খেলাপী ঋণের অন্তরালে জনতা ব্যাংকের ১৫শ’ কোটি টাকা পাচার করেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ

1
694

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণের মধ্যে ১৫শ কোটি টাকা একাই বিদেশ পাচার করেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। রফতানির আড়ালে চারটি প্রতিষ্ঠানের নামে এ টাকা পাচার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত পার্সেন্টে কমিশনের মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এই টাকা পাচার করেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদের। ক্রিসেন্ট লেদারের মাধ্যমে ৪২৩ কোটি, রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮২ কোটি, রূপালী কম্পোজিট ৩৭৮ কোটি এবং ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের নামে ১৬ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। শুল্ক গোয়েন্দার বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান, এমডিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে এনবিআরে আবেদন করা হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ব্যাংকের ১৩ জন কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনকে দায়ী করা হয়েছে।

 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাচার রোধে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। আর দ্রুতই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। তা হল- টাকা ফিরিয়ে আনা এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, তিন কারণে বিদেশে টাকা পাচার হতে পারে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কিছু লোক বিদেশে টাকা নিতে পারে, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা পাচার হতে পারে এবং বিনিয়োগে মন্দার কারণে ব্যবসায়ীদের টাকা বিদেশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে কারণ যাই হোক, টাকা পাচার হওয়া দেশের জন্য সুখবর নয়।
নিয়ম অনুসারে আগাম টাকার প্রয়োজনে কোনো রফতানিকারক পণ্য রফতানির পর, এ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র জমা দিয়ে ব্যাংকের কাছে টাকা চাইতে পারে। এক্ষেত্রে ওই ব্যাংক বিল কিনে নিয়ে রফতানিকারককে ৯০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করার বিধান রয়েছে।
ব্যাংকিংয়ের ভাষায় প্রক্রিয়াকে ‘ফরেন ডকুমেন্ট বিল পার্সেস (এফডিবিপি)’ বলে। তবে এফডিবিপির ক্ষেত্রে অবশ্যই ১২০ দিনের মধ্যে ব্যাংকে টাকা পরিশোধে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মাধ্যমে ব্যাংককে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে যে, বিলের টাকা পাওয়া যাবে। আর এই প্রক্রিয়ার (এফডিবিপি) মাধ্যমেই ক্রিসেন্ট গ্রুপ টাকা পাচার করেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ক্রিসেন্ট গ্রুপের টাকা পাচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, টাকা পাচারের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। এ ঘটনা তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, এ ধরনের আরও কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। আর তদন্ত শেষ হলে আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালাম আজাদ বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার রিপোর্ট আমরা পাইনি। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া আরও আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি তাদের ব্যাপার। তবে ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে ‘এফডিবিপি’ প্রক্রিয়ায় ক্রিসেন্ট গ্রুপ টাকা পাচার করছে। এক্ষেত্রে ক্রিসেন্ট লেদারের কাছ থেকে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৫৩টি বিলের বিপরীতে ৪৯৯ কোটি টাকার রফতানি বিল কিনে নেয় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। পরে ৩৮টি বিলের বিপরীতে মাত্র ৭১ কোটি টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। বাকি ২১৫টি বিলের বিপরীতে ৪২৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা সমন্বয় করতে পারেনি।
ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের পক্ষ থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণ সম্ভব নয় বলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি।
গত বছরের ১ ফেয়ারি পর্যন্ত রিমেক্স ফুটওয়্যারের ২৫৯টি বিলের বিপরীতে ৫১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার রফতানি বিল কিনে নেয় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। পরে ১৭টি বিলের বিপরীতে মাত্র ৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। বাকি ২৪২টি বিলের বিপরীতে ৪৮৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সমন্বয় করতে পারেনি। আর ভুয়া বিলের মাধ্যমে এই টাকা পাচার করা হয়েছে।
ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫টি প্রতিষ্ঠানের পণ্য ২১টি কোম্পানির কাছে রফতানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রিপোর্ট আন্তর্জাতিক ক্রেডিট এজেন্সির মাধ্যমে করা হয়নি। এক্ষেত্রে মিউচুয়াল ওয়েল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মূলত তুলার ব্যবসা করে।
গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রূপালী কম্পোজিট লেদারের ২০৮টি বিলের বিপরীতে ৪১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার রফতানি বিল কিনে নেয় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। পরবর্তী সময়ে ১৬টি বিলের বিপরীতে মাত্র ২৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। বাকি ১৯২টি বিলের বিপরীতে ৩৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা সমন্বয় করতে পারেনি। আর ভুয়া বিলের মাধ্যমে এই টাকা পাচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় অথবা তাদের নির্দেশে এ কাজ করেছেন।
ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের কাছ থেকে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮টি বিলের বিপরীতে ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার রফতানি বিল কিনে নেয় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। পরবর্তী সময়ে কোম্পানি এর ১ টাকাও সমন্বয় করতে পারেনি। অর্থাৎ পুরো টাকাই বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
ক্রিসেন্ট গ্রুপের টাকা পাচারের ক্ষেত্রে ব্যাংকের যেসব দুর্বলতা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- দেশের বাইরের ব্যাংকের সঙ্গে এলসি খোলার সময় ওই ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কিনা, তা যাচাই করেনি জনতা ব্যাংক। আর রফতানির চুক্তিতে কোনো সাক্ষীর স্বাক্ষর নেই। যা আন্তর্জাতিক আইনে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া এফডিবিপি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর যাচাই করা হয়নি। জনতা ব্যাংকের নীতিমালায় কোনো ত্রুটিপূর্ণ বিল ক্রয় না করার নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে সেটি মানা হয়নি। বিল ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমদানিকারকের একসেপটেন্স (সম্মতি) বাধ্যতামূলক থাকলেও সেটি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টাকা পাচারের ঘটনায় মোট ১৭ জনকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। তারা হলেন-ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ, ক্রিসেন্ট লেদার ও রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যারের চেয়ারম্যান এমএ কাদের, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার স্ত্রী মিসেস সুলতানা বেগম, রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান ও এমএ কাদেরে ভাই আবদুল আজিজ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আবদুল আজিজের স্ত্রী মিসেস লিটুল জাহান মিরা।
এ ছাড়া জনতা ব্যাংকের ১৩ কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। তারা হলেন- তৎকালীন ব্যাংকের ফরেন ট্রেড ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার এবং বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) মো. ফখরুল আলম, তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ঢাকা দক্ষিণ ও বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি মো. জাকির হোসেন, তৎকালীন ব্যাংকের ফরেন ট্রেড ডিভিশনের ডিজিএম এবং বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ।
এ ছাড়াও রয়েছে নোট প্রস্তুতকারী সিনিয়র অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, পরীক্ষণকারী সিনিয়র অফিসার মো. সাইদুজ্জামান, সুপারিশকারী প্রিন্সিপাল অফিসার মো. রুহুল আমিন, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মগরেব আলী, মো. খায়রুল আমিন, এজিএম আতাউর রহমান, অনুমোদনকারী ডিজিএম মো. রেজাউল করিম, মোহাম্মদ ইকবাল এবং একেএম আসাদুজ্জামান।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছি, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে আমদানি ও রফতানির নামে এ টাকা যাচ্ছে। শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল এবং চাল আমদানির নামে টাকা কোথায় যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি টাকা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে তার মতে, একবার দেশের বাইরে টাকা গেলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে দেশ থেকে টাকা পাচার বাড়ছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্ট অনুসারে গত ১০ বছরে দেশ থেকে ৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ওই সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে যেসব মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে- আমদানিতে পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য দেখানো, (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি এবং ভিওআইপি ব্যবসা।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমানে অনেক রফতানির টাকাই দেশে আসছে না। এ ছাড়া আমদানির জন্য এলসি খোলা হলেও বিদেশে টাকা যায় কিন্তু পণ্য আসে না। সুইস ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন- আইসিআইজের তৈরি পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসেও টাকা পাচারের তথ্য আসছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে মোট চার কারণে টাকা পাচার হয়। এগুলো হচ্ছে- বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি এবং বেপরোয়া দুর্নীতি।
আর শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে এই প্রথম বড় অঙ্কের অর্থ পাচারের বিষয়টি দৃশমান হল। ক্রিসেন্ট গ্রুপের টাকা পাচারের বিষয়টি উদ্ঘাটনে শুল্ক গোয়েন্দার বিশেষ তদন্ত টিমে মোট ৭ জন সদস্য ছিলেন। তারা হলেন-উপ পরিচালক মো.পায়েল পাশা, রাজস্ব কর্মকর্তা সুজিত কুমার সাহা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো.রফিকুল ইসলাম খান, মো. রবিউল ইসলাম, মো.মোস্তাাফিজুর রহমান, লুলুওয়াল মারজান খান এবং নিরুলা খাতুন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + 1 =