“খাদ্যে ভেজাল মুক্ত দেশ-আমাদের স্বপ্ন” জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশনের সেমিনার

1
1532

এস এম মোরশেদ: স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, সুখী-সম্মৃদ্ধশালী ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণ। জাতির জনকের লালিত স্বপ্ন প্রত্যয়ে সুস্থ্য-সবল, মেধাবী ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠি অতিব গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের প্রত্যক্ষ রায় নিয়ে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একটানা তিনবারসহ চতুর্থবারের মতো সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ক্ষমতার ধারাবহিকতা থাকায় শে আজ সম্মৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা ও মননশীলতার সমন্বয় ঘটিয়ে জাতির পিতার আজীবনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

 

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে ক্ষিণ এশিয়ার অনেক শেকে পিছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। যার সুফল পাচ্ছেন দেশের সর্বস্তরের জনগণ।
প্রতিটি মানুষের মানবীয় অধিকার সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা। মানবের প্রাণরক্ষা ও সুস্থ্যজীবনের জন্য বিশুদ্ধ তথা নিরাপদ খাদ্য অপরিহার্য। এক্ষেত্রে খাদ্যমান অতিব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সুস্থ্য-সবল একটি মানবগোষ্ঠি অর্জনের জন্য সঠিক গুনগতমানের খাদ্য উৎপাদন, জনগণের খাদ্যের নিরাপত্তা বিধান, সুষমখাদ্য ও পুষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ জরুরী। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব বিবেচনায় এনে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার স্বাস্থ্যসম্মত, ভেজালমুক্ত ও নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে যুগান্তকারী ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণয়ন করেন। আইনটি ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারী কার্যকর এবং ২ ফেব্রুয়ারী এই আইনের আওতায় একটি জাতীয় বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ২৫ লাখ ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ী ও ১৮টি মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া প্রায় ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধীন প্রায় ১২০টি আইন ও নীতিমালা রয়েছে। ৬৪টি জেলায় ও আটটি বিভাগীয় শহরে ৭৪টি নিরাপদ খাদ্য আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য আইন মেনে চলার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী নানা সংগঠনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিধিমালাগুলো প্রণয়নের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
এছাড়াও খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ষ্ট্যান্ডার্ড টেষ্টিং ইন্সটিটিউড (বিএসটিআই)। এদিকে জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইন্সটিটিউড নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খাদ্যপণ্যে ভেজালযুক্তকে দুর্নীতির সমান অপরাধ উল্লেখ করে সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যে ভেজালরোধে দেশে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিশেষ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। এর শাখা থাকবে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে।
পুষ্টি ও গুনগতমানহীন তথা ভেজালযুক্ত খাদ্য মানবদেহের জন্য অতিকায় ক্ষতিকারক। শিশুর জীর্ণকায় দেহ, বিকলাঙ্গ, স্থুলবুদ্ধি, বুদ্ধি বিকাশে প্রতিবন্ধকতা, মেধাহীনতা, অস্বাভাবিক আচরণ, স্বাভাবিক বেড়ে ওঠতে না পারার মূলে রয়েছে সঠিক পুষ্টিমানসম্মত খাদ্য গ্রহণের অপর্যাপ্ততা। শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে না পারলে একটি সুস্থ্য-
সবল মানবগোষ্ঠি তথা জাতি গঠণ কল্পনা করা অসম্ভব। তাই গুনগত ও সঠিক মানসম্মত তথা ভেজালমুক্ত খাদ্যের নিশ্চয়তা জরুরী। বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করে খাদ্যে ভেজালমুক্ত একটি দেশের স্বপ্ন দেখে জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন।
সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা এই বাংলাদেশ। পুকুর ভরা মাছ, গোয়ালভরা গরু, গোলাভরা ধান কিন্তু এখনও কিন্তু অতিত নয়। তবে তফাত সৃষ্টি হয়ে গেছে গুনগত মানের দিক দিয়ে। পুকুরের মিঠা পানির মাছ তথা পুকুর খাল বিলের প্রাকৃতিক মাছ এখন অনেকটাই অতিত। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গেছে বহু প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। সেখানে চাষের মাছ স্থান করে নিয়েছে। ফলে পুষ্টিগুণের ঘটে গেছে বিশাল তারতম্য। প্রাকৃতিক মাছ থেকে মানবদেহ যে পুষ্টি ও স্বাদ মানুষ আস্বাদন করতো তা চাষের মাছে পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক মাছের অবাধ বিচরণযোগ্য জলাভূমি কেনো হারিয়ে গেলো, প্রাকৃতিক মাছগুলোরই বা কেনো বিলুপ্ত ঘটলো তার কারণ অনুসন্ধান জরুরী। প্রাকৃতিক মাছের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রগুলো আবার পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে সরকার থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।
কৃষকের গোয়ালভরা গরু এখন লেখকের লেখনীতেই টিকে আছে। বাস্তবে নেই। খামারীরা এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরু পালন করে মাংস, ঘি, দুধ আর দুগ্ধজাত খাদ্যের চাহিা মিটাচ্ছে। কৃষকের পালিত গরু আর খামারীদের গরু থেকে প্রাপ্ত আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাদ্যের গুনগতমানের দিক দিয়ে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
কৃষকের গোয়ালভরা ধান এখনও রয়েছে বরং পূর্বেকার তুলনায় পরিমাণে অনেক বেশীই। বেশী ফলনশীল ধান আগের প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ধানের সাথে খাদ্যমানের দিক থেকে এখনো পেরে উঠেনি।
আমাদের আলোচ্য বিষয় “খাদ্যে ভেজালমুক্ত দেশ আমাদের স্বপ্ন”। আমাদের দেশে ভেজালপণ্য এখন একটি জাতীয় সমস্যা। ভেজাল খাদ্যে সয়লাব হয়ে গেছে গোটা দেশ। এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য সরকার থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সাথে সাথে জনসচেতনতার প্রতি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
মানুষের মৌলিক চাহিদার শীর্ষস্থানেই রয়েছে খাদ্য। যে ্রব্য দিয়ে আমরা উরপূর্তীর মাধ্যমে মানবদেহে পুষ্টিসাধন ও শরীর গঠণ করে তা খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে খাদ্যমান সঠিক মাত্রায় থাকা জরুরী।
আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা দীর্ঘকাল থেকেই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। এই প্রবণতা ভারত উপমহাদেশের অপসংস্কৃতির একটা অংশবিশেষ, যার ধারাবহিকতা এখনো রক্ষা করে চলেছে আমারে দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা। ুধে পানি মেশানো, ভোজ্য তেলে ক্ষতিকারক বিভিন্ন তরল পার্থ মিশ্রণ, বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে কৃত্রিম দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য তৈরী, ফ্লেবার ও মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতিকারক রঙ মিশিয়ে বিভিন্ন ফলের জুস, সস্সহ প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপান করা হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল, পানীয়তে ভেজাল, জীবণরক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল, প্রসাধনীতে ভেজাল। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যেই ভেজাল। রাসায়নিক ্রব্য ব্যবহারের কারণে পচনশীল খাদ্যপণ্য এখন আর পচে না। অপরিপক্ক ফলমূল রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হয়। এইসব খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে মানুষের যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জন্ডিস, ডায়াবেটিক, হৃদরোগসহ মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালে ঝরছে প্রাণ। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। ফলে ভেজালমুক্ত নিরাপ খাদ্য এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে।
ভেজাল প্রতিরোধ, খাদ্যের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের বেশকিছু সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সঠিক দায়িত্ববোধে যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে বলেই প্রতিয়মান হয়। প্রয়োজন সংখ্যক লোকবল ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। এছাড়াও কিছু প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ম্যজিষ্ট্রেট না থাকায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
পণ্যমান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো ম্যজিষ্ট্রেট নেই। ভেজাল বিরোধী অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটিকে ম্যজিষ্ট্রেট ধার করতে হয়। দায়িত্বশীলরে প্রয়োজনীয় জবাবদিহিতা না থাকা, জনসচেতনতার অভাব আর ভোক্তারা স্বীয় অধিকার সম্পর্কে জ্ঞাত না হওয়া ভেজালমুক্ত খাদ্যপ্রাপ্তির অন্তরায়। সরকারযন্ত্র যদি স্ব স্ব স্থান থেকে স্বীয় ায়িত্বে অবহেলা না করে এবং জবাবদিহিতার বিষয়ে সরকার কঠোরতর অবস্থানে থাকে তাহলে ভেজাল প্রতিরোধে আশানুরূপ ফল পাওয়া আশা করা যায়। মাঝে মধ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে ও অভিযুক্তদের জেল-জরিমানা করে সাময়িকভাবে সফল হওয়া যায় মাত্র। এই সফলতার স্থায়ীত্ব স্বল্পকালিন। বিভিন্ন সময় অভিযানের ফলাফল তাই প্রমান করেছে।
