ডিপিডিসির প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের দুর্নীতির তদন্ত ধামাচাপা!

0
732

মো: আহসানউল্লাহ হাসান: ডিপিডিসির প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেয়া অভিযোগের তদন্ত রহস্যজনক ভাবে ধামাচাপা পড়ে গেছে। আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ চাকুরী জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিধায় একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রকৌশলী আবু জাফর ১৬ ফেব্রুয়ারী-২০১৭ সালে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের করে।

 

কিন্তু বিশাল ক্ষমতাধর আব্দুর রাজ্জাক বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই তদন্ত কার্যক্রম ধামাচাপা দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই নিয়ে ডিপিডিসির অপরাপর কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর (ডিপিডিসি) সিদ্ধিরগঞ্জ এনওসিএস (নেটওয়ার্ক অপারেশন এন্ড কাস্টমার সার্ভিস) এর সাবেক প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে একই প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সাবেক ডেসা (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অথোরিটি) থেকে বদলে যাওয়া ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী)এর বিদ্যুত বিষয়ক গুরুত্বপূর্ন পদে বহাল থেকে বিদ্যুত বিষয়ক পন্যের একচ্ছত্র ব্যবসা করে আসছে। এই লক্ষে ১৫২/২/এম (৩য় তলা),পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫ ঠিকানায় ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ নামের একটি ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নিজের ২য় স্ত্রীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে। যেখানে বিদ্যুতের তার, ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি বিক্রয় করে থাকেন। ব্যবসায়ী ও হাইরাইজ ভবনের মালিক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এইচ-টি (হাই টেনশন-৪৯ কিলোওয়াট তদুর্ধ) সংযোগের নিজস্ব সাব-স্টেশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’কে সাব-স্টেশনের কাজ দেয়া না হলে এধরনের কোন গ্রাহককেই তিনি সংযোগ প্রদান করনে না। ব্যবসায়ী ও হাইরাইজ ভবনের মালিকদের এক প্রকার জিম্মি করে প্রতি বছর ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক তার স্ত্রীর নামে পরিচালিত এই বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন তৈরির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ এর মুনাফা বিদ্যুতের গতিতে এগিয়ে নেয়ার লক্ষে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিঃ জেঃ নজরুল হাসান খান (অব.) কে মোটা টাকায় ম্যানেজ করে ডিপিডিসির মগবাজার এনওসিএস এর সাব এসিস্ট্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে দুই ধাপ টপকে সরাসরি সিদ্ধিরগঞ্জ এর প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ লাভ করেন। তার এই নিয়োগ ছিলো সরাসরি ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক প্রদানকৃত।
হানিফ ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি প্রতিনিয়তই নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন (এইট-টি) বিদ্যুত সংযোগ। তাই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুত সংযোগের অনুমতির পূর্বে নিয়মানুযায়ী সাব স্টেশন তৈরি করে এনওসিএস এর নির্বাহী পরিচালককে দেখাতে হয়। সুচতুর প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক এই সুযোগটি গ্রহন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকে মোটা টাকায় ম্যানেজ করে গ্রাহককে এসব সংযোগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে ডিপিডিসির প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে হেড অফিসে কর্মরত আছেন। প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে তিনি ডিপিডিসির বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তার ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ এর মাধ্যমে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে আসছে। ২০১৬ সালের ওসাকা পাওয়ার লিমিটেডের মাধ্যমে একটি প্রকল্পে সরবরাহকৃত ৩শ’ টি ট্রান্সফরমারের মধ্যে ১৯১ টি ট্রান্সফরমারই মানহীন হিসেবে ধরা পড়ে। সেই প্রকল্পের সরবরাহকৃত ট্রান্সফরমারের বিল উচ্চপদস্থ কর্মকর্র্তা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আটকে দেয়। এতেই প্রমানিত হয় তিনি কিভাবে বেসরকারী ব্যক্তিদের ঠকিয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে ঐ প্রতিষ্ঠান বিষয়ক পন্যের বিক্রয় বিপণন ব্যবসায় জড়িত থাকা কোন কর্মকর্তা পক্ষেই আইন সিদ্ধ নয়। কেননা এতে সরকারী প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহীতরা প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ডিপিডিসিতে কর্মরত থেকে দুনীতির মাধ্যম অর্জিত টাকা ব্যয় করে নিজ এলাকা গাজীপুরের শেরপুরে প্রতিষ্ঠা করেছে ‘সিসকো ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এন্ড টেকনোলজি’। যার মাধ্যমে করছে প্রচুর অর্থ।
আব্দুর রাজ্জাক কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি) এর নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন। গাজীপুরে তার নামে বেনামে রয়েছে শত একর জমি। বিলাশ বহুল বাড়ী। আত্মীয় স্বজনরাও তার হাত ধরে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত কোটিপতি।
এই বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন,অনেক বড় বড় সাংবাদিক আমার আত্মীয়-স্বজন। অনেকের সাথে আমার চলাফেরা আছে। আর এইসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না বলে জানান। তার কথার শেষ হওয়ার পর পর এক সাংবাদিক তার পক্ষ হয়ে বলেন, তিনি তাদের ভাই হন। তাকে কোন প্রকার বিরক্ত না করতে। এক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হলে দূর্নীতিবাজ ব্যক্তি আপনার ভাই হয় সেটা বড় বিষয় না। তিনি যে বিভিন্ন দূর্নীতির সাথে জড়িত আছে সেটা আপনি জানেন, তখন তিনি কথা না বলে ফোন রেখে দেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − 4 =