“হেমন্তে ঐ ধানের ক্ষেতে কাঞ্চা সোনা জ্বলে”। পাকা আধা-পাকা সোনার আমন ফসলের সোনালী ঋতু হেমন্ত সবে শুরু। কার্তিক মাস পড়েছে মাত্র দ্বিতীয় সপ্তাহে। আর এই কার্তিকে অর্থাৎ হেমন্তেই এবার আগাম শীতের কামড় শুরু হয়ে গেছে। সচরাচর অগ্রহায়ণে গিয়ে শীতের আমেজ টের পাওয়া যায়।
পঞ্জিকার হিসাবে পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। যা এখনও ঢের দূরে। গত কয়েকদিন যাবত সন্ধ্যায়, রাতে উত্তরের কনকনে হিমেল হাওয়ায় ভর করে হালকা শীত পরশ বুলাচ্ছে শহর-গঞ্জ গ্রাম-জনপদে। সঙ্গে যোগ হয়েছে সকালের হালকা কুয়াশা। ভোরে শিশিরের মুক্তাদানার অপরূপ দৃশ্য তৈরি করেছে মাঠ-ঘাট, বন-বাদাড়, সবুজ প্রকৃতি চরাচরে। দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ হিমালয় পাদদেশীয় এলাকা বৃহত্তর দিনাজপুর দিয়েই গত কয়েকদিন যাবত গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে শীত বুড়ি। গতকাল (শুক্রবার) দেশে তাপমাত্রার পারদ সবচেয়ে নিচে নেমে যায় সর্ব উত্তর-পশ্চিমের জনপদ তেঁতুলিয়ায় ১৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে গত ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে রাতের তাপমাত্রা ২.৫ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেয়েছে। উত্তর জনপদে রাতের তাপমাত্রা স্থানভেদে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. কমেছে। তাপমাত্রা হ্রাসের সাথে সাথে উত্তরের হিমেল কনকনে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ভোর থেকে সকাল অবধি কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে সড়ক মহাসড়ক, নদ-নদী, খাল-বিল, মাঠ-প্রান্তর, পুকুর-দীঘি চরাচর। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় সকালে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়ছে। ভোরে শীতের আমেজ এসে গেছে পাহাড়ে পাহাড়ে। জুম ধানের পিঠা-পুলি তৈরি হচ্ছে ঘরে ঘরে। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদও ৩৩ ডিগ্রিতে নেমেছে যশোরসহ দেশের কয়েকটি জায়গায়। ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রিতে ঘোরাফেরা করছে। কুয়াশার সঙ্গে ধুলোবালির আধিক্য এবং আগাম শীতের পদধ্বনিতে সর্দি-কাশি জ্বর নিউমোনিয়া, হাঁপানি শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপের তারতম্যসহ বিভিন্ন মৌসুমী রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সাধারণত কয়েকটি এলাকা দিয়ে শীতের আগমন শুরু হয়। উত্তরের হিমশীতল সাইবেরীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণমুখী বাংলাদেশের দিকে শীতের যাত্রা শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে। বাংলাদেশে শীতের বায়ুপ্রবাহ প্রবেশের ‘কপাট’ গুলোর মধ্যে রয়েছে- বৃহত্তর দিনাজপুরের দিনাজপুর, সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, ডিমলা, রাজারহাট, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, বদলগাছী, ঈশ্বরদী, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং বৃহত্তর সিলেটের শ্রীমঙ্গল। গতকাল এসব এলাকায় তাপমাত্রার পারদ এখনই ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। ধীরে ধীরে আরও নামতে পারে পারদ। তবে দেশের অধিকাংশ স্থানে শীতের আগমন এবং শীত জেঁকে বসতে আরও যথেষ্ট সময় লাগবে। চলতি অক্টোবর মাসে দেশে শৈত্যপ্রবাহের কোনো পূর্বাভাস নেই। গতকালসহ কয়েকদিনে রাজধানী ঢাকার আশপাশের বিশেষ করে আশুলিয়া, সাভার, মুন্সীগঞ্জ, বিক্রমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে কুয়াশা আর শিশিরভেজা সকাল শীতের আমেজ এনে দিয়েছে। এদিকে ২৪ ঘন্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণাংশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে দেশের কোথাও কোথাও হালকা (৪ থেকে ১০ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
গতকাল রাতে সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। কার্তিক তথা হেমন্তে যখন উত্তর জনপদ থেকে শীতের আগমন শুরু হয়েছে তখন যদি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হয় তাহলে শীতের প্রকোপ আরও বেড়ে যেতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল মাদারীপুরে ৩৩.২ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩২.২ এবং সর্বনিম্ন ২০.৮ ডিগ্রি সে.। গতকাল রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ ১৬ ডিগ্রি সে., মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে ১৭ ডিগ্রি সে. এমনকি দক্ষিণের উপকূলীয় জনপদ বরিশালেও ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।