চাকুরীর নামে ৭শ লোকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ভুয়া প্রতিষ্ঠান

0
597

অবি ডেস্কঃ চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি সিআইডির হাতে গ্রেফতার ১৩ জন। ভালো বেতনের চাকরি দেওয়া হবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে। শিক্ষাগত যোগ্যতার বিশেষ দরকার নেই। যে যত বেশি টাকা জমা দিয়ে ‘ভর্তি’ হবে, তার বেতন তত বেশি। এ চাকরিতে উন্নতির পথ প্রশস্ত। পরিশ্রম করলে অল্পদিনেই দুই-তিন লাখ টাকা বেতন পাওয়া যাবে। বেকার যুবকদের সামনে এমন প্রলোভনের মুলো ঝুলিয়ে দিয়েছিল ‘এক্সিলেন্ট ট্রেড মার্কেটিং লিমিটেড’। এভাবে সরলপ্রাণ চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই প্রতারক চক্রের ১৩ জনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে অজানা অনেক তথ্য। তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে একেকজনের কাছ থেকে ২২ হাজার থেকে এক লাখ ২৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এরকম নেওয়া হয়েছে অন্তত ৭০০ জনের কাছ থেকে।

 

সিআইডির পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতাররা অনেকদিন ধরে বিভিন্ন নামে একই ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। এর আগে তারা ‘উইনেস’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান খুলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পাঁচজন এরই মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আরও ১৬০ জন সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে জবানবন্দি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

ভুক্তভোগীদের একজন ফরিদপুরের নগরকান্দার শ্রীবাস পাল জানান, ২০১৬ সালে ছাত্রাবস্থায় একই মেসে থাকার সুবাদে শিমুল মোল্লার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের অক্টোবরে শিমুল তাকে ফোন করেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে জানান, তিনি একটি ভালো চাকরি করছেন; শ্রীবাস চাইলে তাকেও চাকরি পাইয়ে দিতে পারেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান শ্রীবাস তখন হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছিলেন। তিনি রাজি হলে ২৬ অক্টোবর ঢাকার একটি হোটেলে ডেকে নিয়ে তার ইন্টারভিউ নেন শিমুলের কথিত ‘বস’ নূর আলম। পরে জানানো হয়, ৪০ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে হবে। এটা জামানত হিসেবে নেওয়া হচ্ছে, যা ছয় মাস পর ফেরত দেওয়া হবে। অত টাকা শ্রীবাসের পক্ষে দেওয়া কঠিন হলেও শিমুলের নানারকম প্রলোভনে তিনি রাজি হন। পরে তার কৃষক বাবা জমি বিক্রি করে ওই টাকার জোগান দেন। তার আশা ছিল, ছেলে চাকরি করে একদিন অনেক জমি কিনতে পারবে; সংসারে ফিরবে সুদিন। কিন্তু ‘চাকরি’তে যোগ দেওয়ার কয়েকদিন পর থেকেই শ্রীবাস বুঝতে পারেন, কোথাও ঝামেলা আছে। কারণ, চাকরির কথা বলা হলেও তাকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি।

পরে বলা হয়, ১৭ দিনের ট্রেনিং শেষে কাজ দেওয়া হবে। সেই ট্রেনিংয়ে মূলত তাকেসহ অন্যদের শেখানো হয়, কীভাবে ছলচাতুরি করে চাকরি দেওয়ার নামে আরও মানুষকে প্রতিষ্ঠানের সদস্য করতে হবে। এটাও বলা হয়, প্রথম ধাপেই প্রত্যেককে অন্তত দুজন করে সদস্য আনতে হবে। এর মধ্যে প্রতারকদের মানসিক চাপ ও মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে ভাই চন্দন পালকেও সদস্য করেন শ্রীবাস। তার কাছ থেকে ২৬ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন, সেখানে বেতনের কোনো ব্যাপার নেই। নতুন সদস্য নিয়ে এলে কমিশন হিসেবে তিন হাজার টাকা করে পাবেন। এসব জেনে শ্রীবাস আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি টাকা ফেরত চাইলে বলা হয়, ছয় মাস চাকরি না করলে কোনো টাকা দেবেন না তারা। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে প্রতারকরা ধরা পড়েন। কিন্তু টাকা ফেরত পাননি শ্রীবাস ও চন্দন। এখন তারা প্রচণ্ড কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এমনকি হতাশ ও বিপর্যস্ত শ্রীবাস আত্মহত্যার চেষ্টাও চালান একদিন।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, এক্সিলেন্ট ট্রেড মার্কেটিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি কয়েক মাস আগে চালু করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে অন্তত ২০০ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে জসীম উদ্দিনের এক লাখ ২৭ হাজার, জাহিদুল ইসলামের ৪৩ হাজার ৫০০ এবং মইন ও আল আমিনের কাছ থেকে মোট ৬১ হাজার টাকা নেন প্রতারকরা। তারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে একই চক্রের আরেক প্রতিষ্ঠান ‘উইনেসে’র মাধ্যমে প্রতারিত হন পাঁচ শতাধিক মানুষ।

সিআইডি সূত্র জানায়, চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণায় জড়িত এই চক্রের ১৩ সদস্যকে গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর বারিধারার নতুন বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রিমান্ডে নেওয়া হয় তাদের সাতজনকে। তারা হলেন আশরাফুল ইসলাম, আল আমিন মন্ডল রতন, উজ্জ্বল হোসেন, আবদুল মমিন, শাহিন আলম, নূর আলম সিদ্দিকী ও মনিরুজ্জামান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার বিষয়ে স্বীকার করলেও আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। এ মামলার পলাতক পাঁচ আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × five =