Site icon Aparadh Bichitra

৮০ বছরের বৃদ্ধা বয়স্কভাতা বঞ্চিত

অবি ডেস্কঃ টাকায় দিলেই পাওয়া যায় বয়স্ক-বিধবা ভাতার কার্ড। ‘মোরা টাহাও দিতে পারি না, ভাতার কার্ডও পাই না। বুড়া অইছি, বয়স এহন ৮০। তাই মানুষের ঘরে-দুয়ারে ঘুরে ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়া জীবনটা বাঁচাই।’ এভাবে তাঁর কষ্টের কথাগুলো জানালেন বয়স্কভাতাবঞ্চিত বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের বিধবা বৃদ্ধা সোনাবরু বিবি।

 

অসহায় বিধবা ও অসচ্ছল বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সরকারিভাবে ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও বরগুনার বেতাগীতে তাঁদের অনেকেই তা পাচ্ছেন না। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভাতাভোগী ও ভাতাবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনপ্রতিনিধিদের টাকা না দিলে বিধবা ও বয়স্কভাতার কার্ড পাওয়া যায় না। ফলে সরকারের খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রকল্পের বাইরে থাকছে অতিদরিদ্র ও অসহায় মানুষ। বাড়ছে ভিক্ষুক। মুখ থুবড়ে পড়ছে ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প।

ভাতাবঞ্চিত কয়েকজন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের (মেম্বার) কাছে ভাতার জন্য ঘুরে ঘুরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভাতাবঞ্চিতরা। ভাতাবঞ্চিতদের অনেকেই আছেন যাঁরা একদিন ভিক্ষা না করলে তাঁদের অর্ধাহারে বা অনাহারে থাকতে হয়। তবু তারা ভাতা পাওয়ার আশ্বাসও পাননি। ওই সব জনপ্রতিনিধির একটাই কথা, অফিসের খরচ তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা দেওয়া হলে ভাতার কার্ডে নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিবিচিনি ইউনিয়নের ভাতাবঞ্চিত ছকিনা (৭২) দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। হোসনাবাদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিধবা সোনাবরু বিবি অভিযোগ করেন, স্থানীয় মেম্বার টাকা ছাড়া ভাতার কার্ড দেন না। তাঁর কাছে তিনি তিন হাজার টাকা চান। তবে সংশ্লিষ্ট মেম্বার বলেন, ‘তিনি বিধবা, কোনো ভাতা পান না এবং তাঁর সন্তানরাও তাঁর খোঁজখবর নেন না সত্যি। কিন্তু তিনি আর্থিকভাবে ভালো আছেন। তাঁর ছেলেকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চালের নাম দিয়েছি।’ টাকা চাওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন মেম্বার।

অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তাঁরা প্রতি নামে (বয়স্ক ও বিধবাভাতা) খরচ বাবদ তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। এ টাকা থেকে সমাজসেবা অফিসে প্রতি নাম বাবদ এক হাজার টাকা করে দিতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নিয়ে থাকেন প্রতি নাম বাবদ ৫০০ টাকা। বাকি টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ হয়।

ভাতা নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. মিজান সালাউদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা অভিযোগ করছেন, এসবই তাঁদের মনগড়া।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব আহসান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া সংবাদকর্মীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’