কোথায় হারিয়ে গেলেন দুই বান্ধবী

0
682

চার দিন পেরিয়ে গেছে। এখনো খোঁজ নেই বৃষ্টি ও দোলার। কোথায় হারিয়ে গেলেন দুই বান্ধবী তাদের কোনো খোঁজ দিতে পারে নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।

 

ফাতেমা-তুজ-জোহরা বৃষ্টি ও রেহনুমা তারান্নুম দোলা। দুই বান্ধবী। সেদিন তারা কি চুড়িহাট্টার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন, তারা কি বেঁচে আছেন, নাকি তারা অন্য কোথাও আছেন- এরকম নানা প্রশ্ন, নানা আশঙ্কা। এরমধ্যেই ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। সন্তান নিখোঁজের শোকে মা-বাবা যখন পাগলপ্রায় ঠিক তখনই একটি চক্র হৃদয়বিদারক এই ঘটনাকে পুঁজি করে প্রতারণা করেছে তাদের সঙ্গে। ফোনে মেয়ে জীবিত আছে জানিয়ে বৃষ্টির বাবার কাছ থেকে অর্ধলক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা নেয়ার পর থেকেই ওই ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফাতেমা-তুজ-জোহরা বৃষ্টির মা শামসুন্নাহার জানান, শুক্রবারে হঠাৎ করেই বৃষ্টির বাবা জসিম উদ্দিনের ফোনে একটি কল আসে। ওই প্রান্ত থেকে তাড়াহুড়ো করে জানানো হয় বৃষ্টি বেঁচে আছে। সুস্থ আছে। তাকে ফিরে পেতে হলে এক্ষুণি ৫০ হাজার টাকা পাঠান। মেয়ে জীবিত আছে শুনে আর সাত-পাঁচ ভাবেননি তিনি। তবে অনুরোধ করেছিলেন, মেয়ের সঙ্গে একটু কথা বলতে দেন। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় তা সম্ভব না। পুলিশ তাদের অনুসরণ করছে। বেশিক্ষণ কথা বলা যাবে না। কথা একটাই- মেয়েকে ফিরে পেতে হলে টাকা পাঠাতে হবে। তারপর কথানুসারে বিকাশে দাবিকৃত টাকা পাঠিয়ে দেন বৃষ্টির পিতা জসিম উদ্দিন। তারপর থেকেই ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। একই সময়ে ফোনে টাকা দাবি করা হয়েছিলো বৃষ্টির বান্ধবী রেহেনুমা তারান্নুম দোলার বাবার কাছেও। দোলার বাবা দলিলুর রহমান তখন লালবাগ থানায় ওসির রুমে বসা ছিলেন। পুলিশের পরামর্শেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। দলিলুর রহমান বলেছিলেন. আগে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু তারা আর দোলার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়নি। বৃষ্টির মা শামসুন্নাহার জানান, বুধবার বিকালে সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমিতে নিজেদের আবৃত্তি সংগঠন প্রজন্ম কণ্ঠের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলো বৃষ্টি ও দোলা। সেদিন অনেক যত্ন করে সেজেছিলো তারা। সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুমন জামান জানিয়েছেন, সেদিন শিল্পকলায় একুশের প্রথম প্রহর উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান শেষ হয় সাড়ে ৯টার দিকে। তারা রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলো। এরমধ্যে বৃষ্টির সঙ্গে কথা হয়েছে সুমন জামানের। সুমন জামান জানান, একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য দোয়েল চত্বর দিয়ে ঢুকতে না পেরে রিকশায় করে চানখাঁরপুল দিয়ে বাসায় ফিরছিলো বৃষ্টি ও দোলা। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ১০টা ১৬ মিনিটে বৃষ্টির সঙ্গে কথা হয়েছে তার ভাইয়ের। তখন তিনি বলেছেন, চানখাঁরপুলে আছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় ফিরবেন। একইভাবে ১০টা ৩১ মিনিটে দোলার সঙ্গে কথা হয়েছে তার বাবার। তখন দোলা জানিয়েছেন, তিনি পোস্তা এলাকার কাছে। শিগগিরই বাসায় ফিরবেন। কিন্তু তাদের আর ফেরা হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের পরপর কল দিলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজের পরপরই লালবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বৃষ্টির ভাই মোহাম্মদ সানি। মোবাইল ট্যাকিং করে তাদের ফোনের সর্বশেষ অবস্থান দেখা গেছে মৎস্য ভবন ও চানখাঁরপুল এলাকায়। তাই পুলিশের ধারণা তারা হয়তো লালবাগের বাসায় যেতে চানখাঁরপুল, চকবাজারের রোড ব্যবহার করেছিলেন। লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভাষ কুমার পাল বলেন, যদি তারা এই রোড ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের অপহরণ করা হয়েছে এমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, টাকা নিয়েছে প্রতারক চক্র। তাদের গ্রেপ্তার করতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। দলিলুর রহমান দুলাল ও সুফিয়া কামালের কন্যা রেহনুমা তারান্নুম  দোলা। মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন ১৩৮/৯ লালবাগ রোড এলাকায়। এর ঠিক পাশেই ৪১/১ হাজী রহিম বক্স  লেনে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন জসিম উদ্দিন ও শামসুন্নাহারের মেয়ে ফাতেমা-তুজ-জোহরা বৃষ্টি। তিনি পড়তেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের তৃতীয় বর্ষে। মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের আইনের ছাত্রী ছিলেন দোলা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − thirteen =