কালকিনি পৌরমেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ

0
651

স্টাফ রিপোর্টার: মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্প গুলোর বরাদ্দকৃত টাকা কাজ না করে আত্মসাৎ, শালিসের নামে নিরব চাঁদাবাজি, জমিদখল, টাকার বিনিময়ে বিএনপি-জামায়তের নেতাকর্মীদের শেল্টার প্রদান সহ মাদকব্যবসায়ীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া তার রুটিন মাফিক কাজ। মেয়র হওয়ার আগে তার সহায় সম্পদ বলতে তেমন কিছুই ছিলো না, কিন্তু এখন তিনি শত কোটি টাকার মালিক। মেয়র হয়েই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় পৌরসভার ৮জন কাউন্সিলর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রকাশ করেন। ফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের ঢাকা বিভাগের পরিচালক (যুগ্নসচিব) এম ইদ্রিস সিদ্দিকী পৌরসভা আইন ২০০৯ এর ৩৮(৩) ধারা বিধান মতে সকল অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কেন তাকে কালকিনি পৌরসভার মেয়র পদ থেকে অপসারন করা হবে না মর্মে ১০কার্য দিবসের মধ্যে কারন দর্শালোর নোটিশ প্রেরণ করেন। কিন্তু মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদার এখনো রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে। আর ছুটেই চলছে তার দুর্নীতির পাগলা ঘোড়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদারের দুর্নীতির সা¤্রাজ্যে একটি নির্দিষ্ট কমিশনে মাষ্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করে তার পৌরসভার সচিব বাবুল চন্দ্র দাস। আর মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদারকে শেল্টার দেন একজন সাংসদ যার আর্শীবাদে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সচিব বাবুল চন্দ্র দাস দুর্নীতির সমস্ত ফাইল কাগজে কলমে বন্দি করে রাখে। প্রকল্পের কত টাকা কখন কোথায় কিভাবে বরাদ্দ দেয়া হবে তার কোন খবরই কাউন্সিলররা জানেনা। আবার কেউ জানলেও তাকে হুমকি ধমকি দিয়ে বা টাকা পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করা চেষ্টা করা হয়। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে এনায়েত হোসেন হাওলাদারের আর্থিক অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ।মেয়র হিসেবে এনায়েত হোসেন হাওলাদার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই অনিয়ম আর দুনীতি করে রাতা রাতি বনে যান কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক । পৌরসভাকে তিনি মনে করেন আলাদিনের প্রদীপ। ঘষা দিলেই টাকা। এই অগাধ সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার পিছনে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতার সহযোগিতা । যাদেরকে পৌরসভার কিছু কাজ দিয়ে নিজে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে অনিয়ম দুর্নীতির মধ্যে নামে বেনামে পৌসভা থেকে ২০/২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভায় অন্যান্য জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলরদের তোয়াক্কা না করেই নিজের ইচ্ছেমত পৌরসভার টেন্ডার, এডিবির কাজ করিয়েছে। যার কোন নিয়মনিতি মানা হয়নি। ফলে পৌরসভার ৮ জন কাউন্সিলর দীর্ঘদিন উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপির কাছে একেরপর এক অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি।
ফলে ৮ কাউন্সিলর ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের বিভাগিয় কার্যালয় মেয়র এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে অনাস্থাসহ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের ঢাকা বিভাগের পরিচালক (যুগ্নসচিব) এম ইদ্রিস সিদ্দিকী পৌরসভা আইন ২০০৯ এর ৩৮(৩) ধারা বিধান মতে সকল অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কেন তাকে কালকিনি পৌরসভার মেয়র পদ থেকে অপসারন করা হবে না মর্মে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে কারন দর্শালোর নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ প্রাপ্তির পর মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদার মোটা টাকার বিনিময়ে নোটিশ প্রদানকারী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সচিব বাবুল দাসের সহযোগিতায় নোটিশ ফাইলটিকে ধামাচাপা দেন। বাবুল দাসের এক আত্মীয় সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়ের অধীন্যস্ত একজন উপ-সচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। যার সুপারিশে ঐ ফাইলটি ধামাচাপা হয়ে যায় বলে জানা গেছে।
