বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের ফেরানো

2
523

প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সে দেশে প্রত্যাবাসনে আস্থা সৃষ্টি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আজ মঙ্গলবার ঢাকায় মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডাব্লিউজি) তৃতীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আহ্বান জানাবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, আর মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন ওই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিয়ন্ট থু। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত আগস্ট মাসে নেপিডো সফরের সময় বাংলাদেশ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে কক্সবাজারে আশ্রয় শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সামনে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরার অনুরোধ করেছিল। মিয়ানমার তাতে সম্মতি দিয়েছে। আজ ঢাকায় জেডাব্লিউজির বৈঠক শেষে আগামীকাল বুধবার মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ টেকসই, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরার পর সেখানে যাতে তাদের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে আবার এ দেশে আশ্রয় নিতে না হয় তা নিশ্চিত করেই প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। তবে রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজেদের মাতৃভূমি রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে আগ্রহী হয় সে জন্য মিয়ানমারের আরো অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত করলেই তাদের অনেকেই হয়তো ফিরে যেতে আগ্রহী হবে না। কারণ রাখাইন রাজ্যে তাদের ওপর যে ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে তাতে বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই ফেরার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত। এ ছাড়া মিয়ানমারে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলোতে অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের  ফেরার জন্য আস্থা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে পারে। জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মোট আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। মিয়ানমার সেগুলো থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৯ দফায় প্রায় চার হাজার ৬০০ জনের পরিচয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় এক হাজার ৫০০ জনের তালিকা মিয়ানমার বাংলাদেশকে দিয়েছে। ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের নানা ছুতায় মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি। বর্তমানে যে গতিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই করছে তাতে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, আজ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য বিদ্যমান পরিবেশ ও অবকাঠামোগত পরিস্থিতিও পর্যালোচনা করা হবে এ বৈঠকে। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথাও রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × 1 =