মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি পবিত্র আল কোরআন

0
1367

পবিত্র কোরআনকে সর্বকালের, সর্বদেশের, সর্বলোকের জীবনবিধান ও মুক্তির সনদ হিসেবে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে নাজিল করেছেন।

 

মানুষের ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির দিগদর্শণ তথা সমস্ত বিশ্ববাসির জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত আল্লাহর বাণী পবিত্র ‘আল-কোরআন’। এটি বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর প্রতি মহান আল্লাহর কাছ থেকে ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.) মারফত সুদীর্ঘ ২৩ বছরে অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কোরআন নাজিলের ছয় মাস আগে থেকেই মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর পেয়ারে হাবিব হজরত মুহম্মাদ (সা.)-কে স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান কাজের জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (আ:) হতে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর উপর ওহী নাজিলের সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি স্বপ্নে যা দেখতেন তা দিনের আলোর মতো তাঁর জীবনে প্রতিভাত হতো। হজরত জিবরাইল (আ:) এর মাধ্যমে ওহী প্রাপ্তির আগে আস্তে আস্তে তিনি নির্জনতা প্রিয় হয়ে ওঠেন, হেরা গুহায় নিভৃতে মহান আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে তিনি মশগুল হয়ে পড়েন এবং বিশাল সৃষ্টি ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন। খাবার পানি শেষ হয়ে গেলে সেসব নেয়ার জন্যেই তিনি শুধু বাড়ি যেতেন। মাঝে মাঝে উনার অতি প্রিয় সহধর্মিণী হজরত বিবি খাদিজা (আ.) উনাকে হেরা গুহায় খাবার দিয়ে আসতেন। একদিন হজরত জিবরাইল (আ.) হজরত মুহাম্মাদ (সা:) এর কাছে এসে গভীর কণ্ঠে তাঁকে বলেন ‘ইকরা‘ পড়ুন। প্রিয় নবী (সা.) বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন।উদ্বেলিত কণ্ঠে তাকে বললেন ‘আমি তো পড়তে জানি না’। হজরত জিবরাইল (আ.) তখন হুজুরে পাক হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে বুকে চেপে ধরে আবার বলেন, পড়ুন। তৃতীয় বার যখন হজরত জিবরাইল (আ.) তাঁকে বুকে আলিঙ্গন করে ছেড়ে দিয়ে বলেন, পড়ুন! ‘পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ (সূরা: আলাক্ব, প্রথম পাঁচ (১-৫) আয়াত।) পড়লেন। তারপর সঙ্গে সঙ্গে হজরত জিবরাইল (আ.) সেখান থেকে চলে গেলেন। এই হলো পবিত্র কোরআন নাজিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। পবিত্র কোরআন মানবজাতির জীবনবিধান। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সুপথে পরিচালিত করার জন্য এই আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে পবিত্র কোরআনুল হাকিমের তেলাওয়াত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর বর্ণনা, নবী করিম (সা.) বলেছেন, এই কোরআনুল হাকিম হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য একটি পরম নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালার এই নিয়ামত থেকে সাধ্য অনুযায়ী নিজের অংশ নিয়ে নাও। কোরআনুল হাকিমের মধ্যমেই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হতে পারে এবং এই পরশ পাথর দ্বারাই মানুষের অন্তর, মনমানসিকতা ও চিন্তাধারাকে পবিত্র করা যেতে পারে। আর মানুষ এর দ্বারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আরোগ্যও লাভ করতে পারে। আজকের ১ম পর্বে ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের আমরা জানাবো পবিত্র কোরআনুল কারিমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ইনশাল্লাহ! পরের পর্বগুলোতে পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সূরা বাংলা অর্থসহ ধারাবাহিকভাবে দেয়া হবে।

একনজরে পবিত্র কোরআন পরিচিতি নিম্নে তুলে ধরা হলো-

১. নাজিলের সময়কাল ৬১০ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ রমজান ক্বদরের রজনীতে হেরা পর্বতের গুহায় কোরআন নাজিল হয়। ২. নাজিলেন মোট সময়কাল ২২ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। ৩. প্রথম নাজিলকৃত সূরা ফাতিহা, আর আয়াত হলো সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত এবং  শব্দ হলো ইকরা। ৪. সর্বশেষ নাজিলকৃত সূরা-আন-নসর ও সর্বশেষ নাজিলকৃত আয়াত সূরা বাকারার ২৮১  নম্বর আয়াত।

