বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০, আহত ২০

0
618

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহসড়কের দশমাইল এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন শিশু ও নারীসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

শুক্রবার রাত ৮টায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতলে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থলেই তিনজনের মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৮টার দিকে পঞ্চগড় শহর থেকে ভাই বোন এন্টার প্রাইজের একটি যাত্রীবাহী বাস বাংলাবান্ধার দিকে যাচ্ছিল এবং তেঁতুলিয়া থেকে একটি বিদ্যুতের পোলবাহী ট্রাক পঞ্চগড় শহরের দিকে আসছিল। এ সময় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহসড়কের দশমাইল বাজারে ট্রাকটির বাম পাশে একটি বিয়ের গাড়ি (বাস) দাঁড় করানো ছিল। পোলবাহী ট্রাকটি বিয়ের দাঁড় করানো বাসটিকে পাশ কাটতে গিয়ে সামনে থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত এবং পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতলে নেওয়ার পর এক শিশু ও এক নারীসহ ৩ জন এবং রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ২ জন মারা যান। নিহতরা হলেন- পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের জোতহাসনা গ্রামের সাইদুল ইসলামের স্ত্রী লাভলী বেগম (২৯), সাইদুল ইসলামের ছেলে ইয়াছিন আলী (৭), বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের উৎকুড়া গ্রামের পুতিনের ছেলে অনিত্য (২০), তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের উত্তর কাসেমপুর এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে ফরিদুল ইসলাম (৩০), পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের শিতলীহাসনা গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে রেজাউল (২২), তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়ি গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে রাসেল (২০), তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের গরিয়াগছ গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে ইউনুস আলী (২৮), তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মোমিনপাড়া গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে মোজাম্মেল (৩৮), তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের গরিয়াগছ গ্রামের ইউসুফ আলীর পুত্র মনির হোসেন (৬) এবং ডাঙ্গাপাড়া এলাকার ওমর আলীর মেয়ে রাহেলা (২৫)। আহতদের পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল ও গুরুতর আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনার কারণ উদঘাটনে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এহেতেশাম রেজাকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বাসের আহত যাত্রী রাজু মিয়া জানান, আমি তেঁতুলিয়া যাচ্ছিলাম। বাস ভর্তি যাত্রী ছিল। ১০ মাইল এলাকায় বাসটি পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে একটি পোলবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আমি কিছু বুঝে উঠার আগে দেখলাম তিনজনের মাথা আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। মূল ডানপাশে যারা বসেছিল তাদের অধিকাংশই মারা যায়। রমণী রায় নামে আহত বাসের আরেক যাত্রী জানান, আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি আমার ওপর অনেকগুলো লাশ। কেউ আমাকে তুলতেছিল না। পরে আমাকে কিভাবে উদ্ধার করা হয়েছে তা আমি বলতে পারি না। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন রায় জানান, দুর্ঘটনায় পোলবাহী ট্রাকটি আটক করা গেলেও চালক পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ গোলাম আজম জানান, ঘটনার কারণ উদঘাটনে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আহতদেরও তালিকা করে অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seven − 3 =