এরপর পরস্পর কাছে আসা, প্রেম শেষে বিয়ে

0
691

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের বাসিন্দা অনীক দত্ত।  মডেলিং করতে গিয়ে কলকাতায় পরিচয় হয় জলপাইগুড়ির বাসিন্দা সাগ্নিক চক্রবর্তীর সাথে।  এরপর পরস্পর কাছে আসা, প্রেম শেষে বিয়ে।  যদিও পথটা মসৃণ ছিল না।

 

কারণ দুই জনই পুরুষ।  সমাজও মেনে নেবে না।  তাই অনীক ঠিক করলেন অস্ত্রোপ্রচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে ভালবাসার পাত্র সাগ্নিক-কে বিয়ে করবেন।  যেই ভাবা সেই কাজ।  অনীক থেকে হলেন অ্যানি।  গত ১০ অক্টোবর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তনের পর নিজের নাম পাল্টানোর কথাও জানান অনীক। প্রথমে বাড়ি থেকে আপত্তি থাকলেও অবশেষে অনীক ও সাগ্নিক-এর প্রেমের কাছে হার মানে দুই পরিবারের লোকজনেরা।  গতকাল রবিবার চার হাত এক হয় বালুরঘাটের অ্যানির ও জলপাইগুড়ির সাগ্নিকের।  জলপাইগুড়ির টাউন ক্লাবের বিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েই বাঙালি তথা হিন্দু শাস্ত্র মতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। অ্যানির পরনে ছিল লাল টুকটুকে বেনারসী, গলায় ও হাতে সোনার গহনা।  অন্যদিকে হলুদ রঙের পাঞ্জাবী ও লাল রঙের ধুতি পরিহিত সাগ্নিককেও বেশ দেখাচ্ছিল। পাত্রী অ্যানি বালুরঘাটের একটি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষিকা, অন্যদিকে ময়নাগুড়ির একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন সাগ্নিক।  বিয়ের পর দুইজনেই নিজেদের সাংসারিক জীবন সুখের জন্য সকলের আশীর্বাদ চেয়েছেন। সাগ্নিক জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে মডেলিং করার সূত্রে আমাদের মধ্যে আলাপ হয়।  অনীক ও আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়।  তখন আমরা ঠিক করি আমরা উভয়েই সারা জীবন একসাথে থাকবো।  আমি খুবই খুশি যে আজ আমরা দুইজনেই একসাথে রয়েছি। অন্যদিকে সাগ্নিকের সাথে এই বিয়ে তার কাছে স্বপ্ন পূরণের মতো বলে জানালেন অ্যানি।  সে জানায়, সাগ্নিকের সাথে একসাথে থাকার ব্যাপারে আমি ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  আজ বিয়ের পর এটা বাস্তবে পরিণত হল।  আমি আশা করবো যে কোনরকম সামাজিক বিভেদকে দূরে সরিয়ে রেখে মানুষ আমাদের বিয়েকে মেনে নেবে। সাগ্নিকের বাবা সুব্রত চক্রবর্তী জানান, আমরা তাদের সম্পর্কের কথাটা জানতে পারি এবং আমি ভেবেছিলাম যে তাদেরকে বিয়ে দেওয়াটা আমার কর্তব্য। তিনি আরও জানান, এই ধরনের ভালবাসা ও বিয়ে এখনও পর্যন্ত সমাজে কিছুটা অগ্রহণযোগ্য।  বেশ কিছুটা সামাজিক চাপও রয়েছে।  অনেকেই ভেবেছিলেন যে আমি হয়তো ছেলের বিয়েতে মত দিয়ে তার জীবনটা নষ্ট করে দিতে চাইছি।  আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন এই বিয়েতে উপস্থিতও হননি। তবুও আমি তাদের ভালবাসা ও বিয়েকে মেনে নিয়েছি। সাগ্নিক ও অ্যানির বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ।  কনের পরিবারের দিক থেকে উপস্থিত ছিলেন অ্যানির মা প্রীতিরানী দত্তসহ আরও ২৯ জন সদস্য।  অতিথি আপ্যায়নে কোন কিছুই বাদ ছিল না।  শেষ পাতে ছিল বাঙালির সেরা মিষ্টি রসগোল্লা ও পান। প্রীতিরানী জানান, মেয়ের প্রবণতা দেখে প্রথম দিকে আমরা কিছুটা অবাক হয়েছিলাম।  কিন্তু পরে তার সুখের কথা ভেবেই আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত বদল করি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × one =