ময়লা-আর্বজনা আর কচুরিপানায় ভরে যাচ্ছে শতাধিক বছরের পুরনো দিঘি

0
709

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াববাড়ির (জমিদারবাড়ি) শতাধিক বছরের পুরনো বিশাল দিঘিটি ময়লা-আর্বজনা আর কচুরিপানায় ভরে যাচ্ছে। দিঘির তিন পারে নির্মিত বসতবাড়ির আবর্জনা ফেলা ও ময়লা নিষ্কাশনের পাইপলাইনের কারণে দূষিত হচ্ছে পানি।

বাড়ছে মশার উপদ্রব। ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। হারিয়ে যাচ্ছে দিঘির বৈচিত্র্য-সৌন্দর্য। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ধনবাড়ী নওয়াববাড়ি দিঘিটি উত্তর টাঙ্গাইলের সবচেয়ে বড় দিঘি। একসময় এই দিঘিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ ও বড়শি (মাছ ধরা) প্রতিযোগিতা হতো। চালাষ, ধনবাড়ী, মিয়াপাড়াসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন সাঁতার কাটত, গোসল করত। এখনো সাঁতার-গোসলে কিছুটা ব্যবহৃত হয় দিঘিটি। এটি ও আশপাশের স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আসে। দিঘিতে বিভিন্ন চলচ্চিত্রের শুটিংও হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধনবাড়ী পৌর শহরে প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর নওয়াববাড়ি দিঘিটি। এর পশ্চিম পারে সুন্দর মনোরম শান বাঁধানো দুটি ঘাট। একটি ঘাট নওয়াববাড়ির আঙিনা থেকে দিঘিতে নেমে গেছে। ঘাটে কয়েকটি নৌকা। আরেকটি ঘাট দিঘি থেকে উঠে মিশেছে নওয়াব শাহি জামে মসজিদের আঙিনায়। এখানে মুসল্লিরা অজু-গোসল করে। দিঘির পারে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রথম প্রস্তাবক ও ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর বাড়ি (নওয়াব মঞ্জিল-জমিদারবাড়ি, নওয়াব প্যালেস)। পাশেই  আফতাবুন্নেছা হাফিজিয়া মাদরাসা, ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউশন, সাকিনা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নওয়াব মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দিঘির পারের অনেক বসতবাড়ি থেকে দিঘির ওপর পাইপ লাগানো হয়েছে। এ পাইপ হয়ে নলকূপের পানি তথা তরল ময়লা এসে পড়ে দিঘিতে। দিঘির পারের নওয়াব শাহি জামে মসজিদের মেঝে ও দেয়াল কড়ি দিয়ে দারুণ নকশা করা। নওয়াববাড়িটিও সুন্দর স্থাপনা। এ বাড়ি, মসজিদ ও দিঘিটি দেখতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসে। দিঘির পানি ব্যবহার করে স্থানীয় বাসিন্দারা। অথচ সেই দিঘির পানি বসতবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বিবর্ণ হয়ে গেছে। দিঘিটি সংরক্ষণ করা না গেলে একদিন ময়লা-আবর্জনায় পানি বিষাক্ত হয়ে পড়বে। ভরাট হয়ে যাবে পুরো দিঘি। মসজিদ ও দিঘি দেখতে আসা ভাইঘাট আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুবর্ণা ইয়াসমিন বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য আলাদা জায়গা দরকার। ময়লা দিঘিতে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে।’ একই কলেজের শিক্ষার্থী শাপলা আক্তার ও নাবিল আহম্মেদ বলেন, ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দিঘির সৌন্দর্যহানি ঘটছে। দর্শনার্থী মানিক সরকার ও আবুল কাশেম বলেন, ‘ময়লা ফেলার কারণে দিঘির পানি নোংরা ও অপবিত্র হচ্ছে। পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে।’ দিঘির পারের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা এখানে ভাড়া থাকি। বাড়ির মালিক দিঘির সঙ্গে বাড়ির পানির লাইনের সংযোগ করেছেন।’ স্থানীয় বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘ময়লা ফেলার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ নওয়াব মঞ্জিলের তত্ত্বাবধায়ক মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা নওয়াব মঞ্জিলের তরফ থেকে চেষ্টা করতেছি যাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধের নোটিশ দিয়েছি।’ নওয়াব শাহি জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা ইদ্রিস হোসাইন বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। কিন্তু আমার একার পক্ষে দিঘিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা সম্ভব না। এ দিঘি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে এখানকার পরিবেশও ভালো থাকবে।’ ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বলেন, ‘দিঘিটা আসলে দখভাল করে নওয়াববাড়ি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এ জন্য আমি স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি।’ ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা সিদ্দিকা বলেন, ‘এ ব্যাপারে জনসচেতনতা প্রয়োজন। বিষয়টি আমাকে কেউ এখনো জানায়নি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 − eight =