জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম নিষেধাঞ্জা শরু হলেও চাল না পাওয়ার অভিযোগ লক্ষ্মীপুরের জেলেদের

0
491
মো.আতোয়ার রহমান মনির,লক্ষ্মীপুর নিষেধাঞ্জা শরু হলেও চাল না পাওয়ার অভিযোগ লক্ষ্মীপুরের জেলেদের। মার্চ-এপ্রিল ২মাস জাটকা সংরক্ষন ও ইলিশের উৎপাদনের লক্ষ্যে ২মাস নিষেধাঙ্গা পর মেঘনায় আবার পুর্নোদ্যমে মাছ ধরবেন এমন আশায় জাল বুনন ও ট্রলার ট্রলার মেরামতসহ সকলকাজে ব্যস্ত রয়েছেন এখানকার জেলেরা। তবে অভিযান চলাকালীন সময়ে জেলেদের আর্থিক অনুদান দেয়া হত। এবার এখানো তা দেয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়ে সরকারি দেয়া নিষেধাঙ্গা মানলেও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় জেলেদের ভাগ্যে মিলছে না সরকারি বরাদ্দের পুনর্বাসনের চাল।
অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যেরা তাদের পচন্দের জেলেদের ও আতœীস্বজন, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি ও কৃষকসহ নানা পেশার মানুষকে তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করার। এদিকে চাল বিতরনের অনিয়ম বন্ধের পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছে জেলেরা।কেউ কেউ জীবন জীবিকা আর মহাজনের দেনা পরিশোধ করতে সুদ বিহীন ঋণ সহায়তা চেয়েছেন। জেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানায়,জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে ৪২ হাজার নিবন্ধিত জেলে । এসব জেলে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে। লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এ এক”শ কিলোমিটার মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকা সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। জাটকা সংরক্ষন ও ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২মাস নদীতে সকল ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষনাসহ এসময় সব রকমের ইলিশ সংরক্ষন, আহরন, পরিবহন, বাজারজাত করন ও মজুদকরন নিষিদ্ধ রয়েছে। এ সময়ে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ,উপজেলা-জেলা প্রশাসন,পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছেন তারা।
তালিকায় তৈরিতে টাকা পয়সার লেনদেন গ্রহনে অসন্তোষ প্রকাশ জেলে রামগতি চর ফলকন আব্দুর রহমান জানান, চাউল নেয়ার জন্য তালিকায় নাম বাবত তার নিকট চাওয়া হয়েছে ৫ শত টাকা। টাকা সংগ্রহ না করতে না পাড়ায় নাম নেই বলে জানান এ জেলে। তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের  গাফিলতির কারণে এখনও বরাদ্দকৃত চাল পাচ্ছেনা  বলে অভিযোগ করছেন। অপরদিকে রামগতির আলেকজান্ডারের জেলে নিজাম জানান,্এখন নিষিদ্ধ সময়। সরকারি বরাদ্দের চাল না পেলেও তিনি মেঘনায় মাছ ধরতে যাননি। চলতি নিষেধাজ্ঞার সময়ে মৎস্য অধিদপ্তর ও কোষ্টগার্ড এসময়ে নামমাত্র নদীতে অভিযান চালিয়ে কিছু নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল,জেলেসহ ইলিশ মাছ আটক করে। পরে জেল জারিমানা দিয়ে আবার ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তুনিষেধাঙ্গা মানলেও যথা সময়েপ্রৃকত এসব ভিজিএফের চাল পাচ্ছেনা জেলেরা ।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ,মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেবে। কিন্তু মার্চ মাসের আগে যথাসময়ে জেলের কাছে খাদ্যসহায়তা ভিজিএফের চাল দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও জেলার কোথাও সরকারি বরাদ্দ চাউল হাতে পাননি তারা। তাদের দাবি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকসহ নানা পেশার মানুষকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে জেলে তালিকায়। এছাড়া তালিকাভুক্ত জেলেরাও ঠিকমতো পাচ্ছেননা ভিজিএফের চাল। এদিকে এমন অনিয়মের ঘটনা রয়েছে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রামগতি ও রায়পুর উপজেলার অনেক ইউনিয়নেও।  তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে কমলনগর পাটারিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম নুরুল আমিন রাজু । তিনি জানান,তার ইউনিয়নে ৩ হাজার ৬২৬ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। বরাদ্ধ কম পাওয়ায় সব জেলেকে ভিজিএফের তালিকাভূক্ত করা যায়নি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৬২ জন জেলের জন্য চাল বরাদ্দ হয়েছে। অন্যরা চাল থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে বাদ পড়া জেলেদের তালিকাভুক্ত করা হবে। অনেক জেলে আছেন যারা এখনো নিবন্ধিত হতে পারেননি। সব জেলেকে নিবন্ধন তালিকায় আনার জন্য দাবি জানান তিনি। স্থানীয়রা জানান,মৎস্য অধিদপ্তর ও কোষ্টগার্ড এসময়ে নামমাত্র নদীতে অভিযান চালিয়ে কিছু নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল,জেলেসহ ইলিশ মাছ আটক করে। পরে টাকা ও মাছ গ্রহন করে জেল জারিমানা ছাড়াই আবার ছেড়ে দেয়া হয় জেলেদের। আর গড়ে উঠা মেঘনা নদীর রামগতি ও কমলনগরের মতির হাটসহ বাতির খাল এলাকায় মেঘনার পাড়ে শতাধিক  আড়তে ভোর বেলায় মাছ ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র খোলা রয়েছে। অভিযানে উচ্ছেদ ও বন্ধ করা হয়নি আড়তসহ বরফকলগুলো। রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী এলাকার মৎস্য আড়ৎদার জয়নাল আবদীন দেওয়ান জানান, ২মাস নিষেধাঙ্গা থাকায় মৎস্য আড়ৎ গুটিয়ে রেখেছেন তিনি।  রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পি রানী রায় বলছেন,ইতোমধ্যে চাল পেয়ে যাওয়ার কথা,চেয়ারম্যানরা অবশ্যই চাউল দিয়ে দিবে। চাউল দিয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়াম্যানদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলেরা অবশ্যই সঠিক সময়ে প্রকৃত জেলেরা চাউল পাবে।
জেলা মৎস কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্যাহ জানান, ইলিশের উৎপাদন ও জাটকা সংরক্ষনের লক্ষ্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল দুই মাস নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ,উপজেলা-জেলা প্রশাসন,পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করছে। এ জন্য এখনো পর্যন্ত নদীতে কোন জেলেকে নদীতে নামতে দেখা যায়নি। আর এখানকার জেলেরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়ে সরকারি দেয়া নিষেধাঙ্গা মানছে। নিবন্ধিত সব জেলে যাতে খাদ্য সহায়তা পান সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে তাদের জন্য ৪০ কেজি হারে চাল দেয়া হবে।
আর কোথাও চাউল বিতরণে তালিকায় অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − six =