পৌর কাউন্সিলরদের অনাস্থাপত্র সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার মাসিক সভায় কাউন্সিলরদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে মেয়র নিজের ইচ্ছা মাফিক রেজ্যুলেশন লিখে পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত হিসেবে চালানো, প্রতিবাদকারী কাউন্সিলরদের মাসিক ভাতা বন্ধ করা, কোনও রকমের টেন্ডার ছাড়াই পৌরসভার বিভিন্ন কাজ মেয়র তার ভাই, আত্মীয় স্বজন, পছন্দের গুটি কয়েক কাউন্সিলর, নিজস্ব ঠিকাদারকে দিয়ে ইচ্ছামাফিক বিল করে তা পরবর্তী সভায় পাস দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ, ৫৫টি সরকারি প্রকল্প যেনতেনভাবে বাস্তবায়ন দেখিয়ে নিজে লাভবান, কোটেশনের মাধ্যমে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে কাজ বাস্তবায়ন না করেই টাকা উত্তোলনসহ আরও নানা অনিয়ম।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ঘোষালকান্দি মসজিদের পার্শ্বে আরসিসি প্যালাসেডিং ও পাইপ কালভার্ট নির্মাণের জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার ও ঘোষালকান্দি চাতাল রোড থেকে প্রফেসর আবুল হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজের জন্য ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। হৃদয়নন্দী কুমার নদী রাস্তা হতে মুন্সী বাড়ী অভিমূখী রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ ও হৃদয়নন্দী প্রাইমারী স্কুল মসজিদ হতে জাকারিয়ার বাড়ী এবং পাট্টাবুকা লিয়াকতের বাড়ী হতে সোহাগের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। টেকেরহাট কালীবাড়ী রোডস্থ দিলীপ শীলের বাড়ী হতে মনজুরের বাড়ী এবং আবাসিক রোড চৈতন্য কুন্ডুর বাড়ী থেকে আউয়াল মেম্বারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ ও টেকেরহাট আবাসিক রোডস্থ মসজিদ হতে কর্মকার ভবন পর্যন্ত রাস্তা বিটুমিনাস কার্পেটিং দ্বারা উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গোবিন্দপুর মোলস্নাবাড়ী মসজিদ থেকে কামরুজ্জামান সাহেবের বাড়ী এবং ভান্ডারীয়া ব্রীজ রাস্তা হতে আমিন মোলস্নার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন ও মাচারং রোড হাওলাদার বাড়ীর সলিং থেকে মোতাহার মাতুববরের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন বরাদ্দ ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। পশ্চিম রাজৈর অনীল ভৌমিকের বাড়ী হতে কবির মোলস্নার বাড়ী এবং জোনাব আলী রোডের মোতালেব মোলস্নার বাড়ী হতে জাহাঙ্গীর মোলস্নার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং ও পশ্চিম রাজৈর মানোয়ার ফকিরের বাড়ী হতে খলিফা বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বেপারীপাড়া বাইলেন মাখন ঘোষের বাড়ী থেকে দাইপাড়া মসজিদ এবং আজিজুল হকের বাড়ী হয়ে নুরুমদ্দিন মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং ও গণ উন্নয়ন রাস্তা হতে কুন্ডুপাড়া প্রধান সড়ক অভিমূখী রাস্তা সিসিকরণ কাজ ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। আমবাগ মাদ্রাসা থেকে আবুল হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং ও রাজৈর থানা হতে পৌর কবরস্থান অভিমূখী রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ জন্য ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। দক্ষিন রাজৈর দূর্গা মন্দির হতে প্রাইমারী স্কুল অভিমূখী রাস্তা ইটের সলিং ও দক্ষিন রাজৈর দূর্গা মন্দির হতে রতন ডাক্তারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজের জন্য ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। মোলস্নাকান্দি কুদ্দুস আলীর বাড়ী থেকে আববাস আলী এবং সিএন্ডবি রাস্তা থেকে রাজ্জাক খানের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নরারকান্দি আতিয়ার মোলস্নার বাড়ী থেকে মান্নান ফকিরের বাড়ী এবং আমগ্রাম রাস্তা হতে শাখারীকান্দা রাস্তা পর্যন্ত ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তেতুলিয়া ঢালের রোড থেকে চায়না মেম্বারের বাড়ী অভিমূখী রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ ও মোলস্নাকান্দি মাজেদ খার বাড়ী সংলগ্ন কে.