আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, কোন পথে হাটবে জনগণ?

0
1000
ফয়েজ আহমেদ: আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগকে। সেই দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন না করা ও প্রার্থী বাছাইয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা। ফলে তৃণমূল, জেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ শুরু হয়েছে,তাহাতে আওয়ামী লীগের তৃনমুলের ত্যাগী নেতা কর্মী ও সমর্থথকরা অনেকটা হতাশ।  প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। যানাগেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ প্রায় কয়েক শত। অনেক উপজেলা থেকে একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে।উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলায় চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্র।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘দলের গঠনতন্ত্রের ২৮(৪) ধারা মোতাবেক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের স্বাক্ষরে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে একক প্রার্থী অথবা অনধিক ৩ জনের একটি প্রার্থী তালিকা ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।’ তালিকার সঙ্গে প্রার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও পাঠাতে বলা হয় ওই চিঠিতে।উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চলতি সপ্তাহের সোমবার এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মঙ্গলবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। মনোনয় ফরম বিতরণ শুরুর পর হঠাৎ মনোনয়ন উন্মুক্ত ঘোষনা করে আওয়ামী লীগ। একইসাথে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশনা দেন, মনোনয়নের সুপারিশ নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। তার পরপরই অভিযোগ আসতে থাকে তৃণমূল থেকে। তথ্য সুত্র বাংলাদেশ জার্নানালের।সুত্র মকমতে জানাযায় পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী তালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে ইশারত আলীর নাম। তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় এমপির ঘনিষ্ঠজন। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন এই ইশারত। এমনকি গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলের বিরুদ্ধে কাজ করার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃতও হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইশারত আলীর ছোট ভাই আবু হানিফ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে তার ভাইয়ের পক্ষে ধানের শীষে ভোট চান ইশারত। এখন তাকেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে নাম পাঠানোর ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।বগুড়ার কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোশফিকুর রহমান কাজল অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তিনি জানান, তৃণমূল থেকে আমার নাম জেলাতে পাঠানোর পরে কেন্দ্রে এসে দেখি নাম নেই। পরে খবর নিয়ে জানলাম, জেলা আওয়ামী লীগ একজনের নাম পাঠিয়েছে। এখানে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে আমি মনোনয়নের দাবিদার। মনোনয়ন পাই বা না পাই, কেন্দ্র পর্যন্ত নাম আসবে না কেন? উপজেলায় বর্ধিত সভা করে তার আমার নামই পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তা বাদ দিয়ে অন্যজনের নাম কেন্দ্রে পাঠায় জেলা আওয়ামী লীগ। এদিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে তিনজনের নাম সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। তালিকায় প্রথম যার নাম এসেছে, তিনি স্থানীয় এমপি শাহজাহান মিয়ার ছেলে তারিকুজ্জামান মনি। তালিকার দুই নম্বর প্রার্থী এমপির ভাইয়ের ছেলে আবুল কালাম মৃধা। এই তালিকায় তিন নম্বর প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নাম রাখা হয়েছে।  জেলার দশমিনা উপজেলায় ঘটে আরো মজার ঘটনা। এখান থেকে তৃনমুল নেতা কর্মীদের কাউন্সিলের দাবীকে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে  এক নাম্বারে যার নাম পাঠানো হয়েছে, বার্ধক্যজনিত কারনে  তার নির্বাচনই করার কথা না। তিনি উপজেলা আ,লীগের সভভাপতি। দুই নাম্বারে  রয়েছেন দলের সাধারন সম্পাদক। তিনে রাখা হয় উপজেলায় সম্পুর্ন নতুনমুখ প্রার্থীর নাম। চারে দেয়া হয় আরো একজনের নাম, যিনি গত নির্বাচনে সাবেক এমপি সাহেবের সমর্থন ও দলীয় প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে হেরে যান। এমপির প্রতি ক্ষোভের ফসল হিসেবে চেয়ারম্যান হন শওকাত।  অথচ আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়েও বঞ্চিত করা হয় দুই দুই বারের বিপুল ভোটে নির্বাচিত ত্যাগী কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে ক্ষ্যাত, জেলা আ,লীগের সদস্য এ্যাড,ইকবাল মাহামুদ লিটনকে। দশমিনার তৃনমুলের নেতা কর্মীদের দাবী,এভাবে চলতে থাকলে, দলে নন কোয়ালিফাই আপো রাজনিতী দানা বাধবে।তাতে এক সময় এরাই দলের পতন ঘটাতে মুখ্য ভুমিকা রাখতে পারে বলে মত তাদের। তাই দশমিনাবাসীর প্রানের দাবী,লিটনকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রদান করে এই অপো রাজনিতীর হাত থেকে আওয়ামীলীগ দুর্গক্ষ্যাত দশমিনাকে রক্ষা করুন। অন্যথায় এখানের কোন্দোল আরো বেগবান হবে বলে ধারনা অভিজ্ঞ মহলের। তাই তৃণমূলের অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন,  তৃণমূল থেকে নাম পাঠানোর সময় কেউ কোনো অনিয়ম করল কিনা, সেটা দেখবে আমাদের মনোনয়ন বোর্ড। সঠিকভাবে নাম না এলে দলের জরিপ আছে। সব মিলিয়ে আমরা মনোনয়ন দেব। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ড বসবে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে যাচাই-বাছাই করে জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই আমরা উপজেলায় মনোনয়ন দেব।এদিকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। বিকাল সাড়ে চারটায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী চূড়ান্ত হতে পারে এই বৈঠকে। তবে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা পরদিন শনিবারও বসবে। এবার পাঁচ ধাপে দেশের ৪৯২টি উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহনের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহন করা হবে। পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট হবে ১৮ জুন।
Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 5 =