সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অ্যাশ এবং ডাইং ও প্রিন্টিংসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্যে ব্যাপক মাত্রায় পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে

0
1318

মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অ্যাশ এবং ডাইং ও প্রিন্টিংসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্যে ব্যাপক মাত্রায় পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে।

 

এছাড়া সিমেন্টসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরিগুলো মাটি ভরাট ও স্থাপনা তুলে নদী এবং স্থানীয়দের জমিজমাও দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অ্যাশ উড়ে গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরী নদী ও আশপাশ এলাকার বাড়িঘরে। ফ্যাক্টরিগুলো ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করছে। এতে করে মুন্সীগঞ্জ সদরের ধলেশ্বরী নদীর দুইপাড়ের মানুষের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও শাহ সিমেন্ট ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কয়েকশ’ একর জমি দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মুন্সীগঞ্জের চরমুক্তারপুরে বিভিন্ন টেক্সটাইল মিলসের কেমিক্যাল মিশ্রিত তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে মিশছে। মুক্তারপুর ও চরমুক্তারপুরে সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অ্যাশ এবং ডাইং ও প্রিন্টিংসহ অংসখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান পানি ও বায়ুদূষণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। এ পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় নদী পাড়ের বাসিন্দাদের গোসল করার ক্ষেত্রেও হচ্ছে সমস্যা। সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর অ্যাশ উড়ে সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে খোলামেলাভাবে ক্লিংকার জাহাজে লোড-আনলোড করা হচ্ছে। সিমেন্টের অ্যাশ উড়ে এসে ধলেশ্বরী নদীর তীরবর্তী হাটলক্ষীগঞ্জ, নয়াগাঁও, মীরেশ্বরাই, মুক্তারপুর, মালিরপাথর, ফিরিঙ্গিবাজার, চরমুক্তারপুরসহ আশপাশ এলাকার পরিবেশ দূষণ করে চলেছে। সামান্য বাতাসেই সিমেন্ট ফ্যাক্টরির অ্যাশ উড়ে আশপাশের সমস্ত এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিরকাদিম নদী বন্দর ঘাট থেকে শুরু করে চরকিশোরগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ ৩-৪ কিলোমিটার এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর পানি পঁচে গেছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। মাছও নেই নদীতে। জেলেরা এখন আর এ ধলেশ্বরী নদীতে মাছ শিকারে আসে না। আগে নদীতে কিছু সময় পর পর শুশুক মাছ ভেসে উঠতো। তা আবার ডুবে যেতো। কিন্ত সেই শুশুক তথা ডলফিন মাছ এ নদীতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর জাহাজগুলোও নদী দখল করে রাখায় লঞ্চসহ নৌযানগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না। সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর জাহাজগুলোও নদী দখল করে রাখায় লঞ্চসহ নৌযানগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না। ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ ও বায়ুদূষণের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদরের চরমুক্তারপুর এলাকার ক্রাউন, প্রিমিয়ার, শাহ, সিমেন্স ও গজারিয়ায় আনোয়ার সিমেন্টসহ ৬টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একাধিকবার ক্রাউন, প্রিমিয়ার, শাহ সিমেন্টসহ বিভিন্ন কলকারখানার মালিকদের জরিমানা ও সর্তক করে দেয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। এদিকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ধলেশ্বরী-শীতলক্ষ্যা নদী দখল, দূষণ ও সরকারি রাস্তা খুলে দেয়ার দাবিতে মুন্সীগঞ্জের চরমুক্তারপুরের ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। মুক্তারপুরের গোসাইবাগ গ্রামের ফজলুর রহমান ফটিক জানান, শাহ সিমেন্ট ফ্যাক্টরি তার ১ হাজার ৪শ’ ৭০ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলে শ্রমিকদের লেলিয়ে দেয়। পশ্চিম মুক্তারপুরের আরশ দেওয়ান জানান, তার ১ হাজার ৩শ’ ৩৪ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিটি। তারা সরকারি রাস্তাও দখল করে জনগণের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এমনিভাবে নয়াগাঁওয়ের মো. রকিবের ৫শ ১৪ শতাংশ, চরসন্তোষপুরের দেলোয়ার হোসেনের ৩শ ৫৭ শতাংশ জমি দখল করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নয়াগাঁও জামে মসজিদের ওয়াকফকৃত ১ হাজার ২শ’ শতাংশ জমিও দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান জানান, নদীগুলো দখল-দূষণে আজ মৃত। শিল্পকারখানাগুলোর একদিকে যেমন নদীর জায়গা দখল করছে অন্যদিকে অবৈধভাবে স্থাপনা করছে। তাদের বর্জ্যে নদীর পানি এখন বিষাক্ত। পানি ও বায়ু দূষণের ফলে মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোন ফসল হচ্ছেনা। সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর জাহাজগুলোও নদী দখল করে রাখায় লঞ্চসহ নৌযানগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা নদী দখল ও দূষণের কথা স্বীকার করে জানান, মেঘনা-ধলেশ্বরী নদীর দুইপাড়ে অনেকগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কোনটা অনুমোদনপ্রাপ্ত আবার কোনটা অনুমোদনহীন। প্রতিটি শিল্পকারখানাই নদীর পানি দূষণ ও বর্জ্য নিষ্কাশনের সঙ্গে জড়িত। আমরা বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছি। এই দুইপাড়ের শিল্পকারখানার মালিকদের সতর্কও করেছি। কিন্তু দিন দিন নদী দখল ও দূষণের টেনডেন্সি বেড়ে যাচ্ছে। নদী প্রতিনিয়ত মেরে ফেলছে। এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। অতি শীঘ্রই মন্ত্রণালয় থেকে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − twelve =