ভেজাল তেলের অবাধ ব্যবহারে বিকল হয়ে পড়ছে যানবাহন

0
658

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ভেজাল জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে। এসব তেলের অবাধ ব্যবহারে বিকল হয়ে পড়ছে যানবাহন। এর ফলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তেল বিক্রি যেমন কমছে, তেমনি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাজারে প্রতি লিটার পেট্রল ৮৬, অকটেন ৮৮, ডিজেল ৬৬ ও কেরোসিন ৬৮ টাকায় বিক্রি করা হয়। এ দামে খুচরা বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি করে লাভের পরিমাণ খুব কম। এর বিপরীতে এক লিটার কনডেনসেট (তরল হাইড্রোকার্বনের কম ঘনত্বের মিশ্রণ) বিক্রি হয় ২২ টাকায়। ফলে পরিশোধিত তেলের সঙ্গে অপরিশোধিত কনডেনসেট এবং বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে দেদার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় সবকটি জ্বালানি তেলের দোকান ও ফিলিং স্টেশন এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে জ্বালানি তেল যানবাহনে সরবরাহের পর একাধিকবার গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। সিলেট নগরীর মহাজনপট্টিতে এ রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যায় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। স্থানীয়রা জানায়, এক ড্রাম পরিশোধিত জ্বালানি তেলের সঙ্গে চার ড্রাম অপরিশোধিত কনডেনসেট মেশানো হয়। এতে লিটারপ্রতি ৬০ টাকারও বেশি মুনাফা করেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে বিয়ানীবাজারের পাড়া-মহল্লায় খুচরা ও পাইকারি জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, তেল বিপণনের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ভেজাল দিচ্ছে। এতে শুধু ক্রেতাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, সরকারও বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। পৌর শহরের বাসিন্দা ও মোটরসাইকেল চালক মিছবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি এখানকার ভেজাল তেল কিনি না। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম বাজারের একটি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে তেল কিনি। ওই তেলের মান ভালো।’ আরেক মোটরসাইকেল চালক নাহিদ খান বলেন, ‘বিয়ানীবাজারের প্রতিটি পেট্রলপাম্পে ভেজাল তেল থাকার কারণে বাইকের অনেক যন্ত্র তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এখান থেকে আমি তেল কিনি না। প্রতি সপ্তাহে সিলেট শহরে যাই। ওখান থেকেই সপ্তাহের জ্বালানি কিনি।’বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, কয়েকভাবে তেলে ভেজাল মেশানো হতে পারে। প্রথমত, কনডেনসেট ব্যবস্থাপনা, অর্থাৎ গ্যাসক্ষেত্র থেকে যখন কনডেনসেট সরবরাহ করে তা চোরাই পথে ভেজালকারীদের হাতে পৌঁছতে পারে। দ্বিতীয়ত, ফ্রাকশনেশন (তেল-গ্যাস পৃথককরণ) কারখানার উৎপাদনব্যবস্থায় অনিয়ম হতে পারে। তাদের তথ্য মতে, দেশে সরকারি তিনটি ও ১২টি বেসরকারি ফ্রাকশনেশন কারখানা রয়েছে। এদিকে জ্বালানি তেলে ভেজালের মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ থাকার পরও মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই সিলেট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নির্বিকার। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কর্মকর্তারা বিয়ানীবাজারে জ্বালানি তেল বিক্রির প্রতিষ্ঠান থেকে মাসোয়ারা আদায় করেন। এ কারণে কোনো অভিযান বা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় না। এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। এর পরও সময়-সুযোগের অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানে যাওয়া সম্ভব হয় না। শিগগির ভেজাল তেল বিক্রি বন্ধে অভিযান চালাব।’সিলেট বিএসটিআইর উপমহাপরিচালক শফিউল্লাহ খান বলেন, ‘মাসোহারা আদায়ের ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমি এ বিষয়ে খবর নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − 4 =