Site icon Aparadh Bichitra

চিকিৎসা নেবার জন্য বিদেশে ছুটে যাওয়ার বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়

বাংলাদেশে যারা ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচিত, তাদের অনেকেরই চিকিৎসা নেবার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় ছুটে যাওয়ার বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়।

 

ব্যক্তিগত টাকা খরচ করে বিদেশে চিকিৎসা নিলে সেটি নিয়ে তেমন হয়তো কোন আপত্তি উঠে না, কিন্তু রাষ্ট্রের টাকায় অর্থাৎ জনগণের করের টাকায় বিদেশে চিকিৎসা নেবার বিষয়টি নিয়ে অনেক সময়ই প্রশ্ন ওঠে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা – রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রী – কেন অসুস্থ্য হলে বিদেশে চিকিৎসা নিতে ছুটে যান?

তাদের জন্য কি তাহলে দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই?

নাগরিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন এ প্রশ্ন তুলে ঢাকায় আজ মঙ্গলবার এক মানববন্ধন করেছে। সংগঠনটি এ প্রশ্ন এমন এক সময়ে তুলেছে যখন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ চোখের চিকিৎসা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ছয়দিন সিঙ্গাপুরে অবস্থান শেষে ঢাকায় ফিরছেন। সংগঠনটির আহবায়ক মো: শামসুদ্দিন প্রশ্ন তোলেন, “রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ মন্ত্রী, এমপিরা বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণ হয় জনগণের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সরকার প্রধানের গল-ব্লাডার অপারেশন, রাষ্ট প্রধানের চোখের চিকিৎসা বিদেশে হলে জনগণ চিকিৎসা পাবে কোথায়?”তিনি দাবী করেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্র কিংবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেন না বলেই বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার মান নিম্নগামী।”তারা যদি দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেন, তাহলে এখানকার ডাক্তাররা তাদের কর্মস্থলের প্রতি মনোযোগী হতেন এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ভালো হতো,” বলছেন মি: শামসুদ্দিন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তি কেন সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন না? এটা কি এমন ধারণা দেয় যে দেশের চিকিৎসা সেবার প্রতি তাদের কোন আস্থা নেই? নাকি দেশের হাসপাতালগুলো তাদের চিকিৎসা দেবার মতো অবস্থায় নেই? বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে এটা মানসিকতার বিষয়। তবে কখনো-কখনো চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অধ্যাপক মাহবুব বলেন, কিছু চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি এখনও আসেনি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। শীর্ষস্থানীয় এই চিকিৎসক বলেন, “বাইরে যাওয়ার প্রবণতা এবং চিকিৎসা পাওয়া – দুটো এক জিনিস নয়। নাইনটি পার্সেন্ট চিকিৎসা আমাদের এখানে সম্ভব।” অধ্যাপক মাহবুব বলছেন, রাষ্ট্র কিংবা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার জন্য বিদেশ যান। তবে এসব ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কোন কোন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কিংবা সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলে তিনি জানান। নাগরিক পরিষদ নামের সংগঠনটি বলছে, সংসদ সদস্যদের উচিত তাদের নির্বাচনী এলাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেয়া। চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের বিদেশমুখো হওয়ার কারণেই দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ছে না বলে সংগঠনটি অভিযোগ করছে। সংগঠনটির আহবায়ক মো: শামসুদ্দিন বলেন, “এদেশে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে না তুলে ভারতীয় হাসপাতালে ভর্তির বুথ খুলে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।” “তাঁরা নিজেরা ওয়াশিংটন, নিউইর্য়ক, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, সৌদি আরবে চিকিৎসায় নেন। দেশের জনগণ বাধ্য হয় ভারতে চিকিৎসা গ্রহণ করেন,” বলেন মি: শামসুদ্দিন।