Site icon Aparadh Bichitra

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পটুয়াখালী-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা ও গলাচিপা থানার একাংশ) আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি বড় দুই দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীসহ জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর দুই প্রার্থী গনসংযোগ শুরু করেছেন। এ আসনে গলাচিপা উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং দশমিনা উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন রয়েছে। এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। দুইটি উপজেলা মিলে গুরুত্বপূর্ণ এই সংসদীয় পটুয়াখালী-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী বর্তমান এমপি আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন, আবুল বরকত ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহন করেন, তিনি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী।

মনোনয়ন প্রত্যাশীগণ তৃণমুল পর্যায়ে গণসংযোগ করছেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী আলহাজ্ব কামরান শাহিদ প্রিন্স মহাব্বত, আবুল বরকত ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ গ্রহন করেন। পরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াঁন এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে সমর্থন ও নির্বাচনে সহযোগীতা করেন। ২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জরীপ ও আগাম বাছাই তালিকায় আবুল বরকত এর নাম আসে। বর্তমান একাদশ নির্বাচন সংসদের মাঠ পর্যায়ে (দশমিনা ও গলাচিপা থানার একাংশ) জনসমর্থনের দিক থেকে আবুল বরকত এগিয়ে আছেন। এসব মিলিয়ে নতুন হিসাবে অনেকে তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। তাছাড়া কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডে রয়েছে তার জোরালো লবিং। প্রার্থীরাসহ তাদের নেতা কর্মীসমর্থক ও শুভাকাঙ্খিরা ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত রয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আলোচিত সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনির নামও শোনা যাচ্ছে। আওয়ামীলীগ আসনটি ধরে রাখতে জেলা আওয়ামীলীগ নেত্রীবৃন্দ গলাচিপা ও দশমিনায় বিবাদমান দলীয় দ্বন্দ নিরাসনে নজরদারি করছেন। এ দ্বন্দ নিরসনে ব্যর্থ হলে আওয়ামীলীগ আসনটি হারাতে পারে বলে তৃনমূল নেতারা শংকিত। এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, বিগত নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে যারাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন পরবর্তিতে স্থানীয়ভাবে তারাই গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পরেছেন। আজ অবদি সেই গ্রুপিং চাঙ্গা রয়েছে। বিবাদমান কয়েকটি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চষে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান এমপি আখম জাহাঙ্গীর হোসাইনও গত পাঁচ বছরে গ্রুপিংয়ের উর্ধ্বে যেতে পারেননি। দল গোছানোতো দুরের কথা উল্টো গ্রুপিং আরো চাঙ্গা হয়েছে। এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকরা যদি এখানে দলীয় মনোনয়ন দিতে বিগত দিনের মত যদি উড়ে এসে জুড়ে বসার মত সিদ্বান্ত গ্রহন করে তবে এবার সেটা আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হতে পারে। তবে এলাকাবাসী এবার নতুন ত্যাগী গ্রহনযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। এসব মিলিয়ে একাধিক প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রে লবিং করে যাচ্ছেন। এলাকায় গনসংযোগ করছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আবার অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের দোড় গোড়ায় গিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে তারা সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে আবার জনসেবামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে কিংবা এলাকার অসহায় গরীব দুখী মানুষের কাছে যাবার জন্য বিভিন্নভাবে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অপরদিকে এ আসনটি দখলে নিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা হাসান মামুন এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে অনেক এগিয়েছে। এলাকাবাসীর ধারনা, ঝিমিয়ে পড়া বিএনপিকে ইতিমধ্যে সুসংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছে হাসান মামুন। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর একাধিকবার কারাবরণ করায় দলীয় নেতাকর্মীদের মন জয় করতে পেরেছেন। তাছাড়া তরুনরা তাকে পাবার জন্য হুমরী খাচ্ছেন বলেও অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে তারেক রহমানের খুব কাছের লোক হওয়ায় মনোনয়ন পাবার বিষয়ে তার অনেকটা পথ পরিস্কার বলেও মনে করেন কেউ কেউ। বিরোধীদল হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে হাসান মামুন এলাকায় কৌশলে গনসংযোগ চালিয়ে ইতিমধ্যে সকলের কাছে আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। যে কারণে আপামর জনতার কাছে গ্রহনযোগ্য প্রার্থী হিসাবে ইতিমধ্যে আলাদা একটি ইমেজ সৃষ্টি করেছেন হাসান মামুন। এছাড়াও বিএনপির সাবেক এমপি গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো: শাহজাহান খান এবং কেন্দ্রীয় কৃষক দলের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা মিয়া গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এর সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও গলাচিপা উপজেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নিজাম উদ্দিন তালুকদার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সম্ভাব্য প্রার্থী গলাচিপা উপজেলা কমিটির সভাপতি ডাঃ মো: কামাল হোসেন খান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারে সভা-সমাবেশসহ গণসংযোগ করছেন।