স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং বাণিজ্য-আইপিএইচ’এ ভুয়া অধ্যাপক! এক চেয়ারেই ২২ বছর ডা.মাহফুজ

0
707

বিশেষ সংবাদদাতা: দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট দুর্নীতিতে ডুবছে। ভাগ্যের চাকা দ্রুত ঘুরেই চলেছে সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্রের। এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত অতিক্রান্ত একজন ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মজীবনের ২২ বছর এক চেয়ারেবসেই নিজের ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। সবসরকারের সময়েই দোর্দন্ড প্রতাপশালী এ ভাগ্যবান কর্মকর্তা হলেন ডাঃ শাহ মাহফুজুর রহমান ।

ডাঃ শাহ মাহফুজুর রহমান ১৯৯৬ সন থেকে মেডিকেল অফিসার হিসেব এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সম্প্রতি তিনি নিজেকে কমিউনিটি মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক পরিচয় পরিচয় দিচ্ছেন। পদ নাই অথচ ভৌতিক পদে পদায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুর্নীতির রেকর্ড গড়েছে। যুগিয়েছে হাসির খোরাক। এ প্রতিষ্ঠানে সহকারী অধ্যাপকের কোন পদ নেই। নেই চলতি দায়িত্বে সংযুক্ত করার সুযোগ । তার পর্ওে কেনাকাটার আড়ালে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে সংঘবদ্ধ চক্রের নেতৃত্বে থাকা চাই ডা. মাহফুজের। কেনা কাটার নামে ভুয়া ভাউচার এবং কথিত ঘুপচি টেন্ডার বাজির মাধ্যমে অর্থ লুটে আরো মোটাসোটা হতেই জেকে আছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের চৌকস ক্রয় কর্মকর্তা মনির চৌধুরিকে কৌশলে বদলী করে সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজচক্র একচেটিয়া রামরাজত্ব কায়েম করেছে। চক্রের অন্যতম প্রশ্রয়দাতা বহুল আলোচিত ধনকুবের কর্মকর্তা ডা. মাহফুজ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অনৈতিক ভাবে ৮ বছরের জন্য লিয়েনে উক্ত ভবনেই স্থাপিত জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) তে কর্মরত খেকে দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি। সেখানে সারা দেশের স্যানিটারী ইন্সপেক্টরদের ডেকে এনে ট্রেনিং ভাতা, মোটর সাইকেল এবং ল্যাপটপ দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি চিকিৎসক হিসেবে কোন প্র্যাকটিস করেন না। নেই দৃশ্যমান অন্য কোন আয়। জ্ঞাত আয়বহির্ভুত অর্থে তিনি মিরপুরের ২ নম্বরে সনি সিনেমা হলের কাছে জনতা হাউজিং এ বিশাল বাড়ী কিনেছেন। কিনেছেন দামি গাড়ী।
সূত্র মতে, শুধু মাত্র পরিচালকদের সাথে সখ্যতায় বিগত অর্থ বছরে কোন কাজ না করেই জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সার্ভে ফান্ড থেকে নয় লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিল(বিএমআরসি) এর সার্ভে ফান্ডের ৫ লাখ টাকা ভাউচার দিয়ে হজম করেছেন। একাডেমিক শাখা প্রধান হিসেবে আছেন ডাঃ শাহনীলা ফেরদৌসি। কিন্তু ডাঃ মাহফুজ কাউকে পাত্তা না দিয়ে সকল সিদ্ধান্ত নিজে নেন এখতিয়ারবহির্ভুতভাবে । একাডেমিক ফান্ডের সকল টাকা একাই খরচ করেন। সহযোগিতা করেন চতুর্র্থ শ্রেনীর কর্মচারী মুজিবুর রহমান। লাইব্রেরীর বই কেনার জন্য বরাদ্দ টাকায় নীলক্ষেতের পুরানো বই, ফটোকপি বই কেনার অভিযোগ উক্ত প্রতিষ্ঠানে বিএসসি কোর্সে অধ্যয়নরত ছাত্র/ছাত্রীদের। একাডেমিক শাখায় কেনাকাটার নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান এর প্যাড ব্যবহার করেন। নিজের পছন্দমত নতুন ডাক্তারদের শিক্ষক হিসেবে ব্যববহার করেন। লেখাপড়া নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। ডাঃ শাহফুজের ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পাননা । অথচ প্রতিষ্টানটিতে অভিজ্ঞ অনেক শিক্ষক রয়েছেন । কথায় কথায় ডিজি, সচিব তার নিজের লোক বলে জাহির করেন কেবল নিজের অপকর্ম আড়াল করার কৌশল হিসেবে। একাডেমিক শাখার একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রতিষ্টানের নামে প্রিন্টিং খাতে বরাদ্দ এক কোটি টাকা হজমের জন্য সিন্ডিকেট কমিটি ভাগভাটোয়ারা শুরু করেছে । কেনাকাটায় দূর্ণীতির জন্য কিছুদিন আগে উৎপাদন বন্ধ থাকায় সারা দেশে সরকারী হাসপাতালে স্যালাইন সংকট সৃস্টি হয়েছিল । দূর্ণীতির উৎস বন্ধ না করা গেলে সারা দেশে সরবরাহকারী ৩% ফ্লুইড,আইভি ফ্লুইডস্যালাইন ও রিয়েজেন্টস সরবরাহকারী প্রতিষ্টানটির অস্তিত হুমকিতে পড়বে বলে কর্মরতদের আশংকা।
অর্গানোগ্রাম অনুয়ায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মকর্তা/কর্মচারীর জন্য ৯২৭ টি পদ রয়েছে।এ প্রতিষ্ঠানের দূর্ণীতির পিলেচমকানো রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সিন্ডিকেটের প্রভাবে দর্নীতি দমন কমিশনের ভিজিরেন্স টীম পাততাড়ি গুটিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বিগত সরকারের সময়ে। প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলোতে কে বসবেন সে সিদ্ধান্ত এত দিন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনেই ছিল। ফলে স্বাস্থ্য সেবার নিয়োজিত এ প্রতিস্টানটি ডুবতে বসেছে।্ সৎ ও কর্মঠ কর্মকর্তাকর্মচারীরা তাদের কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছেন। উক্ত প্রতিস্টানটিতে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে থাকা একটি সিন্ডিকেট ফুরফুরে মেজাজে আছে। তথ্য অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের চাকুরীর মেয়াদ ৭ দিন থেকে সব্বোর্চ্চ ১ বছর । ফলে যে পরিচালকই পদায়ন করা হোক না কেন তার নির্ভর করতে হয় লুটেরা সিন্ডিকেট এর উপর । গত এক যুগের কেনাকাটার তথ্যের সঠিকতা যাচাই করলে সাগর চুরির তথ্য উদঘাটিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। সূত্র মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বহুল আলোচিত একজন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সঙ্গে মাহফুজ চক্রের ঘনিষ্ঠতার কারনেই সব অনিয়ম ধামাচাপা পড়ে গেছে। উক্ত কর্মকর্তা দুদক তদন্তে ফেঁসে গেলেও তার আশির্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেটের সরদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ডা. মাহফুজ। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ডা. মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অপরাধ বিচিত্রাকে জানান, তিনি এ সম্পর্কিত বিশদ ব্যাখ্যা দেবেন। বার বার যোগাযোগ করলেও তিনি সময় ক্ষেপনের কৌশল নিয়ে এড়িয়ে গেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × five =