৫. কোরআন নাজিল শেষ হয় হিজরী ১১ সালের সফর মাসে। ৬. সর্ববৃহৎ সূরা সূরাতুল বাকারা, আয়াত সংখ্যা- ২৮৬। ৭. সবচেয়ে ছোট সূরা সূরাতুল কাওসার, আয়াত সংখ্যা-৩। ৮. মোট সূরা ১১৪টি, মাক্কী ৯২টি, মাদানী ২২টি। ৯. মোট রুকু ৫৪০টি, প্রশিদ্ধ মতে। ১০. মোট আয়াত ৬,৬৬৬টি, মতান্তরে ৬,২৩৭টি। ১১. মানসুখ আয়াতের সংখ্যা ৫ মতান্তরে ১৯। ১২. আয়াতের প্রকারভেদ, তিন প্রকার যথা- হালাল, হারাম ও আমছাল। আর শব্দের দিক  দিয়ে ২ ধরনের। মুহকাম ও মুতাশাবিহ।

১৩. আয়াতের ধরন, আদেশসূচক আয়াত ১০০০, নিষেধসূচক ১০০০, সুসংবাদসূচক ১০০০,  ভীতি প্রদর্শনসূচক ১০০০, কাহিনীমূলক ১০০০, দৃষ্টান্তমূলক ১০০০, হালাল সংক্রান্ত ২৫০,  হারাম সংক্রান্ত ২৫০, দোয়া, জিকির ও তাসবিহ সংক্রান্ত ১০০টি। ১৪. মোট শব্দ ৮৬,৪৩০টি। ১৫. মোট অক্ষর ৩,৪৭,৮৩৩টি, মতান্তরে ৩,৪৯,৩৭০টি, মতান্তরে ৩,৫১,২৫২টি। ১৬. মোট মনজিল ৭টি, পারা বা অংশ ৩০টি।

১৭. মোট হরকত, জের ৩৯,৫৮২, জবর ৫২,২৩৪, পেশ হলো ৮,৮০৪, জযম ১,৭৭১,  নুকতা ১,০৫,৬৮১, তাশদিদ ১,৪৫৩, ওয়াকফ্ ১০,৫৬৪, মাদ ১,১৭১ ও আলিফ মামদুদাহ  ২৪০টি। ১৮. কোরআনে হরফের সংখ্যা, আলিফ ৪৮,৪৭৬, বা ১১,৪৪২, তা ১০,১৯৯, ছা ১,২৭৬,  জিম ৩,২৭৩, হা ৩,৯৭৩, খা ২,৪৪৬, দাল ৫,৬৪২, যাল ৪,৬৭৭, রা ১১,৭৯৩, যা ১,৫৯৩ সিন ১,৮৯১, শিন ২,২৫৩, ছোয়াদ ২,০১৩, দোয়াদ ১,৬০৭, তোয়া ১,২৭৭, যোয়া  ৮৪২, আইন ৯,২২০ গাইন ২,১০৮, ফা ৮,৪৯৯, ক্বাফ ৬,৮১৩, কাফ ৯,৫০২, লাম  ৩৩,৪৩২, মিম ২৬,৫৬০, নুন ৪৫,১৯০, ওয়াও ২৫,৫৩৬, হা ১৯,০৭০, লাম আলিফ  ৪,৭২০, ইয়া ৪৫,৯১৯টি।

১৯. সর্বপ্রথম নুকতা ও হরকত প্রবর্তন করেন আবুল আসওয়াদ দুয়াইলি মতান্তরে হাজ্জাজ  বিন ইউসুফ। ২০. তেলাওয়াতে সিজদা ১৪টি, সাকতার সংখ্যা ৪টি। ২১. আল কোরআনের নাম ৫৫টি। ২২. কোরআনে ব্যবহৃত শব্দ সংখ্যা, কোরআনে কোরআন শব্দটি এসেছে ৬১ বার, আল্লাহ ২,৬৯৮ বার, রব ৯৭ বার, রহমান ৫৭ বার, রাহীম ১১৪ বার, মুহাম্মদ ৪ বার, আহমদ  ১ বার, লা ইলা হা ইল্লাহু ২ বার, সালাত ৮২ বার, যাকাত ৩২ বার, সাদাকা ১২১২ বার।

