আলোকিত ভবিষ্যৎ গঠনে অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাঃ

0
724

লেখকঃ- এ ই ইসলাম,
চেয়ারম্যানঃ- জাতীয় ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটি
বিশেষ প্রতিনিধিঃ- বাংলাদেশ আমেরিকান প্রেস সার্ভিস

 

বিভিন্ন বিজ্ঞানী শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, শিক্ষা হলো আচরনের ইতিবাচক স্থায়ী পরিবর্তন। বার্ন্ট্রার্ড রাসেল (বার্ন্ট্রার্ড আর্থার উইলিয়াম রাসেল) বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর উত্তম চরিত্র গঠন। মহারথি সক্রেটিস বলেছেন শিক্ষার উদ্দেশ্য হল সত্যের লালন ও মিথ্যার অপসারন। একমাত্র পরিপূর্ন শিক্ষা শুধু জ্ঞানের স্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, জ্ঞান অর্জনের পর তা কার্যকরী ভাবে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগই হলো শিক্ষা। একজন শিক্ষক শুধুই শিক্ষক নন তিনি একজন প্রশিক্ষকও বটে। শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থীকে পাঠ বুঝিয়ে দিলেই শিক্ষকদের দায়িত্ব শেষ হয় না। পাঠ্য বিষয়ের বাইরে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষার্থীর আচরন নিয়ন্ত্রন করা শিক্ষকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ অর্থে বিদ্যালয়কে সমাজের সংস্করন বলা হয়। অনেক সময় পরিবারের দীর্ঘ দিনের লালিত সংস্কারেও পরিবর্তন হানে শিক্ষকের উপদেশ। হ্যামিলনের বাঁশির মতো সবকিছু ভুলিয়ে দিয়ে ভাবতে শেখায় নতুন কিছু, যা কিছু বাঞ্ছনীয়, মার্জিত ও ইতিবাচক। একজন শিক্ষক যখন শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থীদের কোন বাঞ্ছনীয় বিষয় বুঝিয়ে দেন বা শিখিয়ে দেন তখনই তিনি প্রকৃত শিক্ষক। যখন সৃজনশীলতা, সততা, দক্ষতা, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, শিষ্টাচার, দেশপ্রেম, নেতৃত্ব, কষ্টসহিঞ্চুতা গনতন্ত্রীমনষ্কতা ও পরমত সহিঞ্চুতা ইত্যাদি সহ শিক্ষা ক্রমিক কার্যক্রমের বিষয় গুলো নজরদারিতে রাখেন ও নিয়ন্ত্রন করেন তখন ঐ শিক্ষকই একজন প্রশিক্ষক। এজন্য এখানে একটি কথা উল্লেখ করা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট তার পুত্রের শিক্ষকের কাছে লিখেছিলেন তাকে শেখাবেন পাচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান। তার প্রতি সদয় আচরন করবেন কিন্তু সোহাগ নয় কেননা আগুনে পুড়ে ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তানের অধের্য্য হওয়ার যেন সাহস না থাকে সুতরাং, পাঠ্য পুস্তক বাহিরেও শিক্ষকের নিকট থেকে শিক্ষার্থীর অনেক কিছু শিখার আছে এবং জ্ঞানের পরিধিও বাড়ানো যায়, সে শিক্ষাটাই হলো যথার্থ। তবে মনে রাখতে হবে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের নজর দারি কোন অবস্থাতেই বাড়াবাড়ি পর্যায় না যায়। বাড়াবাড়ি কিছু ঘটনার কারনে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে শ্রমবিমুখতা স্বার্থপরতা, দুর্নীতি, অনিয়ম। এক্ষেত্রে বলা যায় অনিয়মই এখন নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন স্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা দিবার কল। মাষ্টার এই কারখানার অংশ। সকাল সাড়ে দশটার সময় ঘন্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। কলচলিতে আরম্ভ হয়, মাষ্টারের মুখ চলিতে থাকে। চারটের সময় কারখানা বন্ধ হয়। মাষ্টার কলও তার মুখ বন্ধ করেন। তবু মানুষের কাছ হইতে মানুষ যাহা পায় কলের কাছ হইতে তাহা পাইতে পারে না। কল সম্মুখে উপস্থিত করে, কিন্তু দান করে না। তাহা তেল দিতে পারে কিন্তু আলো জ্বালাইবার সাধ্য তাহার নাই। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, আজও আমরা ছাত্র-শিক্ষক অভিভাবক এমন কি রাষ্ট্র এ বিষয়টি উপলব্দি করিতে পারিনি। দক্ষ মানবসম্পদ ও সুনাগরিকতা সম্পন্ন সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য এ সত্যটি উপলব্দি করা উচিত। আর অভিবাবক, বাবা, মাকে এমন হওয়া উচিত সন্তানের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরন অব্যহত রাখা। এখানে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের একটি উক্তি উল্লেখ করলাম। আমাকে এজন শিক্ষিত মা দাও,
আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 + four =