তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘দেবী’ টেলিভিশন প্রিমিয়ার করা হউক

2
785

গত ১৯ অক্টোবর ২০১৮ থেকে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও জয়া আহসান প্রযোজিত ‘দেবী’’-র প্রদর্শনী শুরু হলেও ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ও এর বিধিমালার এই সুস্পষ্ট নির্দেশনাগুলো মানা হয়নি। শুধু তাই নয়, সরাসরি একটি বহুজাতিক কোম্পানির সিগারেট ব্যবহার করতে দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রটিতে বহুবার ধূমপানের দৃশ্য এবং নিজস্ব মনগড়া সর্তকবাণী ব্যবহার করা হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকার পরও এবার আগামী ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারীতে মাছরাঙ্গা স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ও বায়োস্কোপ অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ‘দেবী’ চলচ্চিত্রের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে আজ ১০ ফেব্রুয়ারী, বেলা ১১ টায় জহুর হোসেন চৌধুরী হল, জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো ।

 

প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রির্সাস্ -এর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের উপদেষ্টা মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। প্রধান অতিথি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে, তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন না করে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘দেবী’ টেলিভিশন প্রিমিয়ার করা হউক এবং নতুন প্রজন্ম ও যুব সমাজকে ধূমপান থেকে রক্ষা করুন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫-এর ৫(ঙ) ধারায় ‘বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত সিনেমা, নাটক এবং প্রামাণ্যচিত্রে ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’ তবে কাহিনীর প্রয়োজনে এমন কোন দৃশ্য অন্তর্ভূক্ত করা হলে, সেক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সতর্কীকরণ বার্তা জুড়ে দেয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিধিমালার ৫(ক) বলছে, ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শনকালে পর্দার মাঝখানে পর্দার আকারের অন্তত এক-পঞ্চমাংশ স্থান জুড়িয়া কালো জমিনের ওপর সাদা অক্ষরে বাংলা ভাষায় ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী প্রদর্শন করিতে হইবে এবং উক্তরূপ দৃশ্য যতক্ষণ চলিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সতর্কবাণী প্রদর্শন অব্যাহত রাখিতে হইবে।’ সিনেমা প্রদর্শনকালেও বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে। বিধিমালার ৫(খ) অনুযায়ী, ‘টেলিভিশনে প্রচারিত সিনেমার ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য রহিয়াছে এইরূপ অংশ দুইটি বিজ্ঞাপন বিরতির মাঝখানে প্রচারের ক্ষেত্রে প্রথম বিজ্ঞাপন বিরতির পর অর্থাৎ উক্ত অংশ আরম্ভ হইবার পূর্বে এবং দ্বিতীয় বিজ্ঞাপন বিরতির পূর্বে অর্থাৎ উক্ত অংশ শেষ হইবার পর সম্পূর্ণ পর্দা জুড়িয়া কালো জমিনের ওপর সাদা অক্ষরে বাংলা ভাষায় ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী অন্যূন ১০ (দশ) সেকেন্ড সময় ধরিয়া প্রদর্শন করিতে হইবে।’ বিধিমালার ৫(গ) অনুযায়ী, ‘প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য রহিয়াছে এইরূপ সিনেমা আরম্ভ হইবার পূর্বে, বিরতির পূর্বে ও পরে এবং সিনেমা প্রদর্শনের শেষে অন্যূন ২০ (বিশ) সেকেন্ড সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ পর্দা জুড়িয়া ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী বাংলা ভাষায় প্রদর্শন করিতে হইবে।’ ‘কোন ব্যাক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদ- বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-ণীয় হবে এবং উক্ত ব্যাক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে উক্ত দ-ের দ্বিগুণ হারে দ-ণীয় হবেন।’ ‘দেবী’ সিনেমায় মিসির আলির যেমন চিত্রায়ন হয়েছে, তেমনটা মিসির আলির চরিত্র অনুসরণ করা হলে অসংখ্য কিশোর ও তরুণভক্তরা ধূমপানকে একটি অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবে ধরে নিতে পারেন, যা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যকে চরম ঝুঁকিতে ফেলবে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত জাতি গড়ার সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে থাকা বাংলাদেশের এখনই দরকার এই বিষয়ে সচেতন হওয়া। ‘দেবী’ চলচ্চিত্রটি আইন মেনে প্রদর্শনে বাধ্য করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সিনেমা, নাটক ও প্রামাণ্যচিত্রে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য বর্জনের দাবিতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, ব্যুরো অব ইকনোমিক রিসার্চ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, নাটাব, প্রত্যাশা, টিসিআরসি, তাবিনাজ, সুপ্র, বিটা, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, বিসিসিপি, এইড ফাউন্ডেশন, প্রজ্ঞাসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন । মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন অধ্যাপক ডা: সোহেল রেজা চৌধুরী, এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: মোখলেছুর রহমান। আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রতাশার মো: হেলাল আহমেদ, টোব্যাকো কন্ট্রোল ও রিস্সা সেল এর বজলুর রহমান, তামাক বিরোধী নারী জোটের (তাবিনাজ) এর প্রকল্প সমন্বয়কারী সাইদা আক্তার, প্রজ্ঞার ডিরেক্টর মো: মনোয়ার হোসনে সহ অনেকে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + 20 =