২৩. বিভিন্ন নাম, নবী রাসূলের নাম ২৫ জনের, ফেরেশ্তার নাম ৪ জনের, শয়তান শব্দটি এসেছে ৮৫ বার, ইবলিশ ১১ বার, জিনদের প্রসঙ্গ ৩২ বার, হজরত মুসার (আ.) এর নাম  ১৩৫ বার, আল্লাহদ্রোহীদের নাম ৬ জনের। ২৪. বিসমিল্লাহ নেই, সূরা তওবায়। ২৫. বিসমিল্লাহ দুইবার, সূরা নামলে। ২৬. মীম নেই সূরা কাওসারে।

২৭. নয় মীম সূরা কাফিরুনে। ২৮. কোরআনে বর্ণিত একজন সাহাবী হজরত জায়েদ (রা.)। ২৯. কোরআনে বর্ণিত একজন নারী হজরত মারয়াম বিনতে ইমরান। ৩০. কোরআনের প্রথম ওহী লেখক জায়েদ বিন সাবেত (রা.)।

৩১. তরজমানুল কোরআন বা কোরআনের মুখপাত্র হজরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস। ৩২. কোরআনকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে। ৩৩. কোরআনের প্রথম সংকলক হজরত ওসমান (রা.)। ৩৪. কোরআনের প্রথম মুফাস্সির হজরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস (রা.)। ৩৫. কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক (আংশিক) আমির উদ্দিন বসনিয়া। ৩৬. কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক মাওলানা হাবিবুর রহমান। ৩৬. কোরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদক গিরিশচন্দ্র সেন। ৩৭. কোরআনের বাচনভঙ্গি, অতি প্রাঞ্জল ও বক্তিতাপূর্ণ।

৩৮. কোরআনের বিষয়বস্তু, মানুষ ও জিন।  ৩৯. কোরআনের আলোচ্য বিষয়, মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণের পথনির্দেশ। ৪০. আল কোরআন নাযিলের উদ্দেশ্য:  ১. আল কোরআন হেদায়েতের শ্রেষ্ঠ আলোকবর্তিকা। ২. তাজকিয়ায়ে নফসের গাইড লাইন। ৩. ভ্রান্ত আকিদা অপনোদনে শাণিত তলোয়ার। ৪. শিরকমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার প্রামাণ্য দলিল। ৫. পাপীদের হুশিয়ারি সংকেত। ৬. কুফুরি মতবাদের মূলোৎপাটনকারী। ৭. জাহিলিয়াত নির্মূলের পতাকাবাহী। ৮. অন্ধকারে মশালবাহী। ৯. জ্ঞান-বিজ্ঞানের সৌধমালা। ১০. শান্তি প্রতিষ্ঠার অনন্য মাধ্যম। ১১. ইসলামী জীবনের রূপরেখা বর্ণনা। ১২. রাষ্ট্র পরিচালনার ফর্মুলা। ১৩. সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের নির্দেশনা। ১৪. মানবজাতির কল্যাণ কামনা। ১৫. ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার চিরস্থায়ী দলিল।

১৬. বিশ্ব মানবতার মুক্তি সনদ। ১৭. জান্নাত লাভের চূড়ান্ত সিঁড়ি। ১৮. নেক্কারদের সুসংবাদদাতা। ১৯. আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রধান রাজপথ। ২০. সেরা মানবের সুসংবাদদাতা। ২১. মানবাত্মার সুসভ্যকরণ। ২২. সত্যপথের সন্ধানদাতা। ২৩. সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবার গঠনের দিকনির্দেশক। ২৪. পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। ২৫. নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বজ্রকণ্ঠ। ২৬. একত্ববাদের ভিত্তিভূমি। ২৭. সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। ২৮. আল্লাহর পরিচিতি তত্ত্ব। ২৯. কিয়ামতের ধারা বর্ণনা। ৩০. ইনছাফপূর্ণ সমাজ কায়েমের সূর্য সৈনিক। ৩১. সুদমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রধানসিপাহ্সালার। ৩২. শ্রেষ্ঠ উম্মতের ঘোষণাকারী। ৩৩. অতীত ইতিহাসের স্মারক। ৩৪. রিসালাতের ঘোষণাকারী।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − six =