জি স্কুলের পিছনে আরসিসি প্যালাসেডিং সহ মাটি ভরাট কাজ ৪ লাখ টাকা। আমগ্রাম মাদ্রাসার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। পশ্চিম রাজৈর ঈদগাহ মাঠ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ ও টেকেরহাট আবাসিক এলাকা কালী মন্দির রোড হতে মহাদেব সাহার বাড়ী অভিমূখী রাস্তার ড্রেন ও সিসিকরণ কাজের জন্য ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। টেকেরহাট চক্ষু হাসপাতাল রোড হতে তালুকদার মঠ হয়ে ইতালিয়া বিল্ডিং পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ ও আলমদস্তার সিএন্ডবি রোড হতে জাহাঙ্গীর সিকদার, আলতাফ মৃধা, সালাম মৃধা, মাসুদ সিকদার ও আশরাফ সিকদারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজের জন্য ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। মজুমদারকান্দি ওহাব সাহেবের বাড়ী থেকে রুমনুয়ারা মাদ্রাসা পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজ ও জুমদারকান্দি বাবুল শেখের বাড়ী থেকে সফিজউদ্দিন মাতুববরের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা ইটের সলিং দ্বারা উন্নয়ন কাজের জন্য ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে দুয়েকটি কাজের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া গেলেও বাকী প্রকল্প গুলোর অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। আবার কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ১৭/১৮ অর্থ বছরের বাজেটে শুধুমাত্র পৌরসভার রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজে অন্তত ১ কোটি ৫০ লাখ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদার তার নিজের মনমতো কাজগুলো করে বরাদ্দের ৭০ শতাংশ (কোটি) টাকা আত্মসাৎ করে সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি ধাপেই মেয়র এরুপ অপকর্ম করে বিধায় পরিষদের অপর কাউন্সিলররা তার প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব এনে তার অপসারন দাবী করে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলররা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা বা কোন তদন্ত কারী সংস্থার লোকজন মেয়র এনায়েতের দুর্নীতি গুলো নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে দিবালোকের মতো পরিস্কার হয়ে দুর্নীতি ধরা পড়বে। কারন কোন প্রকল্পে কতটুকু কাজ করেছে বা কোন প্রকল্পে কাজ না করেই বিল উত্তোলন করেছে তা সরেজমিনে তদন্তে গেলেই উঠে আসবে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর অলিল হাওলাদার বলেন, ‘পৌরমেয়র এনায়েত হোসেন নামেই শুধু মেয়র। তার কর্মকান্ডে আমরা কেউ খুশি না। মেয়র আমাদের সবার চোখের সামনে অনিয়ম করে আসছে। মেয়র ইচ্ছে মতো পৌরসভার সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আমাদের সম্মানি ভাতা পর্যন্ত সে দিচ্ছেন না। এছাড়া তার নানা ধরনের অনিয়ম আমরা প্রমাণসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে পাঠিয়েছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানায়, এনায়েত হোসেন হাওলাদার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নমিনেশন কিনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার উন্নয়নে আসা বরাদ্দের টাকা বিভিন্ন ভূয়া প্রকল্প সাজিয়ে নিজের সিন্ডিকেটের লোকজন দ্বারা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া জমিদখল বানিজ্য, শালিসের আড়ালে নিবর চাঁদাবাজী, নেতাকর্মীদের নিকট পদ বানিজ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার, টাকার বিনিময়ে বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীদের শেল্টার ও মামলায় ফাসানোর হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজী করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চলবে…।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 1 =