ভারতের আদালতে খালাস পেলেন সালাহউদ্দিন

0
415

সাড়ে তিন বছরের দুর্বিষহ প্রবাস জীবন থেকে মুক্তি পেলাম। আমি দ্রুত দেশে ফিরতে চাই। আশা করছি খুব দ্রুত দেশে ফিরতে পারবো। অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়ার পর মুঠোফোনে  তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি। ভারতীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমার চিকিৎসাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভারতীয় সরকার আমাকে দিয়েছে। তাই ভারতের সব মহলকে ধন্যবাদ জানাই। মেঘালয় প্রাদেশিক সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারসহ সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কবে নাগাদ দেশে ফিরছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালত ভারত সরকারকে আদেশ দিয়েছেন আমাকে যেন দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আমি আশা করছি আদালতের আদেশ অনুযায়ী দ্রুত দেশে ফিরতে পারবো। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অবস্থা ও জোট সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশে একটি জাতীয় ঐক্য হয়েছে। এই ঐক্য জরুরি ছিল। আশা করছি, দেশের জনগণ দ্রুত মুক্ত গণতন্ত্রে ফিরতে পারবে। দেশে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে। সেই ঐক্য ব্যর্থ হবে না। আশা করছি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। তিনি বলেন, দেশে যে পরিস্থিতি চলছে সেই পরিস্থিতির এক সময় উত্তরণ হবেই। নতুন জোট নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই জোট গণতান্ত্রিক জোট। জাতীয় স্বার্থের জোট। বাংলাদেশের গণতন্ত্র মুক্তির জোট। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দুঃশাসনকে বিদায় করার জন্য। দেশবাসীর প্রতি কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, দেশবাসীর দোয়ায় বিশেষ পরিস্থিতি কাটিয়েছি। এটা কম পাওয়া নয়। দেশবাসী যেন প্রকৃত গণতন্ত্রে ফিরতে পারেন এই কামনা করছি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সালাহউদ্দিন আহমেদের রায়ের তারিখ তিন দফা পেছানো হয়। এর মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষে প্রথম রায়ের তারিখ ছিল ১৩ই আগস্ট। ওই দিন রায়ের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৮শে সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় দিনও রায় হয়নি। তৃতীয় দফা রায়ের তারিখ ছিল ১৫ই অক্টোবর। তবে ১৫ই অক্টোবর নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয় ৯ই নভেম্বর। শিলং আদালত গতকাল হঠাৎ করেই রায় দিয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে সালাহউদ্দিনের ঘনিষ্ঠজনরাও জানতেন না। এর আগে রাজধানীর উত্তরা থেকে ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ নিখোঁজ হন এ বিএনপি নেতা। ৬৩ দিন পর ওই বছরের গত ১১ই মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। পর দিন তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করায় ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী সালাহউদ্দিনকে আটক দেখায় মেঘালয় থানা পুলিশ। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিলংয়ের নেগ্রিমস হাসপাতালে নেয়া হয়। সে বছরই ২৭শে মে সালাহউদ্দিনকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠান। পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ২৯শে মে সালাহউদ্দিন আহমেদের পক্ষে জামিন আবেদন করা হলেও ইন্টারপোলের ঢাকা অফিসের রেড নোটিশ থাকায় তাকে জামিন দেননি ভারতের শিলংয়ের একটি আদালত। ২০১৫ সালের ২২শে জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফরেনার অ্যাক্ট, ১৯৪৬ এর ধারা ১৪ এর অধীনে তার বিরুদ্ধে ভারতে (শিলং) কাগজপত্র ছাড়া অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের শিলংয়ে আকস্মিক উপস্থিতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিচার এড়াতে তিনি ভারতে এসেছেন। এই মামলায় আদালত সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। এ ছাড়া তাকে শিলংয়ে পাওয়ার পর যে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় সেই হাসপাতালের দুই চিকিৎসকসহ ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এ বছরের ২৫শে জুন উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত ১৩ই আগস্ট রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। এরপর তিন দফা তারিখ পেছানোর পর মামলাটির রায় হলো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 1 =