তারেক রহমান সহ বিদেশে পলাতক খুনি ও অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0
722

মো: আহসানউল্লাহ হাসান: বিদেশে পলাতক দন্ডিত সব খুনি ও অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও তিনি জানান। ২৭ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারে চাপ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে চাপে রাখার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক। তারাও চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাক। এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

 

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন দন্ডিত তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বহুদিন ধরে আলোচনা চলছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইন-মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়া বিদেশে থাকা পলাতক সব খুনি ও দন্ডিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জার্মান সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সফরের বিষয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে গেলে দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে সাইড লাইনে বৈঠক হতে পারে। আসন্ন ভারত সফর নিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বরাবরেই ভালো। এই সফর হবে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সম্প্রীতির। সেখানে আলোচনার বিষয় এখনও চ’ড়ান্ত হয়নি।

সামাদ আজাদ থেকে ড. মোমেন
দেড়যুগ পর আবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেল সিলেট। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদের মাধ্যমে সিলেটের দখলে আসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কালের পরিক্রমায় ১৯৮৪ সালের জুনে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আরেক সিলেটী সাবেক স্পিকার মরহুম হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী। ১৯৮৫ সালের জুলাই পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
সময়ের সঙ্গে সরকার বদল হয়ে আরও ১১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আবারও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আব্দুস সামাদ আজাদের হাতেই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ন্যস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০১ সালের জুলাই মাস মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়টি ছিল সিলেটী এই প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদের হাতে। তার মৃত্যুর পর দেড়যুগ কেটে যায়, মন্ত্রণালয়টিতে আধিপত্য ছিল না সিলেটী কোনো মন্ত্রীর। দীর্ঘ এসময় বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমল কেটেছে।
অবশেষে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে মহাজোটের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত ড.এ.কে আব্দুল মোমেনের হাত ধরে আবারও সিলেট ফিরে পায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের ২০তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ৭ জানুয়ারি-১৯ শপথ নেবেন জাতিসংঘের বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত অর্থমন্ত্রীর সহোদর ড.এ.কে আব্দুল মোমেন।
নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে অভিনন্দন জানায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট কাভাসোগলু ও ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ফাম বিন মিন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বার্তায় বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফরে দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। ড. মোমেনের নেতৃত্বে এ সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও জানান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অপরদিকে ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী এক বার্তায় বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় আমি তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে।
ড.এ.কে আব্দুল মোমেন ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। তার দায়িত্ব পালনকালেই বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের মর্যাদা লাভ করে। এ সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ মহিলা শান্তিরক্ষী বাহিনী এবং নেভাল ফোর্স পাঠানো শুরু করে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিবদমান সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ড. মোমেন। বাংলাদেশ বিরোধপূর্ণ ওই সমুদ্রসীমা বিজয় করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতায় ড. মোমেন।

তিনি জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ কো অপারেশনের উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইউনিসেফ নির্বাহী বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ৬৭তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উপ-সভাপতি এবং সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জাতিসংঘে যোগ দেয়ার আগে ড. মোমেন জাতিসংঘের পিস বিল্ডিং কমিশনের সভাপতি ছিলেন। তিনি ফ্রামইংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে সৌদি আরবের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্থনেতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ড. মোমেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, দ্য সালেম স্টেট কলেজ, মেরিম্যাক কলেজ, ক্যামব্রিজ কলেজ, কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন।
১৯৭৮ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ফোর্ড ফাউন্ডেশন এবং মেশন ফেলো হিসেবে উচ্চশিক্ষা নেয়ার আগে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া সময়ে সময়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত ছিলেন।
ড. মোমেন একজন লেখক ও কলামনিস্ট। তিনি ৪টি বই এবং ২৫০টির ওপর গবেষণাপত্র লিখেছেন। তিনি অর্থনীতি এবং ব্যবসা প্রশাসনে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি (বোস্টন) থেকে ডক্টরেট এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে লোক প্রশাসন, পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক্সে এমপিএ করেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিএ ও এমএ করেন।
ড. মোমেন এর আগে ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের অর্থ ও জাতীয় অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রকল্পে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের শিশু শ্রম, শিশুকে জকি হিসেবে ব্যবহার এবং শিশু পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার নিরন্তর প্রয়াসের ফল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আদম পাচার সম্পর্কিত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি আরবে কমরত অবস্থায় তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও সোচ্চার ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করেন। এরপর স্বাধীন দেশেও নতুন সরকারের অধীনে যুক্ত হন। কিন্তু ১৯৮২ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয় বিশেষ সামরিক অধ্যাদেশ (৯) জারির মাধ্যমে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ড. মোমেন। দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিলেটিদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে এ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোমেন সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ছোট ভাই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty + 8 =