“স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে লাইসেন্সিং এর ভূমিকা ও সিটি কর্পোরেশনের করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা”

2
571

এইড ফাউন্ডেশন-এর উদ্যোগে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) এর কনফারেন্স রুমে ০১ অক্টোবর ২০১৮ ইং তারিখ সকাল ১১ টায় নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এনসিসি) এর কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একটি মতবিনিময় সভা এর আয়োজন করা হয়। মেয়র মহোদয় ব্যস্ত থাকার কারণে উক্ত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব এ, এফ, এম, এহতেশামূল হক, উপসচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, নারায়নগঞ্জ। অনুষ্ঠানে শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান ও সম্মেলনের উদ্দেশ্য উপস্থাপণ করেন জনাব দোয়া বখশ শেখ, সহকারি পরিচালক, এইড ফাউন্ডেশন। প্রেজেন্টেশন উপস্থাপণ করেন জনাব কাজী মোহাম্মদ হাসিবুল হক, সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা, এইড ফাউন্ডেশন, পরবর্তীতে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহন করেন এনসিসি এর কাউন্সিলর ও স্বাস্থ্য, লাইসেন্স, রাজস্ব, নগর পরিকল্পনাবিদ সহ অনান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আবু নাসের অনীক, এ্যডভোকেসি অফিসার, এইড ফাউন্ডেশন।

উল্লেখ্য, এইড ফাউন্ডেশন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত করতে খুলনা ও ঢাকা বিভাগের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় তামাকজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় নিয়ন্ত্রণে পৃথক লাইসেন্স প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। যত্রতত্র তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি বড় সমস্যা। এ সকল খুচরা বিক্রেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন সংস্থার নিয়ন্ত্রণে নেই। এ সকল বিক্রেতা আইনভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন প্রচার এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নিকট তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করে আসছে। এ সকল বিক্রেতাদের লাইসেন্সের আওতায় আনার প্রেক্ষিতে অনেক পৌরসভায় প্রত্যাশিত ফল পাওয়া গিয়েছে। তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো গ্লোাবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে (গ্যাটস্ ২০১৭), জরিপে দেখা যায় ২০১৭ সালে দেশে তামাক সেবনকারী ১৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবন করেন। কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৪২.৭ শতাংশ, পাবলিক পরিবহনে ৪৪ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে ১২.৭ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে ২০.৬ শতাংশ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে যার মদ্ধে ১৬.২ শতাংশ পুরুষ এবং ২৪.৮ শতাংশ মহিলা। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার (ওঐগঊ, ২০১৬) মানুষ অকাল মৃত্যু বরণ করে। তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহারসহ সকল পর্যায়ে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং পরিবেশের জন্য মারাত্বক ভীতিকর, তার কারণে তামাকের ক্ষতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। আরো সুস্পষ্টভাবে বলা যায়,বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি) লক্ষমাত্রা অর্জনে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার যদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তবে এসডিজি-৩ (সকল বয়সের সকল মানুষের জন্য সুস্থ্য জীবনের নিশ্চয়তা ও জীবনমান উন্নয়ন) এবং ৮ (স্থিতিশীল,অর্ন্তভূক্তি মূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন) অর্জন বাধাগ্রস্থ হবে। তার কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে ও বিপণনের জন্য বাংলাদেশে কোন সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। এমনকি তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্তদের নির্ধারিত কোন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের ব্যবস্থা নাই। যে কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকা, ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, খাবারের দোকান, রেষ্টুুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে তামাকজাত পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। সহজ লভ্যতা ও সহজ প্রাপ্যতার কারণে যত্রতত্র তামাকজাত পণ্যের বিপণন কেন্দ্র গড়ে উঠছে। উৎকন্ঠার বিষয় এ সকল দোকানের সংখ্যা দিনদিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এর বিক্রয়ে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এফসিটিসি বাস্তবায়নে একটি কার্যকারী পদক্ষেপ হতে পারে এই লাইসেন্সিং ব্যবস্থা। মদ বিক্রয়ের জন্য যেমন লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়, তেমনি তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য বিশেষ লাইসেন্স দেয়া যেতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − 1 =