Site icon Aparadh Bichitra

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা “মুক্তিযুদ্ধে শহীদ লোকমান হোসেন হাবিলদারকে গেজেটভুক্ত করা হউক”

নজির আহাম্মদঃ চট্টগ্রাম জাগ্রত-৭১ ভাস্কর্যে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার ১৩ নাম্বার সিরিয়ালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হাবিলদার লোকমান হোসেনের নাম লিপিবদ্ধ আছে। গত ৪/২/১৯ ইং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাবিলদার লোকমানের ছেলে শাহ আলম আবেদন করেছে তার বাবাকে গেজেটভুক্ত করা জন্য। তাছাড়া ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক প্রকাশিত ডিটেকটিভ পত্রিকায় ৫৭১ জন শহীদের মধ্যে লোকমান হোসেন আছে ৮ নাম্বারে।

 

১৯৭১ সালে ৭ই মাচ পূর্ববঙ্গের রাজধানী শহর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আর্তনাৎ “এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রম” ৭ কোটি পূর্ব বাঙালীকে একবৃত্তে দাড় করিয়ে ছিলো শুধুমাত্র একটি দাবীতে “স্বাধীনতা, স্বাধীনতা”। ঠিক ১৭ দিন পরে ২৫ মার্চ কালো রাতে সেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। একই সাথে আমাদের ঘুমন্ত জাতির উপর ঝাপিয়ে পড়ে হায়েনার মতো। মেতে উঠে রক্তের হোলি খেলায়। গুলিবর্ষণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় এক রাতেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই একটি কথা “তোমাদের যার কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম” কালজয়ী কথাটাকে পুজি করে আমাদের সন্তানেরা ২৬ মার্চ থেকে ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র যুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিশ^ মানচিত্রে জন্ম নেয় একটি স্বাধীন ভ’-খন্ড “বাংলাদেশ”। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে ছিলো আমাদের সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ, চাকুরীজীবী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, কবি সাহিত্যিক, কৃষক-শ্রমিক সহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। কেউ সশস্ত্র যুদ্ধ করেছিলো আবার কেউবা সশস্ত্র যোদ্ধাদের সংগঠিত করে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলো। যাদের অনেকেই যুদ্ধকালীন শহীদ হন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এসব মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে করা হয় মুক্তিযাদ্ধাদের তালিকা। একটি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা। অপরটি বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা। প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্মান মুক্তিযুদ্ধের সনদ। তবে যুদ্ধ ফেরত অনেকেই আবার দেশের জন্য জীবনের আত্মত্যাগ মনে করে সেই তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি। ফলে তারা বঞ্চিত হন রাষ্ট্রীয় সম্মান থেকে। কিন্তু আজো তারা বঞ্চিত সেই সম্মান থেকে। তাদের মৃতুর পর গার্ড অব অনার দিতে না পেরে কাঁদে তাদের সহযোদ্ধাদের হৃদয়। এমনি এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের মরহুম দুধ মিয়ার ছেলে তৎকালীন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য শহীদ লোকমান হোসেন (হাবিলদার-১৩০২)। সে ১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের নামের তালিকার চট্টগ্রামের তালিকায় শহীদ লোকমান হোসন হাবিলদার-১৩০২ এর নাম ৪২ নাম্বারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই সময় লোকমান হেসেনের স্ত্রী আপিয়া খাতুন পুলিশ পরিবারের সদস্য হয়েও পুলিশ বিভাগ থেকে কোন রূপ সহায়তা না পেয়ে আড়াই বছরের শিশু সন্তান শাহ আলমকে নিয়ে অমানবিক জীবন যাপন করেন। ক্ষুধার জ¦ালা সইতে না পেরে আপিয়া খাতুন ৪ বছর বয়সী পুত্র শাহ আলমকে চাচার সংসারে ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। লোকমানের সংসারে অনাথ শিশু শাহ আলম ছাড়া অন্য কেউ না থাকায় লোকমানের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান ও সুযোগ সুবিধাদি নেয়ার জন্য তৎকালীন সময়ে পুলিশ বিভাগের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার মতো কেউ ছিলো না। ফলে হাবিলদার লোকমানের নাম মুক্তিযুদ্ধের গেজেট থেকে বাদ পড়ে যায়। অপ্রাপ্ত বয়সে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি নিয়ে কখনোই ভাবেনি হাবিলদার লোকমানের ছেলে শাহ আলম। কিন্তু ২১ মার্চ-২০০৭ ইং তারিখে চট্টগ্রাম মেট্রোপুলিশ অফিস থেকে মহান স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন উপলক্ষে শহীদ হাবিলদার লোকমান হোসেনের পরিবার প্রতি এক চিঠি ইস্যু করা হলে শাহ আলম তা অত্যান্ত শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞার সাথে গ্রহন করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। অতপর সে জানতে পারেন তার বাবা শহীদ লোকমান হোসেন পুলিশ সদস্যদের নামের তালিকায় ৪২ নাম্বারে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও গেজেট তার নাম নেই। এসময় শাহ আলম তার শ্রদ্ধাভাজনদের পরামর্শে তার বাবাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্তি করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু শাহ আলমের আবেদন বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে মন্ত্রনালয়ের টেবিলের নিচে। সর্বশেষ ২৮ অক্টেবর-২০১৮ ইং তারিখে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এ.কে.এম শাহজাহান কামাল এমপি তার ডি.ও পত্র নং ৩০.০০.০০০০.০০১.১৬.০০৯. ২০১৮-৭৬৮ এর মাধ্যমে শহীদ লোকমান হোসেন হাবিলদার-১৩০২ কে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর পত্র প্রদান করেন। তথাপিও আবেদনটি আলোর মুখ দেখছে না। এতে অবহেলা অনাদরে কাটছে শহীদ লোকমানের সন্তান শাহ আলমের জীবন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি শাহ আলমের স্বশ্রদ্ধ আবেদন তার বাবা লোকমান হোসেনকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের অসহায় পরিবারের পাশে দাড়াবেন।