জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে খালেদা জিয়ার আপিল,

0
431

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিল, অন্য দুই আসামির আপিল ও সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য আজ বুধবার আদেশের জন্য ধার্য রয়েছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দিবেন। বেলা সাড়ে তিনটায় এ বিষয়ে আদেশের জন্য রাখা হয়েছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অর্থের উৎসের বিষয়ে অতিরিক্ত সাক্ষ্য চেয়ে আবেদনে আদেশ না পেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। আজ বুধবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে বেলা দেড়টায় এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনি বলেন, আমরা চেম্বার আদালতের পর হাইকোর্টে যাব। তবে আমরা আর শুনানিতে অংশ নিচ্ছি না। এর আগে মঙ্গলবার এ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শেষ করে। শুনানিতে দুদক আইনজীবী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা বৃদ্ধি করে যাবজ্জীবন চান। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল ৫ বছরের সাজাই বহাল চেয়েছেন। পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজ (বুধবার) দিন ধার্য করেন। তবে কোন বিষয়ে আদেশের জন্য রাখা হয়েছে তা উভয়পক্ষের আইনজীবীরা পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি। ওইদিন বেলা ১১টায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলীসহ অন্যরা আদালত থেকে বেরিয়ে যান। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অর্থের উৎসের বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ চেয়ে সোমবার একটি আবেদন করেন এজে মোহাম্মদ আলী। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, মূল আপিলের যুক্তিতর্ক শেষে এই আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই এজে মোহাম্মদ আলী ওই আবেদনের ওপর আদেশ চাইলে আদালত যুক্তিতর্ক শেষে আদেশ দেয়া হবে বলে জানান। তিনি এ সময় বলেন, তাহলে এই আদেশটিই (নথিভুক্ত করে রাখার আদেশ) দেন, আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব। বিচারক তখন বলেন, ‘সে আপনারা যেতে পারেন।’ এছাড়া ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরে এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তাহলে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখা হোক।’ এ পর্যায়ে আদালত তা প্রত্যাখ্যান করলে মোহাম্মদ আলী যুক্তিতর্কে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আদালত ত্যাগ করেন। পরে অ্যাড. জয়নুল আবেদীন, আবদুর রেজ্জাক খান, ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, আমিনুল ইসলাম, বদরুদ্দোজা বাদল, এএইচএম কামরুজ্জামন, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মো: আখতারুজ্জামানসহ অন্য আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে যান। শুনানি শেষে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তিতর্কে দুদকের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন চেয়েছি। আইন অনুযায়ী বিচারিক আদালতের ৫ বছর সাজা দেয়া ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার করা আপিলসহ ৪টি আবেদনের ওপর ২৮ দিন শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কার্যদিবসে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অতিরিক্ত সাক্ষ্য দেয়ার জন্য একটা দরখাস্ত নিয়ে এসেছিল। সোমবার তাদের ওই দরখাস্ত শুনে দু’পক্ষের যুক্তিতর্কের পর আদেশ দেবেন বলে আদালত নথিভুক্ত করে রাখেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, নিম্ন আদালত যে সাজা দিয়েছে তা সঠিক। ওই সাজা যাতে বহাল থাকে আমি সেই মর্মে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি। সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছেন দুদক। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করিনি। সেজন্য সাজা বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার ছিল না। তিনি বলেন, আমি বলেছি, বিদেশ থেকে যে অর্থ এসেছে তা এতিমদের জন্য এসেছে। সেখানে লেখা ছিল প্রাইম মিনিস্টার অরফানেজ ট্রাস্ট। সেই অর্থটা পরবর্তী সময়ে দুটি এতিমখানায় দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটা হল বাগেরহাটে জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও বগুড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট। কাজেই টাকা যে সরকারি টাকা এবং রাষ্ট্রের অর্থ, জনগণের অর্থ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং এই আত্মসাতের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেকেই অপরাধী। নিম্ন আদালত সঠিকভাবেই সাজা দিয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো: আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সাথে খালেদার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা এ আবেদন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ এবং অর্থদণ্ড স্থগিত করে নথি তলব করেন। এরপর ৭ মার্চ অপর আসামি মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলও শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। পরে ২৮ মার্চ খালেদার সাজা বাড়ানোর জন্য দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ১০ মে আরেক আসামি শরফুদ্দিনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। এখন তিন আসামির আপিল ও দুদকের আবেদনের রুল আদালতে শুনানি হয়। মামলায় খালেদা জিয়াকে ১২ মার্চ হাইকোর্ট চার মাসের জামিন দেন। পরবর্তীতে কয়েক দফা তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন হলেও পরে আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আপিলটি নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen − eleven =