শিল্পসংশ্লিষ্টরা দাবি করে, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে কৃষকরা উপকৃত হবে

0
534

গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সরকারি সার কারখানাগুলো বছরের সাত-আট মাস বন্ধ রাখা হয়। ফলে দেশে পর্যাপ্ত সার উৎপাদন না হওয়ায় কৃষকের চাহিদা পূরণে আমদানি করতে হয়। এতে বছরে সরকারের গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়। এ ব্যয় কমিয়ে আনতে এবার সার কারাখানাগুলো বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

শিল্পসংশ্লিষ্টরা দাবি করে, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে কৃষকরা উপকৃত হবে। সার কারখানাগুলো লোকসান কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (বিসিআইসি) আটটি সার কারখানা আছে। এর মধ্যে ছয়টি কারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন করা হয়। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি, এওপি, জিপসামসহ ৪০ লাখ টনের বেশি সারের চাহিদা রয়েছে। দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরে ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৫.৫০ লাখ টন হিসাব ধরা হয়েছে। বিসিআইসির ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী ছয় কারখানা পূর্ণ ক্ষমতায় সারা বছর উৎপাদনে থাকলে গড়ে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সরবরাহে সক্ষম। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী ছয় কারখানা বছরে দুই থেকে তিন মাস উৎপাদনে থেকে সাত লাখ ৬৪ হাজার টন সরবরাহ করেছে। গত অর্থবছরে সার আমদানিতে সরকারের ব্যয় হয় সাত হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর আগের বছরের চেয়ে এ হিসাব ২৩ শতাংশ বেশি। বিসিআইসি সূত্র জানায়, আমদানীকৃত সারের সমপরিমাণ উৎপাদনে সরকারের ব্যয় হতো আমদানীকৃত অর্থের অর্ধেকেরও কম। সূত্র জানায়, যমুনা ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেডের উৎপাদন এক দিন বন্ধ থাকলে এক হাজার ৭০০ টন সার কম উৎপাদিত হয়। এ পরিমাণ সার উৎপাদনে জ্বালানি, কাঁচামাল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ সব ধরনের খরচ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট ব্যয় হয় দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে এক হাজার ৭০০ টন সার আমদানিতে মোট ব্যয় প্রায় পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। শুধু যমুনা সার কারখানাই নয়, বিসিআইসির সব সার কারখানার আমদানি-উৎপাদনের এমন হিসাব আছে। চলতি বছরের শুরুতে সরকারি কারখানার লোকসান কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এ চিঠি পাওয়ার পর অর্থ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সার কারখানাগুলো চালু রাখতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠান। শিল্পমন্ত্রী চিঠিতে দেশের চাহিদা বিবেচনায় গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী কারখানাগুলো অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন। এ চিঠির জবাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সার কারখানাগুলোর গ্যাস সংযোগের আশ্বাস দিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানানো হয়।  শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে গড়ে এক দিনে ৩৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয়। গ্যাস সংকট কাটাতে পেট্রোবাংলা গত আগস্ট থেকে প্রতিদিন ৩০ কোটি ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ করছে। এতে প্রতিদিন গ্যাস সরবরাহ বেড়ে ৩০৪ কোটি ঘনফুট হয়েছে। গত বছর থেকে পর্যায়ক্রমে সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা হয়। সরবরাহ বাড়ায় এই সার কারখানাগুলোতে গত আগস্ট থেকে একে একে পুনরায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গত ১২ আগস্ট থেকে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কম্পানি লিমিটেড এবং শাহজালাল ফার্টিলাইজার লিমিটেডে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডে, গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে যমুনা ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেডে, এর পরের দিন ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডে ও ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেডে (ঘোড়াশাল) গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। গ্যাস সরবরাহ শুরু করায় এসব কারখানা সার উৎপাদন শুরু করেছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু  বলেন, ‘এবার প্রতিটি সার কারখানা উৎপাদনে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারখানাগুলো চালু থাকলে কম পরিমাণে সার আমদানির প্রয়োজন হবে। এতে ভবিষ্যতে সার আমদানিতে সরকারের ব্যয় কমবে।’  শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুল হামিদ  বলেন, ‘সরকারি কারখানা মুনাফায় আনতে লোকসানের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে তার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সার কারখানায় গ্যাস সংযোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে কারখানাগুলো লোকসান কাটিয়ে উঠবে, কৃষকের চাহিদা পূরণে সার আমদানির পরিমাণ কমবে। আশা করছি এবারে সারা বছর সার কারখানা চালু থাকবে।’সার কারখানা চালু রাখার সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম  বলেন, দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সরকারি হিসাব ঠিক থাকলে কারখানাগুলো সারা বছর উৎপাদনে রাখা হলে ইউরিয়া সার আমদানির প্রয়োজন হবে না। এ দেশ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সার রপ্তানি হয়েছে। এরপর থেকে কারখানা বন্ধ রাখায় ধীরে ধীরে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − 14 =