর্ষণের নেশা। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে ১৬ বছরের এক তরুণীকে ফুসলিয়ে নিয়ে আসে সিলেটের বিশ্বনাথে। ওখানে ধর্ষণ করে রুমি আক্তার নামের ওই তরুণীকে হত্যার পর আবার ফিরে যায় কর্মস্থল মির্জাপুরে।

বিশ্বনাথের পাঠাইকন গ্রামের যে স্থানে রুমির লাশ পাওয়া গেছে সেই স্থানে এক বছর আগেও মিলেছিল আরেক তরুণীর লাশ। পরপর দুই বছরে দুটি লাশ। আবার তাও দুই তরুণীর। ঘটনার ধরন একই। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেন সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান। ঘটনার অন্তরালে রহস্যর গন্ধ খুঁজে পান তিনি। চৌকস পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করেন একটি টিমও। অনুসন্ধানে নামে সিলেটের পুলিশ। ঘটনার ধরন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সবই বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর নেয়া হয় প্রযুক্তির সহায়তা। পাওয়া যায় ক্লু-ও। এই পথ ধরে পুলিশ রহস্যর কিনারা খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করে। বেরিয়ে এসেছে সব ঘটনা। মূলহোতা শফিককেও মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের নাছির গ্লাস ফ্যাক্টরি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেছে শফিক। আর তার বয়ান শুনে চমকে উঠে পুলিশও। ধর্ষণ যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে শফিকের। ঘরে চারটি বউ থাকতেও অবাধ মেলামেশার অন্ত নেই তার। শুধু ধর্ষণেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। আলামত নষ্টে খুনের পথও বেছে নিয়েছে। শফিক মিয়া। বয়স প্রায় ৩২ বছর। বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথের রামচন্দ্র পুর গ্রামে। পিতা ওয়াব উল্লাহ। চার বউ ঘরে থাকার পরও ২০১৭ সালে নিজ এলাকায় ‘গ্যাং রেপ’ ঘটায় শফিক মিয়া। ওই সময় থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা হয়। এ ঘটনার পর পরই এলাকা ছাড়ে শফিক। দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকে। এরপর কাজ নেয় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের নাসির গ্লাস ফ্যাক্টরিতে। সেখানে কাজ নেয়ার পরপরই ওই ফ্যাক্টরিতে কর্মরত এক মহিলার সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সর্ম্পক প্রায় ফ্যাক্টরির সবাই জানেন। পুলিশের অনুসন্ধানে পরকীয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। টাঙ্গাইলের কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শফিকের অসুস্থ শাশুড়ি। নিহত তরুনী রুমি আক্তার ছিল থ্যালেসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। এ কারণে তার রক্ত পরিবর্তন করতে হতো। রুমিও ওই সময় শফিকের শাশুড়ির পাশের বেডে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে যাতায়াতের কারণে রুমির সঙ্গে পরিচয় হয় শফিকের। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে রুমির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে শফিক। এরপর শফিক প্রেমের অভিনয় করে রুমিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে গত ৯ই সেপ্টেম্বর নিয়ে আসে বিশ্বনাথের নিজ এলাকায়। সেখানে প্রথমে তার নিজ বাড়িতে রুমিকে রাখে। এরপর আশুগঞ্জ বাজারের ইমরান আহমদ রিয়াদ নামের আরো একজনের বাড়িতে নিয়ে রাখে। বিশ্বনাথে নিয়ে আসার পরদিনই রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের তোবারক আলীর বাড়ির রাস্তার মুখ থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে। এলাকার কেউ তরুণীকে চিনেন না। এ কারণে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। তরুণীর হাত পেছন থেকে বাঁধা ছিল। গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশের বিশেষ একটি টিম গঠন করা হয়। লাশের সঙ্গে দুটি মোবাইল নম্বর পাওয়া গিয়েছিল। এসব মোবাইল নম্বর অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি সহায়তা নেয়া হয়। এরমধ্যে দেখা যায় শফিক নামের ওই ব্যক্তির ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ৯ই সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে সিলেটের বিশ্বনাথে আসে। পরদিন আবার চলে যায়। ওই মোবাইল ফোনের সঙ্গে আশুগঞ্জ বাজারে থাকা একটি নম্বরের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। ওই মোবাইল ফোন নম্বরটি হচ্ছে আশুগঞ্জ বাজারের ইমরান আহমদ রিয়াদের। পাশাপাশি আরো কয়েকটি মোবাইল ফোন নম্বরের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পায় পুলিশ। পুলিশ আটক করে রিয়াদকে। রিয়াদের কাছ থেকে মিলে শফিকের ঠিকানা। শফিক মির্জাপুরের গ্লাস ফ্যাক্টরিতে রয়েছে বলে জানায়। পুলিশ অনুসন্ধান চালায় মির্জাপুরে। সেখানে গিয়ে তারা সন্ধান পায় নিহত রুমির পরিবারেরও। পরিবারের লোকজনও পুলিশকে জানান- রুমি ৯ই সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের দেয়া তথ্য-বিশ্লেষণ করে পুলিশ লাশটি রুমির বলে সনাক্ত করে। এরপর গত মঙ্গলবার তারা মির্জাপুরের নাসির গ্লাস ফ্যাক্টরি থেকে গ্রেপ্তার করে আলোচিত শফিক মিয়াকে। রাতেই তাকে নিয়ে আসা হয়েছে সিলেটে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শফিক ঘটনা স্বীকার করেছে এবং রুমিকে সে প্রেমের অভিনয় করে সিলেটের বিশ্বনাথে নিয়ে আসে বলে জানায়। সেখানে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে আবার মির্জাপুরে চলে যায়। গতকাল নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান- ঠিক এক বছর আগে ওই জায়গা থেকে আরেক অজ্ঞাত তরুণীর লাশ পাওয়া যায়। এরপর এক বছর পরে আরেক তরুণীর লাশ ওই এলাকা থেকে পাওয়ায় সন্দেহ হয়। এরপর বিশেষ টিম গঠন করে তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে সত্য ঘটনা। প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার হওয়া শফিক ঘটনা স্বীকার করেছে। রুমি হত্যার রহস্য উদঘাটন হলেও এখনো এক বছর আগের আরেক তরুণী হত্যার ঘটনার মোটিভ উদঘাটন হয়নি। এ ব্যাপারে শফিক এখনো মুখ খুলেনি বলে জানান তিনি। এদিকে সিলেটের পুলিশ শুধু শফিককেই নয়, এ পর্যন্ত ঘটনার সম্পর্কের সূত্র ধরে ১৪ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে সোনালী আক্তার হীরা নামের এক মহিলাও রয়েছেন। তাদের পুলিশি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে না তাদের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি জানান- শফিক তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল রুমিকে। ওই সময় তার ভাবী সেটি দেখলেও খুনের ঘটনার পরবর্তী সময়ে তিনি কাউকে কিছু জানাননি। গ্রেপ্তারকৃত শফিকসহ যারা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × four =