রহিম রেজা, ঝালকাঠি থেকে: ঝালকাঠির রাজাপুরে বিশখালী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ ইটের পাজা। বিশখালী নদীতে জেগে ওঠা চরের উর্বর মাটির প্রথম স্তর কেটে তা পাজার তপ্ত আগুনে পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে নিম্নমানের ইট।
এতে যেমন কমছে ফসলি জমি, তেমনি পাজায় বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ পোড়ানো ফলে উজাড় হচ্ছে বন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সুবিধাজনক স্থানগুলোতে অভিযান পরিচালিত হলেও প্রত্যন্ত ও তুলনামূলক দুর্গম স্থানে অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় থামছেনা অবৈধ এ ব্যবসা। আর এই সুজোগে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক অবৈধ ইটের পাজা। সরেজমিন উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের মানকি-সুন্দর গ্রামে বিশখালী নদী চর ঘুরে অবৈধ ইটের পাজার এমন রমরমা বাণিজ্যের চিত্র দেখা গেছে। মানকি-সুন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই নদীর চর দখল করে দুইটি বড় ইটের পাজা তৈরি করেছেন আব্দুল মন্নান ওরফে বালু মন্নান ও মো. হাবিবুর রহমান নামে স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা প্রতিদিন শ্রমিক দিয়ে চরের মাটি কেটে তৈরি করছেন ইট। মাটির উর্বর প্রথম স্তর কেটে নেওয়ায় এবং ফসজি জমির পাশেই পাজার তপ্ত আগুনের কারণে সফল ফলাতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকেরা। আমন মৌসুম শেষ হওয়ার পর সেখানে শীতকালিন সবজির আবাদ করতে পারেনি কৃষকেরা। এ ছাড়া ইটের পাজায় পোড়ানোর জন্য জড়ো করা হয়েছে শত শত মন কাঠ। ফলে উজাড় হচ্ছে আশপাশে বনাঞ্চলের গাছ। ইটের পাজায় পোড়ানোর ফলে ইতোমধ্যেই বিলিন হয়ে গেছে খেজুর গাছ। এতে খেজুরের মিষ্টি রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানকি-সুন্দর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানায়, প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্রের ওপর এমন অত্যাচার দেখেও কিছু বলতে পারছিনা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনে থাকা এক শ্রেনির অসাধু ব্যক্তিদের সাথে মিলে নামে বেনামে এই অবৈধ ব্যবসার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই প্রতিবাদ করিনা, তাতে হয়রানি হওয়ার ভয় রয়েছে। শুধু মানকি-সুন্দর গ্রাম নয়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে তিন শতাধিক ইটের পাজার সন্ধান মিলেছে। এর বেশিরভাগ পাজাই নদীর চর ও ফসলি জমির পাশে অবস্থিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পাজার মালিক বলেন, পুলিশ ও প্রশাসনের নিম্ন পর্যায়ের কিছু কর্মচারি মাঝে মধ্যে এসে কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নিয়ে যায়। তবে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট যখন অভিযানে আসে তখন কোন ছাড় দেয় না। এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা বেগম পারুল বলেন, ‘অবৈধ ইটের পাজা বন্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত বুধবার নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে চারটি পাজায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া দমকল বাহিনীর সহায়তা নিয়ে পাজার আগুন নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ধরণের অভিযান চলবে।’