বাগেরহাটে পান চাষ করে অনেকের ভাগ্য বদল হয়েছে। অনেক চাষিই ইতমধ্যে চাষ ব্যবস্থা পাল্টে পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন পান চাষের সঠিক প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
বাগেরহাটের পান মধ্যপ্রাচ্যরসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচেছ। সেই সাথে মজবুত হবে অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। পান চাষে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও লাভবান হওয়ায় দিন-দিন এর কদর বাড়ছে। শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এ পেশায় ঝুকে পড়েছে। এছাড়া বাগেরহাটের ঝাল পানের কদর সারা দেশে। তাই ঝাল পান চাষ এ জেলা বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এছাড়া বাগেরহাটের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতের পান মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচেছ। এ জেলার উৎপাদিত পানের ৭০ শতাংশই রপ্তানি হয়ে থাকে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে। চলতি বছর বাগেরহাটে ৯ উপজেলায় প্রায় চার হাজার বিঘা জমিতে ঝাল ও মিষ্টি জাতের পানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চিতলমারী উপজেলায় প্রায় ৮০ শতাংশ । উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, আজ থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে লবন পানির প্রকোপে এ অঞ্চলের বিল গুলোতে কোন ফসল ফলত না। তখন থেকে কৃষকেরা চাষ ব্যবস্থা পাল্টে চিংড়ি ঘেরে মাছ চাষ শুরু করে। প্রথম দিকে সাফল্য পেলেও গত কয়েক বছর ধরে চিংড়ি চাষে ধসের কারণে চাষিরা অর্থনৈতিক ভাবে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। সেই থেকে অনেক চাষি বিকল্প ফসল চাষের পরিকল্পনা করেন। শুরু হয় পরীক্ষামূলক পান চাষ। বর্তমানে এ চাষে অনেক চাষিই সাফল্য অর্জন করেছে। তাই পান চাষে ভাগ্য বদলে খুশি চাষিরা। সরেজমিনে জানা গেছে, চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খড়মখালী গ্রামের পঞ্চানন মজুমদার এক একর জমিতে পান চাষ করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এতে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। অনুরুপ অশোকনগর গ্রামের অমর মন্ডল ৭ কাঠা জমিতে পান চাষে প্রথম বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার বিক্রি করেছেন। এ থেকে তারা পরপর কয়েক বছর পান তুলতে পারবেন। পান চাষি মিঠুন ঘরামী, নিত্যানন্দ ঘটক, অবনী মন্ডল, খগেন্দ্র ঘরামী, সদানন্দ ঘরামী, বলাই ঘরামী, উপেন্দ্র বালা, গৌর বাড়ৈ, অখিল নাগ, নিখিল নাগ, বলরাম বাড়ৈ, শচীন বিশ্বাস, বড়রবাড়িয়ার শংকর বিশ্বাস, কুড়ালতলার মোসলেম আলী ও খড়মখালীর সুবাস মজুমদার জানান, পান চাষ তাদের অর্থনৈতিক সাফল্য দেখিয়েছে। বদলে গেছে তাদের ভাগ্য। তাই তারা পান চাষ করে মহাখুশি। তারা আরও জানান, ১ একর জমিতে প্রথম বারে পান চাষে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ যায়। কিন্তু পান তোলা যায় ৭ বছর ধরে। কৃষকদের জন্য এটি একটি লাভজনক চাষ। চিতলমারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শিবপুর, বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা ও চরবানিয়ারী ইউনিয়নের অনেক কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে পান চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছে। এ অঞ্চলের মাটি পান চাষের জন্য উপযোগি। এখানে প্রায় ৫০ একর জমিতে সাথি জাতের পান চাষ হচ্ছে এবং দিন দিন পান বরজের সংখ্যা বাড়ছে। তবে, কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন পান চাষের সঠিক প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলের কৃষক পরিবার গুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।