বিশেষজ্ঞ মতামত‍‍‍‌‌‌ ‍‍‍‌‌”প্রশাসনের ভেতরের ভূতও তাড়াতে হবে”

0
587

অবি ডেস্কঃ দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইয়াবা কারবারিরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ উদ্যোগকে সামগ্রিক বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানালেও কিছু ব্যাপারে তারা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন করে যাতে মাদক কারবারির জন্ম না হয়, সে ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলেছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গডফাদাররা যাতে পার না পেয়ে যায়; সেদিকেও মনোযোগী হতে হবে। আর মাদক ব্যবসার সঙ্গে প্রশাসনের ভেতরের যে ভূত রয়েছে, তা তাড়ানো জরুরি।

 

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, মাদকের সঙ্গে জড়িতদের একটি পুরনো ধারণা রয়েছে- এ পথে কেউ একবার এলে সেখান থেকে বের হওয়া যায় না। এটা এক ধরনের ‘ওয়ানওয়ে’ রুট। তবে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের উদ্যোগ সে ধারণা ভেঙে দেবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সাধারণ চোর-ডাকাত আর মাদক ব্যবসায়ীরা এক জিনিস নয়। জঙ্গি, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জলদস্যু-বনদস্যুদের মতো মাদকের রাঘববোয়ালদের তুলনা করলে চলবে না। অধিকাংশ মোটা অঙ্কের অর্থ কামানোর জন্য মাদক ব্যবসায় জড়ায়। এটা তাদের রক্ত-মাংসে মিশে গেছে। তাই আত্মসমর্পণের পরও মাদক ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। আত্মসমর্পণের পর কেউ যাকে একে ‘শ্বেতপত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে পার পেয়ে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে সতর্ক থাকতে হবে, নতুনভাবে যেন আবার মাদক কারবারি জন্ম না নেয়। আর প্রশাসনের ভেতরের ভূতও তাড়াতে হবে। কারণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া দেশের মাদক কারবার পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব।

তিনি আরও বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের গডফাদার কতজন, তাও বিশ্নেষণের বিষয় রয়েছে। যারা মাদক ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা দরকার। আর যারা জীবনের তাগিদে বাহক হিসেবে ইয়াবা ব্যবসায় সহায়তা করেছে, সরকারের উচিত তাদের পুনর্বাসন করে পৃথক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান বা আত্মমসর্পণ নয়- এ মহামারী ঠেকাতে প্রয়োজন সামগ্রিক পরিকল্পনা। যেটা এখনও দৃশ্যমান হয়নি। বাংলাদেশ যেন মাদকের করিডোর হিসেবে ব্যবহার না হয়, এটাও নিশ্চিত করতে হবে।

মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, আত্মসমর্পণের উদ্যোগ যেন আইওয়াশ না হয়। আর আত্মসমর্পণ করলেও তাদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখা জরুরি। কারণ ইয়াবা কারবারি আর চোর-ডাকাতদের আত্মসমর্পণ করা এক বিষয় নয়। মূল হোতাদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, এখনও দেশে মাদক অনেক সহজলভ্য। এটাকে দুষ্প্রাপ্য করতে হবে। লাওস, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সীমান্তে এমন কর্মকর্তাও রয়েছেন,যারা ১০ বছর ধরে একই পদে থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছেন। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের সততার কারণে। আমাদের এমন সৎ কর্মকর্তার খুবই দরকার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মসমর্পণের ফল বোঝা যাবে। তবে এ উদ্যোগটি ইতিবাচক। ইয়াবা ঠেকানোর জন্য সীমান্তে আরও নজরদারি বাড়ানো জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, মাদকের সঙ্গে অনেক অপরাধের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণ করা গেলে স্বাভাবিকভাবে অনেক অপরাধের ঘটনা কমবে। হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ অনেক অপরাধের মূলে আছে ড্রাগ। অশুভ পথে কেউ গেলে তাকে ভালো হওয়ার সুযোগ দেওয়া দরকার। আত্মসমর্পণের উদ্যোগ সেই প্রক্রিয়ার অংশ বলে মনে করছি।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, শাস্তি দিয়েই যে কোনো অপরাধ নির্মূল করা যায়- এটা আধুনিক ধারণা নয়। অপরাধ প্রতিরোধ বা প্রতিকার করা যায়। কেউ যদি আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে পুনবার্সিত হতে চায়, তাকে সে সুযোগ দেওয়া উচিত। মাদক নিয়ন্ত্রণের যত ব্যবস্থা রয়েছে, এটা তার মধ্যে একটা। আবার জনস্বার্থে যে কোনো ফৌজদারি অপরাধ প্রত্যাহার করতে পারে সরকার। এই ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের রয়েছে। এ বিবেচনায় আত্মসমর্পণের উদ্যোগটি খারাপ কিছু নয়। তবে তাদের ওপর নজরদারি রাখতে হবে। তারা ভালো পথে ফিরেছে কি-না, সেটা দেখতে হবে। সেটা নিশ্চিত হলে এ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − 5 =