খাদ্যপণ্যের বাজারে কোনোভাবেই ভেজাল রোধ করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে একের পর এক অভিযান, জরিমানার পরও কিছুতেই ভেজাল কমছে না। গত কয়েক মাসের টানা অভিযানেও খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানায় দৃশ্যমান পরিবর্তন সামান্যই।
প্রতিদিন যেখানেই অভিযান চালানো হচ্ছে সেখানেই মিলছে ভয়াবহ ভেজাল, অপরিচ্ছন্নতার চিত্র। মুনাফা লাভের জন্য মানুষকে রীতিমতো গিনিপিগ বানিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। বিএসটিআই’র একজন কর্মকর্তা বলছেন, খাদ্যে যতসব ভেজালের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তার মূলে রয়েছে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতা। তারা পণ্য উৎপাদনের খরচ কমানোর জন্য পুরনো তেল ব্যবহার করছে, মেয়াদোত্তীর্ণ-পোকামাকড়-ময়লাযুক্ত খাদ্যপণ্য বাজারে ছাড়ছে, আরো নানা ভেজাল করছে। সবকিছুর পিছনেই ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার বিষয়টি কাজ করছে। অতি মুনাফা করতে গিয়েই মানুষকে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো খাবার খাওয়াচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
অনেক জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানও এই তালিকায় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটির কারখানায় ভেজাল ও নোংরা পরিবেশের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। নগরীর গোসাইলডাঙা এলাকায় রহমানিয়া বেকারিতে পুরনো কালো পামঅয়েল দিয়ে নিমকি ভাজতে দেখা যায়। যেটা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে কালো মবিলের রং ধারণ করেছে। এ সময় রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া চিনির রস এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ফুড কালার ব্যবহার করতেও দেখা যায়। এর আগের দিন চক মালঞ্চ কুলিং কর্ণারে দেখা গেছে- পোড়া তেলে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ভাজা হচ্ছে। এ সময় মিষ্টির রস, জিলাপির খামিতে মরা পোকামাকড় ভাসতে দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুডের কাঁচামাল পচে থাকতে দেখা যায়। একই দিন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও বাজার তদারকি অভিযানে পাঁচ হোটেল-রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে পোড়া তেল ব্যবহারসহ বেশকিছু কারণে জরিমানা করে। এরআগে অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ জালিয়তি করে ভেজাল খাবার বিক্রির প্রমাণও পাওয়া গেছে।
টানা অভিযান পরিচালনাকারী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন বলেন, ‘অনেক কারখানার চিত্র দেখে গা শিউরে উঠে, বমি আসে আসে অবস্থা। ওইসব কারখানায় বানানো খাবারই মানুষকে খাওয়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে অভিযানের ফলে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কারখানায় আগের তুলনায় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু ভেজালের মাত্রা এতো বেশি যে এককভাবে কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা পুরোপুরি কমানো সম্ভব নয়। টানা অভিযানের ফলে কিছু কিছু কারখানার পরিবেশে পরিবর্তন এলেও বৃহৎ পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
রুহুল আমিন বলেন, খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সবার আগে ব্যবসায়ীদের দায়বদ্ধতা তৈরি করা দরকার। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রবণতা পরিবর্তন করা দরকার। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ভূমিকা রাখতে পারে। তারা ঘোষণা দিতে পারে যে- যারা এরকম ভেজাল খাবার ও অপরিচ্ছন্ন খাবার তৈরি ও বাজারজাত করবে তাদের সাথে ব্যবসায়ী সংগঠনের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তারা অভিযানও পরিচালনা করতে পারে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সেক্টরের কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন- এক্ষেত্রে তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা চাইলেও ইচ্ছেমতো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। কেননা অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাথে রাজনৈতিক শক্তির সম্পর্ক বিরাজমান। তবে প্রশাসন সারাবছর সতর্ক থাকলে, নিয়মিত একাধিক অভিযান অব্যাহত রাখলে খাদ্যে ভেজাল আস্তে আস্তে কমানো সম্ভব। ভেজালকারীদের শাস্তির বিধান আরো কঠোর হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন অন্য এক ব্যবসায়ী নেতা।