মাদক পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার অপকর্ম আড়াল করতে ৫৭ ধারায় মিথ্যা মামলা দায়ের

0
1045

স্টাফ রিপোর্টার:
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রাপুর সার্কেল, ঢাকার হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার নিজেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত মর্মে ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ১৯৯২ খৃষ্টাব্দে ঢাকার মালিবাগস্থ ডাইরেক্টর ফিনান্স এর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে যোগদান করে। এরপর ১৯৯৫ খৃষ্টাব্দে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ষ্টেনোগ্রাফার হিসেবে যোগদান করেন। তারপর ২০০১ খৃষ্টাব্দে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া পর থেকেই হেলাল উদ্দিন ভূইয়া মাদক ব্যবসার সাথে দৃঢ়ভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন, যা আজ অবধি চলছে। বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে পরিদর্শক হেলাল অবৈধ মাদক ব্যবসা করে ১০০ কোটি টাকার বেশী নিজের স্ত্রী, আত্বীয় স্বজন এর নামে বেনামে এসব অবৈধ সম্পদ আড়াল করে মালিক হয়েছেন। যদিও তার বর্তমান মূল বেতন ২৯৫১০ টাকা! পরিদর্শক হেলালের অবৈধ সম্পদের কিছু তথ্য হলো—

(১) লেক ভিউ রেষ্টুরেন্ট এন্ড বার, ৩৯ গরীবে নেওয়াজ রোড, সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা। রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার এই বারটিও হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার। কোনো বারে মদ্যপানের জন্য যেকোন ব্যক্তিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু পরিদর্শক হেলালের এই বারে যে কেউ যখন তখন গিয়ে মদ্যপান করতে পারেন। ফলে আইন-শৃংখলার অবনতি ও সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই বারটি হেলালউদ্দিন ভূঁইয়ার ছোট ভাই আজাদ হোসেন ভূঁইয়ার নামে চুক্তিপত্র করে ব্যবসা করছেন। যদিও আজাদ হোসেন ভূঁইয়া বেসরকারি এফএম রেডিও স্পাইস-এ স্বল্প বেতনভুক্ত কর্মচারী।
(২) নেষ্ট রেষ্টুরেন্ট এন্ড বার, বাড়ী-১২, রোড-১৪/এ, সেক্টর-৪, উত্তরা, ঢাকা। বারটি এই মুহুর্তে মাদক অধিদপ্তরের নির্দেশে সাময়িক বন্ধ আছে। এই বারটি হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার মিথ্যা রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং মিথ্যা বানোয়াট রিপোর্ট দেওয়ার জন্য হেলালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছিলো। উক্ত বিভাগীয় মামলা সংক্রান্তে অপরাধ বিচিত্রার পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চলছে।
(৩) রাজধানীর ভাটারা থানাধীন পূর্ব সাঈদনগরের ২৬৮২ দাগে অবস্থিত ০৫ কাঠার প্লট। এই প্লটটি হেলালের স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে কিনেন। হেলাল তার স্ত্রীর দুইটি নাম ব্যবহার করে (১) মাহমুদা সিকদার (২) মাহমুদা লোল। হেলালের স্ত্রীর অর্থের উৎস এবং ব্যাংক লেন-দেন যাচাই করলে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ পাবে।
(৪) ব্যক্তিগত গাড়ী। টয়োটা প্রিমিও -এফ, নাম্বার ঢাকা মেট্রো -গ-২৭-৭২৫০. এই গাড়ীটি ২০১৬ সালে হেলালের স্ত্রীর নামে কিনেন।
(৫) পার্ক ভিউ রেষ্টুরেন্ট, ফার্মগেট (তেজগাঁও কলেজের পশ্চিম পার্শে) ইন্দিরা রোড, ঢাকা।
এই রেষ্টুরেন্টটি হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার রেষ্টুরেন্ট নামে পরিচিত। এই রেষ্টুরেন্টটি হেলালের বড় ভাই বেলাল হোসেন ভূঁইয়ার নামে পরিচালনা করছেন। বেলাল হোসেন ভূঁইয়া নিজস্ব কোন আয়ের উৎস নেই। হেলাল তার অবৈধ টাকা দিয়ে এই রেষ্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন।
(৬) তিতাস ফিশিং প্রজেক্ট, লুটেরচর, মেঘনা উপজেলা, কুমিল্লা। বিশাল এই মাছের প্রজেক্টটি ঐ এলাকার প্রায় সকল জনগণ হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার মাছের প্রজেক্ট হিসেবে চিনেন। এই প্রজেক্টটি হেলালের ভাগিনা মোঃ জায়েদ পেরিন এর নামে পরিচালনা করছেন বলে জানা যাচ্ছে। যদিও পেরিনের পৈত্রিক সুত্রে এই পরিমান টাকা বিনিয়োগ করা কোন সুযোগ নেই।
