বনরুপা হাউজিংয়ের এমডি শফিক আহম্মেদের প্রতারণা ২০ বছরেও প্লট বুঝে পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা

0
1576

নাজনীন:
রাজধানীর বনরূপা হাউজিংয়ের এমডি শফিক আহম্মেদেও দুর্ধর্ষ প্রতারণারফাঁদে পড়ে ২০ বছরেও প্লটের মালিকানা বুঝে পাচ্ছে না লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগকারী গ্রাহকরা। তবে গ্রাহকের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আমেরিকায় বিলাশ বহুল সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন ঠিকই। এদিকে তিল তিল করে জমানো অর্থ শফিক আহম্মেদের হাতে তুলে দিয়ে বছরের পর বছর মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে ফাদে পড়া গ্রাহকরা। বনরূপা হাউজিংয়ের নামে গ্রাহকের নিকট থেকে হাজার কোটি টাকা নেয়ায় শফিক আহম্মেদের বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও বহাল তবিয়তে ধরাছোয়ার বাইরেই আছে এই ভয়নাক প্রতারক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনানী প্রপার্টিজ ডেভলপমেন্ট লিঃ এর আওতাধীন বনরুপা আবাসিক প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস শফিক আহম্মেদ। তার বাবা মরহুম হাজী সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ ওয়ারিশ সুত্রে প্রাপ্ত কিছু জমি ও নিজের ক্রয়কৃত কিছু জমি নিয়ে বিশাল আকারে অন্যে জমি সাথে নিয়ে ১২শ প্লটের একটি আবাসন প্রকল্প বনরুপা আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন। এর মধ্যে সে ১২শ প্লটই সাধারন জনগনের কাছে বুকিং দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ২০০৫ সাহাবুদ্দিনের মৃত্যু হওয়ার পর তার ছেলে এস শফিক আহম্মেদ বাপের প্রতারণার মেশিন নিজের কাধে তুলে নেন। যদিও শফিক আহম্মেদ তার বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় ১২শ প্লট মালিকের থেকে প্রাপ্ত টাকায় নিজেকে আমেরিকায় সেটেল্ড করেছিলেন। আমেরিকায় গড়ে তুলেন নিজের স্থায়ী জীবন। অথচ অদ্যবধি ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও শত শত প্লট মালিকই বুঝে পাচ্ছেনা তাদের স্বপ্নের জমি এক টুকরো প্লট। শফিকের নিকট টাকা দিয়ে অনেকেরই ঝরছে চোখের জল। অনেকেই টাকা ফেরত পেতে বা প্লট বুঝে পেতে ধরনা ধরছে দ্বারে দ্বারে।
প্লট মালিক মীর আক্কাস আলী জানান, বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের প্লট গ্রহীতাগনের নিকট থেকে প্লট হস্তান্তর জন্য সমস্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েও প্লটের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান না করে বছরের পর বছর ধরে ঘুরাচ্ছে এমডি শফিক আহম্মেদ। বিভিন্ন অধিদপ্তরের কাগজপত্রের অনুমোদন সহ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় জমি না থাকার পরেও শুধুমাত্র টাকা হাতানোর জন্যই গ্রাহকদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে শফিক চক্র। এখন জমিও নাই, তাই প্লট বুঝিয়ে দিতে পারেছেনা শফিক আহম্মেদ। আর কোন দিন প্লট বুঝিয়ে দিতে পারবেন বলেও মনে হয়না। কারন গত ২০/২২ বছর ধরে শতাধিক গ্রাহক প্লট না পেয়ে শফিক আহম্মেদের পেছনে ধরনা দিয়ে আসছে।
একটি সুত্র জানায়, সফিক আহম্মদের পিতা সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ ১২শ প্লট বিক্রির পরিকল্পনা হাতে নিয়েই প্রকল্পটি চালু করেন। মুলত সেখানে তার নিজের জমির পরিমান ছিল খুবই কম। ১২শ প্লটের নকশায় যেসব জমির মালিকদের জমি পড়বে, ঐসব জমির মালিকদের নিকট থেকে ঐ জমি ক্রয় করে প্লট বুকিংকারীদের প্লট বুঝিয়ে দেয়া হবে এমন পরিকল্পনাই ছিল সাহাবুদ্দিন আহম্মদের। কিন্তু এসব জমির মালিক পক্ষরা জানেই না যে তাদের জমি বনরুপা প্রকল্পের নিকট বিক্রয় করতে হবে। এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর ঐ সব জমির মালিকরা তাদের জমি বনরুপার কাছে অনেকেই বিক্রয় করে নাই। অথচ তাদের জমি প্লট আকারে আগেই সাধারন জনগনের কাছে বিক্রয় করে দিয়েছে বনরুপা আবাসিক প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ সহ তার ছেলে এস শফিক আহম্মেদ। ঢাল নেই, তরোয়াল নেই নিধিরাম সরদার। ১২শ প্লট বুকিং দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে শফিক আহম্মেদ এখন আমেরিকার সিটিজেন। এদিকে প্লট না পেয়ে ১২শ গ্রাহক মরলো কি বাচলো তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। গুলশান-২ এর রোড নং-৪৬ এর ৩৪ সেবা হাউজের ৪র্থ তলায় বনানী প্রপার্টিজের আলীশান অফিসে ঢুকলে যাদেরকে চোখে পড়ে তাদের কেউ জিআইজির খালতো ভাই, কেউ মন্ত্রীর বন্ধু, কেউ কমিশনারের খালতো ভাইয়ের শালা, আবার কেউ অবসর প্রাপ্ত আর্মি অফিসার সহ ইত্যাদি ইত্যাদি। যাদের অনেকই প্লট বিক্রির জন্য মক্কেল ধরে অফিসে এনে কমিশন খেছেন ইতিপূর্বে। তবে আমেরিকান সিটিজেন এস শফিক আহম্মেদ কোথায় আছে কেউ তার সম্পর্কে কোন কিছুই বলে না। এমনকি প্লট না পাওয়া গ্রাহকরা কোন প্রতিবাদ বা দাবী দাওয়া নিয়ে অফিসে আসলে এসব ক্ষমতাধর লোকের তোপের মুখে পতিত হয়। হুমকি ধমকি বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ী ফিরতে হয়। চলবে…..।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × four =