প্যাকেটজাত গুঁড়া মসলার বাজার বাড়ছে দ্রুতগতিতে

0
2454

শিল-নোড়ায় পিষে প্রস্তুত করা মসলা এবং প্যাকেটজাত মসলা দিয়ে তৈরি খাবারের স্বাদের তারতম্য হওয়ার তর্কটা পুরনো। তবে সময় ও পরিশ্রম সাশ্রয় করে দ্রুত রান্নার জন্য প্যাকেট মসলার বিকল্প এ সময়টায় রাঁধুনিরা চিন্তাই করেন না।

 

তাই প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডেড গুঁড়া মসলার বাজার। খাবারে স্বাদ ও ঘ্রাণে বৈচিত্র্য আনতে আমদানি করা গরম মসলার চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। সময়ের প্রয়োজনে মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে। সময় নিয়ে হাতে মসলা বাটার সুযোগ অনেকেরই নেই। তাই প্যাকেটজাত গুঁড়া মসলার বাজার বাড়ছে দ্রুতগতিতে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-বেইজড প্রডাক্ট প্রডিউসারস অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ও গুঁড়া মসলা প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করা দেখা গেছে, প্রতিবছর দেশে প্যাকেটজাত গুঁড়া মসলার বাজার বাড়ছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে। দেশে মসলার বাজারের আকার এখন প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে দেশে প্যাকেটজাত এক হাজার ২০০ কোটি এবং বিদেশ থেকে আমদানি ও খোলা মসলা ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। দেশে প্যাকেটজাত গুঁড়া মসলার বাজারে আধিপত্য ধরে রেখেছে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ব্র্যান্ড ‘রাঁধুনী’। হলুদ, মরিচ, ধনিয়া এবং জিরা—এই চার ধরনের মসলার ৭৬ শতাংশ বাজার রাঁধুনীর দখলে। এর পরই রয়েছে প্রাণ গুঁড়া মসলা। তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে বিডি ফুডস ও আরকু। এর বাইরে এসিআই পিওর, রয়েল টাইগার, রানীসহ আরো বেশ কিছু ব্র্যান্ডের গুঁড়া মসলা পাওয়া যায়। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের বিপণন বিভাগের প্রধান ইমতিয়াজ ফিরোজ বলেন, ‘একটা সময় মানুষকে আস্ত মসলা কিনে সেগুলো বাজার থেকে ভেঙে আনতে হতো। এ ধরনের মিলের পরিবেশ অনেকেরই পছন্দ নয়। অনেকে বিষয়টিকে ঝামেলাও মনে করে। পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সব মিলিয়েই খোলার বদলে প্রক্রিয়াজাত মসলার দিকে মানুষ ঝুঁকছে।’ স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ রাঁধুনী নামে প্রক্রিয়াজাত গুঁড়া মসলা বাজারে আনে ২০০১ সালে। হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরার পাশাপাশি গরুর মাংসের মসলা, মুরগির মাংসের মসলা, মেজবানি গরুর মাংসের মসলা, হালিম মিক্স ইত্যাদি বাজারজাত করছে তারা। রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। তবে গুঁড়া মসলা রপ্তানিতে শীর্ষে আছে প্রাণ। প্রাণ গুঁড়া মসলা বাজারে আসে ২০০৩ সালে। হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা ছাড়াও আদা ও রসুনের পেস্ট মসলা, কাচ্চি বিরিয়ানি ও তেহারি মসলা, মাংসের মসলা, মুরগির মাংসের মসলা, বোরহানি মসলা, আচারের মসলা, চটপটি মসলা বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাজারে তাদের দখল ১৯ শতাংশ। হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা ছাড়াও কারি পাউডার, তন্দুরি চিকেন মসলা, বিফ কারি মসলা, ফার্মের মুরগির মসলা, খাসির মাংসের মসলা, গরম মসলা, পাঁচফোড়ন ও মাছের মসলা বাজারজাত করছে বিডি ফুডস। এ ছাড়া লালমাই ফুড প্রডাক্টসের আরকু বাজারজাত করছে হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা ছাড়াও আরো বেশ কিছু ধরনের মসলা। রানী ব্র্যান্ড নামে গুঁড়া মসলা বিক্রি করছে পারটেক্স স্টার গ্রুপ। মসলার বাজারে এখন অনেক ধরনের বৈচিত্র্য এসেছে। গুঁড়ার পাশাপাশি পেস্ট মসলাও বাজারজাত করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-বেইজড প্রডাক্ট প্রডিউসারস অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাজী গোলাম আলী সুমন বলেন, ‘গুঁড়া মসলার পাশাপাশি আস্ত মসলার প্যাকেটের চাহিদাও বাড়ছে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ মুক্ত রেখে এই মসলাগুলো প্রক্রিয়াজাত করে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ আগের তুলনায় সচেতন হওয়ার কারণেই প্রক্রিয়াজাত মসলার বাজার বড় হচ্ছে।’ সুপারশপভিত্তিক গুঁড়া, পেস্টসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার বাজারে ধীরে ধীরে অবস্থান নিচ্ছে কিছু মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (এসএমই)। ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার বাজার তাদের দখলে। লেন্স, পিক অ্যান্ড প্যাক, বেস্ট ও হাইকো, বিটিএমই, আহমেদ পেস্টসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই তালিকায়। হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরার পাশাপাশি কালো গোলমরিচের গুঁড়া, গরম মসলা, দারচিনির গুঁড়া, মরিচের ফাঁকি, আদার গুঁড়া, রসুনের গুঁড়াসহ প্রায় অর্ধশত ধরনের গুঁড়া মসলা সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি আস্ত প্যাকেটজাত মসলাও রয়েছে তাদের।

বেড়েছে উৎপাদন

দেশে ৫০-এরও বেশি ধরনের মসলা ব্যবহার হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আদা, হলুদ, মরিচ, রসুন, পেঁয়াজ, কালিজিরা, গোলমরিচ, জাউন, শলুক, মৌরি, পেস্তাবাদাম, জয়ফল, জয়ত্রি, ভ্যানিলা, লবঙ্গ, ডালফিরিঙ্গি, রাঁধুনী, আলুবোখারা, বিলাতি ধনিয়া, ধনিয়া, চিপস, সাদা এলাচ, কালো এলাচ, দারচিনি, জাফরান, তেজপাতা, জিরা, মেথি, শাহি জিরা, পার্সলে, কাজুবাদাম, পানবিলাস, দইরং, কারিপাতা, পাতা পেঁয়াজ, লেমনগ্রাস, ভাদুরি পাতা, পুদিনা, কিসমিস, অলস্পাইস, শটি, আমআদা, চৈঝাল, একানি ইত্যাদি। বগুড়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশে উৎপাদিত মসলার পরিমাণ ৩৫ লাখ টনেরও বেশি। মোট চাহিদার ৫৮ থেকে ৬০ শতাংশ পূরণ হয় এই দেশীয় উৎপাদনেই। বাকিটা আসে বিদেশ থেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে ২২ লাখ ৯৩ হাজার টন মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই উৎপাদন বেড়ে হয়েছিল ৩৫ লাখ টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৮ কোটি

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four − 4 =