রাস্তা নির্মাণের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট

0
945

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন মানসম্মত রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে না। রাস্তাগুলো নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এমনও নজির আছে কোটি টাকা ব্যয়ের রাস্তা ১৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তা নির্মাণের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হলেও ঠিকাদার বা সওজ কর্মকর্তাদের কোনো শাস্তিই হচ্ছে না।

ফলে দিনকে দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। অভিযোগ উঠেছে, সওজে কেউ ঠিকাদারী করে আবার কেউ চাকরি করে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। হঠাৎ তাদের সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে অল্পদিনের মধ্যে রাস্তা ভেঙে একাকার হয়ে যাওয়ায় পথচারী ও ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছে। সরেজমিন দেখা গেছে ঝিনাইদহ থেকে মুজিবনগর সড়ক প্রকল্পের রাস্তায় এখন খানা-খন্দকে ভরা। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা করতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও দুইটি বর্ষা পার হয়নি। রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস পর্যন্ত রাস্তায় অসংখ্য খানা-খন্দক। সদরের ডাকবাংলা নারায়ণপুর ত্রিমোহনী থেকে আবদুর রউফ ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত রাস্তায় চলা যায় না। ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া থেকে হরিণাকুণ্ডু হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি কাজ শেষ না করেই গত ৩০শে জুন ৪৭ কোটি টাকার বিল তুলে নেয় ঠিকাদার। এখন ওই রাস্তার বিভিন্ন অংশে সাইট ভেঙে যাচ্ছে। হরণিাকুণ্ডু উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে নিম্নমানের রাস্তা করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পত্র-পত্রিকায় রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ঝিনাইদহ সওজ’র এসও জাহাঙ্গীর হোসেন তড়িঘড়ি করে অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ঝিনাইদহ থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ থেকে যশোর সড়কের অবস্থাও শোচনীয়। রাস্তা নির্মাণে খণ্ড খণ্ড প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও বছর না ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে রাস্তার চেহারা। কোটি টাকার রাস্তা এক মাসের মধ্যে নষ্ট হওয়ায় শহরের পাগলাকানাই এলাকাবাসী হাসান ক্লিনিকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। সওজ সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ঝিনাইদহ শহরের হামদহ থেকে ডাইভারশন সড়ক হয়ে আরাপপুর রাস্তাটি সংস্কারের জন্য এক কোটি টাকা বারাদ্দ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার যেনতেনভাবে কাজ করে বিল উঠিয়ে নেয়। এক মাসের মধ্যে রাস্তা আগের চেহারায় ফিরে আসে। এলাকাবাসী অবরুদ্ধ করেন ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের এসও নাজমুস সাকিবকে। কিছুদিন পর তিনি চাকরি ছেড়ে চলে যান। অভিযোগ উঠেছে, গত ৩০শে জুনের আগে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন ও এসডি তানভীর হোসেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে অসংখ্য ডিপিএম, এলটিএম ও আরএফকিউ টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এসডি তানভীর ঝিনাইদহ থেকে হাটগোপালপুর সড়কে ৫০ লাখ টাকার ঠিকাদারী কাজে নিজেই ইট, পাথর, বালি, খোয়া ও খড়ি সরবরাহ করেন। তিনি বাগেরহাটের মোজাহার লিমিটেডের লাইসেন্সটি ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। তাছাড়া ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে থাকা রাস্তা এক বছরের মধ্যে নষ্ট হলে ঠিকাদারকেই মেরামত করে দেয়ার কথা। কিন্তু সওজ বিভাগের মামলামাল দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন এসডি তানভীর। অভিযোগ উঠেছে এসডি তানভীর আসার পর থেকেই ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগে পুকুর চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে এসডি তানভীর তার বিরুদ্ধে ওঠা এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। তাই অনেক কিছুই আমার জানা নেই। তিনি বলেন, অল্পদিনে রাস্তা নষ্ট হওয়ার মূলে রয়েছে ওভার লোডিং ও নিম্নমানের বিটুমিন। বাজারে প্রচলিত ভেজাল বিটুমিন ব্যবহারের কারণে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন মুজিবনগর প্রকল্পে আরো ১৭ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। এই টাকা দিয়ে অবশিষ্ট কাজ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 − 4 =