খাদ্য উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাত, ভোক্তা পর্যন্ত পৌছানোসহ সার্বিক দেখভালো করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে ায়িত্ব পালন করছে সরকারের চারটি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে- কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ও শিল্প। কৃষক, কৃষিপণ্যের উৎপান বৃদ্ধি, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি তথা কৃষিসংস্ত্রান্ত বিষয়াদী দেখভালো করে কৃষি মন্ত্রণালয়। খাদ্যসংক্রান্ত সমস্ত বিষয়াদী দেখে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানী ও বাজারজাত করা হয়। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ায়িত্ব। এছাড়াও দেশে উৎপাতি হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। দেশের খাদ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। মন্ত্রণালয়গুলো নিজস্ব বিষয়াদী নিয়ে কাজ করলেও খাদ্যে পুষ্টিমান অক্ষুন্ন রাখা, উপযোগীতা নির্ণয় ও ভেজালরোধে করণীয় বিষয়গুলো উল্লেখিত চারটি মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে কার্যকরী কোনো কর্মকান্ড পরিচালনার সুযোগ আছে কী? এক্ষেত্রে চারটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়তা ও কর্মপরিকল্পনা দরকার।
জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন মনে করে, খাদ্যে ভেজালমুক্ত দেশ গড়তে দায়িত্বশীলরে দায়িত্বের প্রতি পুর্ণভাবে শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। দায়িত্বে অবহেলাকারী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে সরকার থেকে কঠোর জবাবিিহতার মধ্যে আনতে হবে। দায়িত্ব অবহেলাকারীকে শাস্তিযোগ্য অপরাধী হিসেবে বিবেচনায় এনে কঠোর শাস্তি প্রানের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে পণ্যে ভেজালকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘পরোক্ষ হত্যাকারী’ হিসেবে বিবেচনায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে নতুন করে আইন প্রণয়ন বা সংশোধন করতে হবে। দায়িত্বশীল সরকারী সংস্থাগুলোকে বাধ্যতামূলক প্রতিনিয়তই বাজার মনিটরিং করতে হবে। আগাম প্রচার করে কোনো অভিযান পরিচালনা করা যাবে না। ভ্রাম্যমান আালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ প্রদান করতে হবে। এছাড়াও খাদ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত মন্ত্রণালয়গুলোর যৌথ কর্মসূচী থাকতে হবে।
মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, খাদ্যের গুনগত মান নিয়ন্ত্রণ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধের জন্য সরকারের রয়েছে নানাবিধ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। খাদ্য মন্ত্রণালয় জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। মানব খাদ্যের যাবতীয় দায় এই মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের অধিনে রয়েছে অধিদপ্তর ও পরিদপ্তর। সরকারের অতিব গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বিএসটিআই। খাদ্যপণ্যসহ যাবতীয় পণ্যের গুনগত মান নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে রয়েছে সংস্থাটি। সিটি কর্পোরশনেরও একটি বিভাগ আছে। বিভাগটির কাজ বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভেজাল প্রতিরোধকল্পে প্রয়োজনীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করা। ভোক্তারে অধিকার নিশ্চিতকল্পে সরকারের রয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এদিকে জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইন্সটিটিউড নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব বাজার থেকে প্যাকেটজাত খাদ্য সংগ্রহ করে তার গুনগত মান পরীক্ষা করে তা জনসম্মুখে তুলে ধরা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই স্বীয় দায়িত্বের প্রতি আন্তরিক নয়। এর ফলে ভোক্তারা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নুন্যতম সুফল পাচ্ছে না।
সরকারের দায়িত্বশীল এতগুলো প্রতিষ্ঠান থাকতেও ভেজাল প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না! এটা কী বিষ্ময়কর নয়? জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন মনে করছে, দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থাসমুহ, প্রতিষ্ঠানগুলো ও ব্যক্তিরা সঠিক সময়ে সঠিক কাজে আন্তরিক নন। জবাবিহিতার ক্ষেত্রে কঠোরতা না থাকায় দায়িত্বে অবহেলা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দায়িত্বশীলরে ায়িত্বে অবহেলাটা সরকার থেকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করায় দায়িত্ব অবহেলা আশঙ্কাজনক বেড়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের অনৈতিকতা, দুর্নীতিপরায়ণতা, স্বজনপ্রিতি ও শেপ্রেমের ঘাটতিকে দায়ী করা যায়।
