অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

0
797

জিডিপি প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক অনেক সূচকেই প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ফলে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার পাওয়ার হাউস হিসেবে বিবেচিত হলেও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশও নেতৃত্বের সারিতে উঠে আসছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) পূর্বভাস অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আসবে ৭.৫ শতাংশ, এর বিপরীতে ভারতের আসবে ৭.৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল (বিবিএসের হিসাবে) ৭.২৮ শতাংশ, যেখানে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৭.১ শতাংশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ও ভারতের চেয়ে তিন গুণ গতিতে বাড়ছে। ইউএনসিটিএডির তথ্য অনুযায়ী ২০১৩-১৬ সময়ে ভারতের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৩.৮ শতাংশ যেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। কিছু হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশ যদি আগামী দুই বছর জিএনআই এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি সমানতালে এগিয়ে নিতে পারে তবে ২০২০ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ সাফল্যের অন্যতম কারণ ক্ষুদ্র ঋণব্যবস্থা, যা আশির দশকে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি মডেল। তখন থেকেই সরকার নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে আসছিল। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ফেলো জয়শ্রী সেনগুপ্তা বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর ভীত রচনা করেই জোরালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে বাংলাদেশ। সামাজিক অনেক সূচকেও ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। বিশেষ করে প্রত্যাশিত গড় আয়ু, শিশু মৃত্যুর হার ও লিঙ্গসমতা। এসব ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ‘ল্যানসেটে’ প্রকাশিত ‘মানবসম্পদ’ সূচকে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৯৫ দেশের ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে অগ্রগতি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৭, যেখানে ভারতে প্রতি হাজারে ৩২। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২.৫৮ বছর। অন্যদিকে ভারতে গড় আয়ু ৬৮.৮ বছর। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অগ্রগতির অনেকটাই সাধিত হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক এবং ব্র্যাকের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে। দেশের চিরাচরিত ধারণা পাল্টে দিয়ে দরিদ্র মানুষদের ক্ষুদ্র ঋণ দিতে শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংক। ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এ ব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক ৩৪.১ শতাংশ ব্যাংক হিসাবধারী ডিজিটাল লেনদেন করে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় গড়ে ২৮.৮ শতাংশ। নারীর ক্ষমতায়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ২০১৬ ও ২০১৭ সালের র্যাংকিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় প্রথম স্থানে উঠে আসে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য দূরীকরণেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে। উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ড. এ কে শিভাকুমার বলেন, টেকসই বিনিয়োগের কারণে বাংলাদেশে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। আর বিনিয়োগ টেকসই হয়েছে মানুষের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে, যা মৌলিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গড় আয়ু ভারতের চেয়ে বেশি, শিশু মৃত্যুর হার ভারতের চেয়ে কম। এটা সম্ভব হয়েছে মৌলিক সামাজিক সেবাগুলো নিশ্চিত করার কারণে। এ ছাড়া সর্বশেষ প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিবেদনেও ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। একটি শিশুর শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা এবং টিকে থাকার সক্ষমতা বিচার করে ভবিষ্যতে তার উৎপাদনশীলতা এবং আয়ের সম্ভাবনা নিয়ে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের সম্মিলিত স্কোর শূন্য দশমিক ৪৮। ভারতের শূন্য দশমিক ৪৪ এবং পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ৩৯।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × four =