ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি

1
2823

বাংলাদেশের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, ঢাকার ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করা হয়। তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে এটি `বাস্তবতা বিবর্জিত` তথ্য।

 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, গত ছয় মাসে সংস্থার নিয়মিত বাজার অভিযানে যেসব ফার্মেসি বা ঔষধ বিক্রির দোকান পরিদর্শন করা হয়েছে তাতে ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতেই তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পেয়েছেন। অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেন, তিনি নিজেসহ কয়েকজন কর্মকর্তা মনিটরিং টিমগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রতিদিন আমাদের তিনটি টিম বাজার পরিদর্শনে গিয়েছি। গত ছয় মাসের চিত্র এটি যে যেসব এলাকায় আমরা কাজ করেছি বিশেষ করে ফার্মেসিগুলোকে সেখানে প্রায় প্রতিটিতেই কিছু না কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ আমরা পেয়েছি। আর এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মিস্টার শাহরিয়ার বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা এখন ঔষধ ব্যবসায়ী অর্থাৎ ফার্মেসি মালিকদের সাথে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আসলে বিষয়টি বোঝানো গেলে এ সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। অনেক জায়গাতেই মালিকরা সহায়তা করছেন। থানা ও জেলা পর্যায়েও কর্মকর্তাদের ব্যবসায়ী বা মালিকদের সাথে সরাসরি কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের হিসেবে, দেশে ফার্মেসির সংখ্যা এক লাখ ২৪ হাজারের মতো। তবে এসব লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত হয় কয়েক হাজার ফার্মেসি। সাধারণত ফার্মেসীকে লাইসেন্স দেয়া বা কোনো অনিয়ম পেলে লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা আছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের। মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলছেন, অভিযানের সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়া গেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কারাদণ্ড দেয়া ছাড়া আর সব পদক্ষেপই নিতে পারেন। সব ধরণের জরিমানা ছাড়াও প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলের জন্য আমরা (ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর)কে বলতে পারি আইন অনুযায়ী। সাম্প্রতিক সময়ে একটি ফার্মেসী আমরা তাৎক্ষনিক বন্ধও করে দিয়েছি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ই মার্চ তারা শাহজাহানপুর ও ধানমন্ডিতে দুটি ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পেয়ে জরিমানা করেছেন ৫০ হাজার টাকা করে। বনানীতে একটি ফার্মেসিকেও জরিমানা করা হয়েছে গত ১১ই মার্চ। আবার ১২ই মার্চ ক্ষিলক্ষেতের একটি ফার্মেসি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও শ্যামলী,মুগদাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় নিয়মিত অভিযানে বেশ কিছু ফার্মেসিকে জরিমানা করা হয়েছে। মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলছেন, “এমনও হয়েছে যে একটি ফার্মেসিতে ঢুকেই ঔষধ রাখার বাক্সে হাত দিয়েই পেয়েছি মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ। কিন্তু তাদের সেটি নিয়ে কোনো বোধোদয়ই নেই। আমরা এখন তাদের বোঝানোরও চেষ্টা করছি যে এটি ভয়াবহ অন্যায় ও অসৎ চর্চা। সাধারণত ফার্মেসীকে ব্যবসার লাইসেন্স দেয়া বা কোনো অনিয়ম পেলে লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা আছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর যা বলছে

সাধারণত ফার্মেসিকে ব্যবসার লাইসেন্স দেয়া বা কোনো অনিয়ম পেলে লাইসেন্স বাতিলের ক্ষমতা আছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের। অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, যে ফার্মেসিতে বড় সমস্যা হলো ফার্মাসিস্ট রাখা হয়না। তবে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও আমাদের সহায়তা করছেন। তিনি বলেন, “ভোক্তা অধিকার থেকে যে তথ্য এসেছে সেটি বাস্তবতা বিবর্জিত। কিছু দোকানে এমন অনিয়ম হতে পারে সেটি ২/৩ শতাংশের বেশি হবেনা।”নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। স্টোর ম্যানেজমেন্ট বিশেষ করে কোনো ধরণের ঔষধ কিভাবে রাখতে হবে।”তিনি জানান: “আবার কোনো ঔষধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কোম্পানি সেগুলো বদলে নতুন ঔষধ দেবে-এটিও নিশ্চিত করা হয়েছে”। মি. রহমান বলেন, বাজারে এখন ৪০/৪৫ হাজার ঔষধের আইটেম আছে এবং বাজারে গিয়ে দশটি ঔষধ চাইলে সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়া কঠিনই হবে।”তবে রেগুলার ফার্মাসিস্ট রাখা, মেডিসিন শপের কার্যক্রম নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত আলোচনা করছি। কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে।”তিনি দাবি করেন, “এসব কিছু নিয়ে এখন ফার্মেসিগুলোতে আমরা নিয়মিত অনেক সময় দিচ্ছি। ফলে পরিস্থিতির অনেক উন্নত হয়েছে।”স্যাম্পল ঔষধ আর আন-রেজিস্টার্ড ঔষধ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলছেন, বাজারে নতুন উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে স্যাম্পল হিসেবে দেয়া ঔষধগুলো দোকানে চলে আসা। “বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ঔষধ চিকিৎসকদের দিয়ে থাকেন। এগুলোতে অনেক সময় মেয়াদ উল্লেখই থাকেনা।”কিভাবে যেনো এসব ঔষধ ফার্মেসিতে চলে আসছে। যেগুলো বিক্রেতারা গছিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতাকে।”ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান বলছেন, এটি অনৈতিক যদি কেউ ইচ্ছে করে স্যাম্পল ঔষধ রাখেন ও বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বাজারে ঔষধের ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হলো আন-রেজিস্টার্ড ঔষধ। “সাধারণত চোরাইপথে বা লাগেজে করে অনেক ঔষধ এনে বাজারে বিক্রি করেন কম দামে। এগুলোতে মেয়াদ সম্পর্কিত তথ্যই থাকেনা। কারণ এগুলো বৈধ পথে আসেনা। এগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তবে ব্যবসায়ীরা ক্রমশ এসব বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন। আর আমরা কাউন্সেলিং করাচ্ছি প্রতিনিয়ত”।

মডেল ফার্মেসি

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মি. রহমান বলছেন, নির্ভেজাল ঔষধ বিক্রি নিশ্চিত করতে তারা মডেল ফার্মেসি করছেন বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকাসহ সারাদেশে পর্যায়ক্রমে দু`হাজারের বেশি মডেল ফার্মেসি হবে এবং প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলছেন ফার্মাসিস্ট রাখা, ক্রেতাদের ঔষধ ভালো করে বুঝিয়ে দেয়া, যথাযথভাবে ঔষধ সংরক্ষণসহ ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই মডেল ফার্মেসি হচ্ছে। যেগুলোতে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন দুটি ক্যাটাগরির মডেল ফার্মেসি হচ্ছে যার একটি হচ্ছে ঢাকা বা বড় শহরগুলোতে আর অন্য ক্যাটাগরির ফার্মেসি হবে থানা ও জেলা পর্যায়ে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − four =