পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে ঢুকছে চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের ৯০০ কোটি টাকা

0
952

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে ঢুকছে চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের ৯০০ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি তারল্য সংকট দূর করতে এই উদ্যোগ টনিক হিসাবে কাজে দেবে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে গত ৩রা সেপ্টেম্বর শেয়ার হস্তান্তর বাবদ ৯৬২ কোটি টাকা হাতে পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর মধ্যে স্ট্যাম্প খরচ বাদে প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকাই পাবে ডিএসইর সদস্যরা। পুরো অর্থই সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। অধিকাংশ সদস্য এ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের চিন্তা করছেন। এজন্য সরকারের কাছে তারা এ অর্থের ওপর সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি সুবিধা চেয়েছেন। সদস্যদের দাবির মুখে গত ১২ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কর ছাড় দেয়ার ঘোষণা দেন। প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন তিনি। অবশ্য এজন্য শর্ত দেয়া হয়েছে যে, পুরো টাকাই তিন বছরের জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। এরই আলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি এসআরও জারি করবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র বলছে, চীনের দুই প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের শর্তেই উৎসে কর ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার বিষয়ে গত সপ্তাহে সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, চীনা কনসোর্টিয়াম থেকে প্রাপ্ত ৯৪৭ কোটি টাকার ওপর ৫ শতাংশ হারে ৪৭ কোটি টাকার ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। বাকি ৯০০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন ২৩৭ ব্রোকার। এই হিসাবে প্রত্যেক ব্রোকারের নামে জমা হয়েছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা করে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা এলে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ বাড়াবে। এতে বাজারের গতি বাড়বে। তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা, চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হলে বাজারে তেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কিছু দেখছেন না। পুঁজিবাজারের তুলনায় এই অর্থ খুবই সামান্য। তবে বিনিয়োগকারীদের লাভবান করতে পারলেই বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তাদের ধারণা। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ৯০০ কোটি টাকা বাজারের জন্য তেমন বড় কোনো টাকা না। ডিএসইর একদিনের লেনদেনের সমান এই টাকা। ডিএসই সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ আমরা দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবো। এজন্য এনবিআর থেকে একটি এসআরও জারির অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, উৎসে কর ৫ শতাংশ করা হলে বাজারে বিনিয়োগ বেড়ে যাবে এবং বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও বাড়বে। ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী মাসে ডিএসই’র সব সদস্য ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে জমা হবে। এর জন্য নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা হবে যার মাধ্যমে সকল সদস্য এই টাকা পাবে। তবে শর্ত থাকবে এই টাকা আগামী তিন বছর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে এবং ডিএসই তার তদারকি করবে। সিএসই সদস্য ব্রোকারেজ হাউজের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, যেহেতু আমরা সরকারকে উৎসে কর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ দিতে চাই, সেহেতু তিন বছরের জন্য চীনা দুই প্রতিষ্ঠানের টাকা দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আমরা বাধ্য। সূত্র জানিয়েছে, অর্থ আয়ের উৎস পুঁজিবাজার হওয়ায় পুরো অর্থই এ খাতে বিনিয়োগের পক্ষে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। যদিও এই অর্থ যেকোনো খাতে বিনিয়োগ করতে সদস্যরা স্বাধীন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে ডিএসই সদস্যদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করারও চিন্তা করছে বিএসইসি। সূত্র জানিয়েছে, এসআরও জারি না হওয়া পর্যন্ত সদস্যদের অনুকূলে এই অর্থ ছাড় করবে না ডিএসই। ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, আমরা চাইবো এই অর্থ পুঁজিবাজারেই বিনিয়োগ হোক। কেউ বিনিয়োগ করতে না চাইলে কর অব্যাহতি সুবিধা পাবেন না। তিনি পুরো কর দিয়ে তার বিনিয়োগ অন্য কোথাও করতে পারেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে শেয়ারবাজারে তারল্যের প্রবাহ বাড়বে। এতে বড় বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ বাড়াবেন। ফলে এই বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আবারো বাড়তে পারে। এমনকি বিদেশিদের আস্থাও বাড়বে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত বাস্তবায়নে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করা হয়। ইতিমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার হস্তান্তর করেছে ডিএসই। শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জি ওয়েনহাইকে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − eleven =