(৭) ১৫ বিঘা জমি, লুটেরচর, মেঘনা,কুমিল্লা। হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার শ্বশুর বাড়ীর সাথে একই সাথে সংযুক্ত ১৫ বিঘা জমি হেলাল উদ্দিন ভূইয়া কিছুদিন আগে কিনেছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ০৪ কোটি টাকা। এই জমিগুলো হেলালের স্ত্রীর নামে কেনা বলে জানা যাচ্ছে।
(৮) ইট ভাটা, লুটেরচর, মেঘনা, কুমিল্লা।
এই বিশাল ইট ভাটার মালিকও হেলাল উদ্দিন।
(৯) কাদামাটি প্রপার্টিজ লিমিটেড, ৩৩, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
এটি হেলালের প্লট ও ফ্লাটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা উল্লেখিত ঠিকানার ১২ তলায় অবস্থিত। এটি হেলাল ও তার স্ত্রীর প্লট ও ফ্ল্যাটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যার কাগজপত্র পর্যালোচনা করলে হেলালের দুর্নীতি লব্দ টাকার বিষয়ে জানা যাবে। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বন্ধ আছে।
(১০) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকার বি-ব্লকে হেলালের স্ত্রী মাহমুদা হেলালের নামে ২০১২ সালে ৫ কাঠার প্লট কেনেন।
(১১) ঢাকা ইস্টার্ন হাউজিং-এ (আফতাব নগর) ২০০৭ সালে হেলালের স্ত্রীর নামে ৫ কাঠার প্লট কেনেন।
(১২) বাড়ী-২/৪, সড়ক-১/এ, ব্লক-বি, নবদয় হাউজিং, মোহাম্মদপুর, ঢাকাতে হেলালের স্ত্রীর নামে ৪০০০ বর্গফুটের দুইটি ফ্ল্যাট ২০১৬ সালে কেনা। যেখানে তিনি বর্তমানে স্বপরিবারে বসবাস করছেন।
(১৩) মিরপুর ডিওএইচএস সপিং কমপ্লেক্সে হেলালের স্ত্রীর নামে ৭টি দোকান ২০১৭ সালে কেনা।
(১৪) স্বপ্ন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ক্যামেলিয়া হাউজ, কাঠেরপুল, উত্তর রেইস কোর্স, কুমিল্লা হেলালের ভাগিনা মোহাম্মদ জায়েদ পেরিন এর নামে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। যার টাকা সম্পূর্নই হেলালের বলে জানা যাচ্ছে।
(১৫) জামিল ফ্যাশন, হিসাব নম্বর-০০৪৩০২১০০১৩০৩৬, এনসিসি ব্যাংক, এলিফ্যান্ট রোড শাখা, ঢাকা। এটি হেলালের স্ত্রী বা তার কোন নিকট আত্মীয়ের ব্যাংক হিসাব। যেখানে প্রতি মাসে হেলাল প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা লেন-দেন করেন।
(১৬) সৌরভ ক্রাফ্ট লিমিটেড, হিসাব নম্বর-০২৭১০২০০০০৭৬২, ওয়ান ব্যাংক। এটি তার স্ত্রী বা কোন নিকট আত্মীয়ের। যেখানে প্রতি মাসে ৫০ লক্ষ টাকা লেন-দেন করেন।
(১৭) ব্যাংক এশিয়া, মহাখালী শাখা, ঢাকাতে হেলালের ফুফাত ভাই মুশফিকুর রহমান ফয়েজ এর স্মার্ট এড এর নামে ব্যাংক হিসাব আছে। যেখানে হেলাল প্রতি মাসে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা লেন দেন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা অপরাধ বিচিত্রাকে জানান, পরিদর্শক হেলাল দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তার এই সমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির জন্য বহুবার বিভাগীয় মামলা রুজু হয়, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঐ মামলাগুলো আলোর মুখ দেখেনা। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে নিরীহ লোকজনদের মামলার আসামী করে আদালতে উপস্থাপনের জন্য বিজ্ঞ বিচারকগণও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা গ্রহণ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। যার একটি আদেশ হলো, ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ-৫ এর স্মারক নং-৫/ঢাকা/১৭/৪২(২) তারিখ ১০/১/২০১৭ খৃষ্টাব্দ। এছাড়া পরিদর্শক হেলাল প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গ্রেফতারের পর মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেন এবং নিরীহ লোকদের ধরে এনে মাদক মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। তিনি আসামীর কাছ থেকে প্রাপ্ত মাদক ইয়াবা/হেরোইন/মদ ইত্যাদি প্রকৃত পরিমাণ থেকে অনেক কম জব্দ দেখিয়ে পরে তা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে থাকেন বলে তারা জানান।
কে এই হেলাল উদ্দিন ভূইয়া?
অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি গ্রামের সন্তান হেলাল উদ্দিন ভূইয়া। তার পিতা মৃত-আলী আহাম্মদ ভূইয়া, মাতা মৃত- শামসুন্নাহার। দরিদ্র পরিবারের এই সন্তান অকালে তার পিতার মৃত্যু হওয়ায় ততকালীন নবীনগর স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত বড় বোন ইফাত আরা হাসির ভাড়া বাসা নবীনগর পশ্চিমপাড়া থেকে নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এস.এস.সি পাস করেন। তারপর ঢাকায় গিয়ে ডাইরেক্টর ফিনান্স এর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে ষ্টেনোগ্রাফার হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যোগদান করেন। পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থেকে নিজেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়ায় অপরাধ বিশ্লেষকগণ মনে করেন, একজন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নিজেই যখন এহেন অপরাধ প্রকৃয়ায় জড়িয়ে পড়েন সেক্ষেত্রে কোনোদিনও এদেশ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবেনা। বরং মাদকের ব্যপকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। তাই অনতি বিলম্বে মাদক নির্মূলের তকমা লাগানো এসব কর্মকর্তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরী। পরিদর্শক হেলালের মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্যের জন্য মুকুল জ্যোতি চাকমা, উপ পরিচালক মেট্রো, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই মূহুর্তে মিটিং নিয়ে খুবই ব্যস্ত আছেন তাই এখন কথা বলা সম্ভব নয়।
অপরাধ বিচিত্রার পক্ষ থেকে পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া তার অবৈধ সম্পদের তথ্য সমূহ সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসায় মিথ্যা ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়া সাইবার ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ, ঢাকায় মিথ্যা পিটিশন মামলা দায়ের করে। মামলা নং-১৩৯/২০১৮। ধারা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ২০০৬ এর সংশোধিত ২০১৩ এর ৫৭ (১) ও ৫৭ (২)। যেখানে পত্রিকার সম্পাদক এস এম মোরশেদ সহ অজ্ঞাতনামা আরোও ২/৩ জনকে বিবাদী করেন।
হেলাল অভিযোগ করেন ২৫/০৬/২০১৮ইং এসএম মোরশেদ তার অফিসে গিয়া ৫০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি করেন। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তিনি তার পত্রিকায় মিথ্যা বানয়াট রিপোর্ট প্রকাশ করেন। হেলালের অফিসে কোন ব্যক্তি গেলে মুল ফটকে দায়িত্বরত ব্যক্তির নিকট একটি রেজিষ্টার বইয়ে যে ব্যক্তি অফিসে যাবেন তার নাম ঠিকানা মোবাইল নম্বর ও স্বাক্ষর করে অফিসে যেতে হয়। এছাড়া উক্ত অফিসে সিসি ক্যামেরাও আছে। এই বিষয়গুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করিলে সুস্পষ্ট প্রমানিত হবে হেলাল অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা বানয়াট মামলা দায়ের করেছেন।
সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা সম্পাদক মহোদয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার সকল শ্রেনীর সংবাদ মাধ্যমে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংবাদ সংশ্লিষ্টরা মাদক পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়ার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করছেন। এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত পরবর্তি যে কোন সংখ্যায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 5 =