রিকশা বাণিজ্যে তৎপর বনানী সোসাইটি

0
795

হাবিব সরকার স্বাধীনঃ

গুলশান-বনানী-বারিধারা-নিকেতন এলাকার বিশেষ বাসসেবা চালুর পাশাপাশি হলুদ রঙের রিকশা নামানো হয়েছিল দুই বছর আগে। চারটি সোসাইটির পক্ষ থেকে নামানো রিকশাগুলোতে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। তবে রিকশাগুলো শুরু থেকেই নির্ধারিত ভাড়া থেকে বেশি নিয়ে আসছে।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান-বনানী-বারিধারা-নিকেতন এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব এলাকায় সোসাইটিগুলো মিলে বিশেষ বাসের পাশাপাশি নতুন ৫০০ রিকশা নামায়। উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও সংশ্লিষ্ট এলাকার সোসাইটিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব বিশেষ রিকশা ছাড়া অন্য রিকশা এলাকায় প্রবেশ করবে না। বনানী সোসাইটি সূত্র জানায়, বর্তমানে এক হাজারের মতো রিকশা চলছে ওই সব এলাকায়। এগুলো গুলশান ও বনানীতে ৪০০টি করে এবং নিকেতন ও বারিধারায় ২০০টি করে রিকশা চলে। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রিকশা টাঙানো তালিকায় অনুযায়ী সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা। গুলশান ১ গোলচত্বর থেকে গুলশান ২-এর ভাড়া ২০ টাকা। তবে চালকেরা এ দূরত্বে ২৫ থেকে ৩০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। বনানী পোস্ট অফিস থেকে ১১ নম্বর ব্রিজের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। নির্ধারণ করা ভাড়া ৩০ টাকা। কিন্তু চালকেরা ৩৫ থেকে ৪০ টাকার নিচে যেতে চান না। আবার বারিধারা থেকে চেকপোস্ট পর্যন্ত ভাড়া ২৫ টাকা তালিকায় দেওয়া আছে। কিন্তু রিকশার চালকেরা ৩০ টাকা করে নেন। আমতলী (জলখাবার) থেকে ১১ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের দূরত্ব ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। আর বনানী বাজার থেকে ইউনাইটেড হাসপাতাল পর্যন্ত দূরত্ব সোয়া দুই কিলোমিটার। তালিকা অনুযায়ী এ পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা। কিন্তু নেওয়া হয় ৫০ টাকা। ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে রিকশাচালক মো. আসিফ বলেন, ‘সোসাইটির পক্ষ থেকে রিকশার মালিকের জমা ঠিক করা ছিল ৩০০ টাকা। কিন্তু তিনি নেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ জন্য যে ভাড়ার তালিকা দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী গেলে আর চলা যাবে না। আমাদের কাছে কোনো টাকাই আসবে না। এ জন্য বেশি ভাড়া নিতে হয়।’ আরেক রিকশাচালক হানিফ বলেন, তাঁরা দুজনে মিলে একটি রিকশা ভাড়া নিয়েছেন। দৈনিক ৪৪০ টাকা দিতে হয়। তিনি আধা বেলা চালান, অন্যজন আধা বেলা। দুজনে ২২০ টাকা করে দেন। আগে যেখানে দৈনিক ৩০০ টাকা দিতে হতো, এখন প্রায় সাড়ে চার শ করে দিতে হয়। এই রিকশাগুলোর মালিক আগের গ্যারেজ মালিকেরাই। বারিধারা এলাকায় চলা রিকশাগুলোর গ্যারেজ কালাচাঁদপুরে। রিকশার মালিক কালা, এনা মিয়া, ভানু মিয়াসহ আরও কয়েকজনের নাম বলেন চালকেরা। তাঁরা নির্ধারিত জমা নিজেদের ইচ্ছামতো ঠিক করেন। রিকশার জমা বেশি নেওয়ার বিষয়ে কালাচাঁদপুরের রিকশার গ্যারেজের মালিক কালা মিয়া বলেন, ‘প্যাসেঞ্জাররাই (যাত্রী) রিকশার ভাড়া বেশি দেয়। তাঁরা বেশি জমা নেন না। আর রিকশার চালকেরা বেশি ভাড়া নেওয়ার জন্য বেশি জমার কথা বলে, যা ঠিক না।’ রিকশা নামানো এবং এর ভাড়ার বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্বে সোসাইটিগুলোর। কিন্তু তারা এখন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না, বরং দায়িত্বে এড়ানো চেষ্টা করছে। বনানী সোসাইটির অভিযোগ নম্বরে ফোন করা হলে ফোন ধরেন সোসাইটির সভাপতি শওকত আলী ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘রিকশাগুলো নামিয়েছে ডিএনসিসি ও রিকশার মালিকেরা। তাঁরাই দেখাশোনা ও ভাড়ার বিষয়ে জানেন। আগে আমাদের কাছে ফোনে দিনে ১০-১২টির মতো অভিযোগ আসত। এখন এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগ এলে আমরা লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিই।’ শওকত আলী বলেন, ‘ভাড়া ঠিক করেছে ডিএনসিসি ও রিকশার মালিকেরা। সোসাইটি কিছু জানে না। এ ছাড়া গুলশান-বনানী এলাকার অনেক ধনী ব্যক্তি এসব রিকশায় ওঠে। তাঁরা ভাড়া জানতেও চায় না। তাঁরা নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ ভাড়া দেন। তারাই বেশি ভাড়া দিয়ে অভ্যাস খারাপ করে ফেলেছে।’ তবে ডিএনসিসির উপ-রাজস্ব কর্মকর্তা বেলাল হোসেন মিয়া বলেন, রিকশার সবকিছু দেখাশোনা ও ভাড়া নির্ধারণ করেছে সোসাইটিগুলো। আর এই রিকশাগুলো তাঁরা নামাননি এবং এখান থেকে কোনো রাজস্ব পান না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight + 3 =