Site icon Aparadh Bichitra

সাতক্ষীরার মানুষ ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুঁকিতে

মারাত্মক আর্সেনিক ঝুঁকিতে পড়েছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা। সুপেয় খাবার পানির সংকটে আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের কারণে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ বছরে একই পরিবারের চারজনসহ অন্তত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্য সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, তালা উপজেলার কৃষ্ণকাটি গ্রামের জালাল মোড়ল দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত। যা বর্তমানে ক্যান্সারে রূপান্তর হয়েছে। তার ফুফু শরভানু বিবি, পিতা আনসার মোড়ল, বড় ভাই আলাউদ্দীন মোড়ল ও ভাই সালাউদ্দীন মোড়লসহ গত ১৫ বছরে অন্তত ১৩ জন আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও আর্সেনিকে আক্রান্ত। একই সাথে ওই গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। এছাড়া তালা উপজেলার তালা সদর, খেশরা, খলিশখালী ও জালালপুর ইউনিয়নে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েলের সংখ্যা সর্বাধিক বলে জানা গেছে। সবমিলিয়ে উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে আর্সেনিক ঝুঁকিতে। কৃষ্ণকাটি গ্রামের সাজেদা বেগম জানান, তিনি নিজেই আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত। তার বিয়ের পর স্বামীর বাড়ির লোকজন যখন জানতে পারে সে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত, তখন তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, তাদের এলাকার আলাউদ্দিন, সালউদ্দিন, মুনছুর রহমান মোড়ল, শাহানারা বেগম, শরুপজান বিবি, সোনাবান বিবি, সোহরাব মোড়ল, ইয়াছিন মোড়ল, সরবানু বিবি, ছবেদ মোড়ল, ফকির মোড়ল ও জবেদ আলী মোড়লসহ অনেকেই আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের বাড়িতে কোন আত্মীয়-স্বজন আসে না এবং তারাও কারো বাড়িতে যেতে পারেন না বলে জানান তিনি। সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা নিরীক্ষার কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। এজন্য মানুষ অহরহ আর্সেনিক যুক্ত পানি খাওয়াসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে এনজিও কর্মীরা এলাকা পরিদর্শন ও জরিপ করলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তালার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, কৃষ্ণকাটি গ্রামে একই পরিবারের চারজনসহ অনেকেই আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাজীব সরদার জানান, এই এলাকায় আর্সেনিকের  প্রকোপ রয়েছে। কিন্তু সচরাচার কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন না। ডায়াগনসিসের মাধ্যমে আর্সেনিকোসিসের চিকিৎসা না করালে তা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। একবার কোন মানুষের শরীরে আর্সেনিকোসিস হলে তা আস্তে আস্তে সারা শরীরে চকচক দাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভাল হওয়ার লক্ষণ খুবই কম থাকে। তালা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বলেন, আমরা আর্সেনিক ঝুঁকিতে থাকা গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছি। আর্সেনিক ঝুঁকির বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।