প্রধানমন্ত্রী জোরালো ভূমিকা রাখবেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে

0
521

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পথে লন্ডনে যাত্রাবিরতিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিপুলভাবে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী সেন্ট্রাল লন্ডনের হোটেল ক্লারিজে পৌঁছলে কয়েক শ নেতাকর্মী হর্ষধ্বনি ও স্লোগান দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানায়।

দুদিন লন্ডনে যাত্রাবিরতির পর আজ রবিবার রাতের দিকে তাঁর নিউ ইয়র্ক পৌঁছানোর কথা। বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে এসে নামেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ব্রিটেনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন। হিথ্রোর ভিআইপি লাউঞ্জে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি চলে যান হোটেল ক্লারিজে। বিমানবন্দরের বাইরে বিএনপির কয়েক শ নেতাকর্মী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে এ সময় সেখানে দেখা যায়নি। তারা অবস্থান করছিল হোটেলের সামনে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানায় প্রধানমন্ত্রীকে। বেলজিয়াম, ইতালিসহ ইউরোপের আরো অনেক দেশ থেকেও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপির কর্মীরা হিথ্রোর সামনে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলেও ক্লারিজের সামনে তারা ছিল না। যদিও এর আগে প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন অবস্থানকালে প্রতিবারই তাঁর হোটেলের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এবার বিএনপি হোটেলের সামনে প্রতিবাদ না করায় তারা পুলিশের অনুমতি পায়নি বলে ধারণা করেছে অনেকে। তাদের জন্য নির্ধারিত জায়গা ফাঁকা ছিল। ক্লারিজের সামনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগের নেত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেন। অন্যদিকে হিথ্রো বিমানবন্দরের বাইরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী বিক্ষোভ দেখায়। তারা শেখ হাসিনার সমালোচনা লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করছিল। লন্ডনে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বোন শেখ রেহানার পরিবারের সঙ্গে একান্তে সময় কাটান বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। আজ রবিবার সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কের পথে তাঁর লন্ডন ত্যাগ করার কথা। ফ্লাইটটি রবিবারই স্থানীয় সময় ১টা ৪০ মিনিটে নিউ জার্সির নিওয়ার্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিয়ে এবারও রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংকট সমাধানে গত অধিবেশনে তাঁর দেওয়া পাঁচ দফা সুপারিশের আলোকে এবারের ৭৩তম অধিবেশনে তিনি এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের এই সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। বরাবরের মতো এবারও বাংলায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, জঙ্গিবাদ দমনসহ নানা বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। মাসুদ বিন মোমেন জানান, লন্ডন হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছবেন। তবে এবার জেএফকে এয়ারপোর্টের পরিবর্তে নিউ জার্সির নিওয়ার্ক এয়ারপোর্টে নামবেন তিনি। এদিকে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, নেতাকর্মীদের নিয়ে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে তাঁরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। ম্যানহাটনের হিলটন হোটেলে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ মিশনে সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন নিউ ইয়র্ক সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে একই দিন সকালে যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে বিশ্ব মাদক সমস্যাবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। ২৯টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও এর সহ-আয়োজক। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও যোগ দেবেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎ হবে কি না—প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত মোমেন জানান, এ নিয়ে আলাদা কোনো কর্মসূচি নেই। তবে সেই অনুষ্ঠানেই তাঁদের মধ্যে দেখা হতে পারে। একই দিন শরণার্থী ও শিক্ষাবিষয়ক দুটি উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দুপুরে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। মাসুদ বিন মোমেন আরো জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের সভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আরেকটি সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার আগে লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন’বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে সফরের বিস্তারিত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। রাষ্ট্রদূত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এই সফরে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় কিছু বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে তাঁর একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও সেই বৈঠকের সময়সীমা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আবারও তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা। আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত। সফর শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 + four =