ঢাকা শহরে সমস্যায় ভাড়াটিয়ারা

0
466

কর্মসংস্থানের সিংহভাগ রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ায় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত কাজের সন্ধানে রাজধানীমুখী হচ্ছেন। প্রতিদিনই কর্মসংস্থান বা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঢাকায় আসছেন মানুষ।

 

আর এসব মানুষের প্রায় ৮০ শতাংশই ঢাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ফলে বাসার চাহিদা থাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বাড়িওয়ালারা তাদের মন মত বাড়ি ভাড়ার বোঝা চাপিয়ে দেন ভাড়াটিয়াদের কাঁধে। কোথাও যেন জবাবদিহিতা নেই। ইংরেজি বছর শেষে নতুন বছর শুরু হয়েছে। বছর শেষ হওয়া সাথে সাথে বাড়িওয়ালারাও বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের বাসা ভাড়া। লাগামহীনভাবে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজধানী ঢাকার সাধারণ মানুষ। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চ মধ্যবিত্ত সবাই বাড়ি ভাড়ার এ পাগলা ঘোড়ার কাছে অসহায়। প্রত্যেক বছরের শুরুতেই বর্ধিত বাড়ি ভাড়ার বোঝা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন রাজধানীর এসব অসহায় ভাড়াটিয়ারা। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন শামিম আহমেদ সোহাগ। বসবাস করেন রাজধানীর মালিবাগের একটি ভাড়া বাসায়। প্রতিমাসে তাকে ভাড়া বাবদ দিতে হয় প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টাকা। যার মধ্যে শুধু বাড়ি ভাড়া ১৪ হাজার টাকা। এছাড়া গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ আনুসঙ্গিক বিল রয়েছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে তার বেতনের অর্ধেকের বেশি অংশ মাসের শুরুতে বাড়ি ভাড়া বাবদ বাসা মালিকের হাতে তুলে দিতে হয়। এ সমস্যা শুধু শামিম আহমেদ সোহাগের নয়, রাজধানীতে বসবাসকারী বেশিরভাগ ভাড়াটিয়াদের মাসের শুরুতে বেতনের বা আয়ের সিংহভাগ বাসা মালিকদের হাতে তুলে দিতে হয়। লাগামহীন বাড়ি ভাড়ার কারণে বিপর্যস্ত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। রাজধানীর বনশ্রীতে দুই রুমের একটি বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী আহমেদ তাহের হাসিব। তিনি বলেন, মাসের বেতন যা পাই তার অর্ধেকের বেশি মাসের শুরুতেই বাসা মালিকের হাতে তুলে দিতে হয়। প্রতি বছরই ভাড়া বেড়ে চলছে। রাজধানীতে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন, কিন্তু অল্প সংখ্যক বাসা মালিকের কাছে তারা জিম্মি। তিনি আরও বলেন, আমার মত একজন সাধারণ মানুষ প্রায় ৩০ হাজার টাকা পাই। যার মধ্যে বাসা ভাড়া ১৪ হাজার আর গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল মিলে ১৬ হাজার টাকা পড়ে। বাকি ১৪ হাজার টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। যার মধ্যে খাওয়া-দাওয়া, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, চিকিৎসা সবই করতে হয়। সরকারের উচিত এ বিশাল সংখ্যক মানুষের কথা বিবেচন করে বাসা ভাড়া আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪শ’ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২শ’ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। অন্য এক জরিপ থেকে জানা যায়, ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ ভাগ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক, ১২ ভাগ আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাড়ি ভাড়া খাতে। এছাড়া ৪ ভাগ ভাড়াটিয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। প্রতি বছর জানুয়ারি এলেই ভাড়া বৃদ্ধির খড়গ নেমে আসে ভাড়াটিয়াদের কাঁধে। অনেক বাড়িওয়ালাই ইতোমধ্যে জানুয়ারি থেকে ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু ১৯৯১ সালের বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, দুই বছর আগে ভাড়া বাড়ানো যায় না। যাবে না জামানত নেওয়াও। এর জন্য ভাড়াটিয়া ও মালিকপক্ষকে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। ১৯৯১ সালের বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭ ধারা মতে, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক ভাড়া কোনোভাবেই আদায়যোগ্য হবে না। কিন্তু রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বিড়ম্বনা নিত্য-নৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই ভাড়া বাড়ানো, বাড়িওয়ালাদের দাপট বা স্বেচ্ছাচারিতা সব মিলে অসহায় এ শহরের ভাড়া বাসার বাসিন্দারা। এ বিষয়ে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, রাজধানীতে লাগামহীনভাবে বাসা ভাড়া বৃদ্ধি রোধে প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ। প্রতি বছরই ভাড়া বৃদ্ধি করে চলেছে বাসার মালিকরা। তাদের আচরণের কাছে অসহায় হয়ে আছেন ভাড়াটিয়ারা। এমন সমস্যা সমাধানে আইন ও বিধি যথোপযোগী করে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জাতাকলে চ্যাপ্টা হওয়া এসব ভাড়াটিয়াদের সমস্যা সমাধানে সিটি কর্পোরেশনকে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। দীর্ঘ দিন ধরে চলা আসা এ সমস্যার সমাধান এখনই না করা গেলে আগামীতে আরও অসহায় হয়ে পড়বে এসব ভাড়াটিয়ারা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 + fifteen =