সরকারের লাখ লাখ কোটি টাকার দূর্নীতি ধামাচাপা দিতেই এই কালো আইন –রিজভী

0
492

বাংলাদেশের মানুষের মুখ বন্ধ করতে ও গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলতে বির্তকিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকারের লাখ লাখ কোটি টাকার দূর্নীতি ধামাচাপা দিতেই এই কালো আইন করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে অথবা যেকোন মাধ্যমইে যাতে দূর্নীতির কোন খবর প্রকাশিত না হয়, অথবা প্রকাশ করতে না পারেন সেজন্যই এই ন্যাক্কারজনক কালো আইন তৈরী করা হলো। এই কালো আইনে মানুষের সকল বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। দুর্নীতি ও মানবধিকার লঙ্ঘনের মত অপরাধের বিস্তার লাভ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এটি সংবিধান বিরোধী একটি আইন। এই আইন বাকশালেরই প্রেতাত্মা। এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে দেশবাসীসহ সকল গণমাধ্যমের কর্মী, মুক্ত চিন্তার মানুষদের রুখে দাঁড়ানোর আহবান বিএনপি’র এই নেতা। বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবিধানের মূল চেতনা বিশেষ করে মুক্ত চিন্তা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে দেশের মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ল। কারণ আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এখন বিনা ওয়ারেন্টে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অফিস ঢুকে তল্লাশীর নামে তান্ডব চালাতে পারবে, কম্পিউটারসহ সকল কিছু সীজ করতে পারবে, যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। সাধারণ মানুষও এই কালো আইনের থাবা থেকে রেহাই পাবে না। এ আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা সংবিধান পরিপন্থি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ঘিরে সরকার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে। তাকে অন্যায়ভাবে বন্দির উদ্দেশ্য হলো রাজনীতির ময়দান শূণ্য করা। সরকার প্রধান বিরোধী মত ও প্রতিপক্ষকে রাখবেন না এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাবন্দি করা হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার কিছুই প্রমাণ করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাকে দখল করে একাজ করেছেন। এজন্য যে কোন মূল্যে তার ক্ষমতা দরকার, কিন্তু নির্বাচন দরকার নে, ভোট দরকার নেই। প্রতিপক্ষকে দমন, পর্যদস্ত করে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এস কে সিনহা তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন কিভাবে তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, কিভাবে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করে বিচার বিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তিনি তাঁর আত্মজীবনী বইয়ে পরিস্কার উল্লেখ করেছেন-তিনি সরকারের চাপে ও হুমকির মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। বিচারপতি সিনহা তাঁর ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ বইয়ে পরিষ্কার বলেছেন-বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভীতি প্রর্দশনের মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন এবং তাঁর পরিবারকে জিম্মি করে বিদেশে থাকাকালীন অবস্থায় তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। বিবিসির রিপোর্টসহ দেশের কিছু গণমাধ্যমে আজকে তা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, এসকে সিনহার বক্তব্যে আরও পরিষ্কার হলো বন্দুকের নলের মুখে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েই সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় রায় দিয়ে কারাবন্দি করে এক নম্বর মিশন কার্যকর করার পর এখন দুই নম্বর মিশন কার্যকর করতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগষ্টের মামলায় আগামী ১০ অক্টোবর রায় দেয়া হবে। দীর্ঘ ১৪ বছর ঝুলন্ত রাখার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা সুপরিকল্পিত নীলনকশারই অংশ। রায় প্রকাশের আগেই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা নানা ধরণের বক্তব্য রাখছেন। বলছেন-এই রায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি বিপাকে পড়বে। তার মানে সরকার জানে কি রায় হতে যাচ্ছে অথবা সরকারই ২১ আগস্ট মামলার রায় লিখে দিচ্ছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা হবে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দপ্তর সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিলন স্বাক্ষরিত একটি আবেদনে ২১ আগস্ট ২০০৪ মুক্তাঙ্গনে সভা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। মুক্তাঙ্গনে সভার জন্য পুলিশ লিখিত অনুমতি দেয়। বেলা ১টায় সভাস্থল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে স্থানান্তরিত করা হয়। এতে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা হতবাক হয়। আকস্মিক সভাস্থল পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ২০০ফিট, ৫০ ফিট এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুলিশ ডেপ্লয়মেন্ট হওয়ার আগেই। তিনি বলেন, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা হওয়ার পর তদন্তভার অর্পণ করা হয় সিআইডি’র ওপর। কিন্তু সিআইডি’র সেই তদন্ত মনিটরিং সেলের কাছে সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জাশিট দাখিলের অনুমতি না দিয়ে আরও সুনির্দিষ্ট ও ভিত্তিমূলক সাক্ষ্য প্রমান সংগ্রহপূর্বক তদন্ত নিষ্পত্তি করার জন্য মনিটরিং সেল সিআইডি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়। সেই তদন্ত অব্যাহত থাকাকালীন বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর আন্দোলনের ফসল মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত জরুরী সরকার বিএনপি-কে দমন-পীড়ণে উঠেপড়ে লাগে। তারা সিআইডি’র পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে এএসপি ফজলুল কবিরকে দায়িত্ব দেয়। তদন্তে ২২ জন আসামীকে অভিযুক্ত করে দেড় বছর শত চেষ্টা করেও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ আরও অনেককে আসামী হিসেবে মামলায় জড়িত করতে পারেনি। আদালত চার্জশিট একসেপ্ট করে বিচার কার্যক্রম শুরু করে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষীরা কেউই জনাব তারেক রহমানসহ অন্য কারো নাম বলেনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মামলাটি পূণ:তদন্তের নামে বিচারিক আদালত হতে আগষ্ট ২০০৯ এ ফিরিয়ে এনে তা পূণ:তদন্তের ভার দেয়া হয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এসপি কাহার আকন্দকে, যিনি বেশ কয়েক বছর আগেই স্বাভাবিক নিয়মে অবসর গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন, এমনকি তার নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জ-কটিয়াদি থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থনা করেন। তিনি উপরের নির্দেশে মামলায় তারেক রহমানকে অন্তর্ভূক্ত করেন। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, আবুল খায়ের ভূইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten + sixteen =