ভেজালমুক্ত খাদ্য প্রাপ্তির অন্তরায়:
সুস্থ্য মানবগোষ্ঠি অর্জনের জন্য বিজ্ঞানসম্মত নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা আমাদের দেশে আজও গড়ে উঠেনি।
মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দ্রুত পুঁজি স্ফিত করার প্রবণতা ও অশুভ প্রতিযোগিতা।
অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার হীন মানসিকতা।
আইন না মানার প্রবণতা ও দেশপ্রেমে ঘাটতি।
ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান না থাকা এবং সচেতনতার অভাব।
বিগত বহু বছর সরকার থেকে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া।
সরকারী দায়িত্বশীল সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বে অবহেলা ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব।
প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং না করা।
ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রয়োজন সংখ্যক মেজিষ্ট্রেট না থাকা।
বিভিন্ন অভিযানে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লঘুদন্ড প্রদান।
দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয়গুলোর সমস্বহীনতা।
আমাদের প্রস্তাব-
১. খাদ্যে ভেজালমুক্ত দেশ গড়তে দায়িত্বশীলরে দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
২. দায়িত্বে অবহেলাকারী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে সরকার থেকে কঠোর জবাবিিহতার মধ্যে আনতে হবে।
৩. দায়িত্ব অবহেলাকারীকে শাস্তিযোগ্য অপরাধী হিসেবে বিবেচনায় এনে কঠোর শাস্তি প্রানের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে পণ্যে ভেজালকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘পরোক্ষ হত্যাকারী’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে নতুন করে আইন প্রণয়ন বা সংশোধন করতে হবে।
৪. দায়িত্বশীল সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে বাধ্যতামূলক প্রতিনিয়তই বাজার মনিটরিং করতে হবে।
৫.আগাম প্রচার করে কোনো অভিযান পরিচালনা করা যাবে না। ভ্রাম্যমান আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ প্রদান করতে হবে। এছাড়াও খাদ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত মন্ত্রণালয়গুলোর যৌথ কর্মসূচী থাকতে হবে।
৬. ভেজাল প্রতিরোধে কর্মরত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বারোপ করে খাদ্য মন্ত্রালয় ও সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাগুলো থেকে প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে।
৭. খাদ্যে ভেজাল দেওয়া একটি ফৌজদারী অপরাধ। এটা বড়মাপের দুর্নীতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে। খাদ্যে ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ ও ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে নিরাপদ খাদ্যের সাথে সম্পর্ক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলোতে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচী যেমন- টেলিভিশন-বেতারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে র্যা লি, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা, প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন প্রভৃতি আয়োজন করতে হবে।
স্বাধীন সার্বভৌম আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ রক্তদামে কেনা। জাতির জনকের ীর্ঘ সংগ্রাম ও সফল নেতৃত্বের ফসল এই শে। জাতির জনকের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভেজালমুক্ত খাদ্যের নিশ্চিয়তাকেই প্রধানতম গুরুত্বারোপ করতে হবে। স্বাধীনতা অর্জনে যে জাতির এতো ত্যাগ, এতো তিতিক্ষা সে জাতি আর যায় হোক অনৈতিকতাআশ্রয়ী হতে পারে না। অতিনগণ্য সংখ্যক মানুষ গোটা জাতিকে জিম্মি করে নিজেদের অখের গুছিয়ে চলেছে। খাদ্যে ভেজালকারীদের সংখ্যা অতি নগণ্য। শুধুমাত্র দায়িত্বশীলরে অবেহেলায় আর অনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির কারণে তারা এই অমানবিক কাজটি করে যেতে পারছে। লাভবান হচ্ছে মাত্র গুটি কয়েক মানুষ। পক্ষান্তরে গোটা দেশের সিংহভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ। এর থেকে বেরিয়ে আসতে দায়িত্বশীলরে সদ্বিচ্ছাই যথেষ্ঠ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine − 1 =