রুট পারমিট ছাড়াই চলছে ‘সুপ্রভাত

0
791

গাজীপুরে ১৮ বছর ধরেই রুট পারমিট ছাড়া চলাচল করছিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীকে হত্যার জন্য দায়ী ‘সুপ্রভাত স্পেশাল সার্ভিস’।

 

জানা গেছে, শুধু সুপ্রভাত নয়, ভিআইপি, তুরাগ, পলাশ, কেপি, রাজদূতসহ বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিসের পাঁচ শতাধিক বাস গাজীপুরে চলছে রুট পারমিট ছাড়াই। কিন্তু নির্বিকার পুলিশ ও বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ)। বিআরটিএ সূত্র জানায়, সুপ্রভাতের বাস রাজধানীর সদরঘাট থেকে রামপুরা হয়ে উত্তরার রানীগঞ্জ পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি ছিল। রুট নম্বর ছিল এ-১৩৮। কিন্তু এর বাস গাজীপুর মহানগরীর গাজীপুরা পর্যন্ত চলাচল করত। সুপ্রভাতের একজন পুরনো চালক রফিকুল ইসলাম জানান, ১৮ বছর ধরে তিনি সুপ্রভাতের বাস চালাচ্ছেন। রাজধানীর একসময়ের অতি পরিচিত ‘১০ নম্বর রুটের সদরঘাট টু রামপুরার’ লক্কড়ঝক্কড় সার্ভিসটি শতাধিক নতুন বাস নিয়ে ২০০০ সালে সুপ্রভাত সার্ভিস নামে যাত্রা শুরু করে। কয়েক বছর আগে সুপ্রভাত স্পেশাল নাম দিয়ে ভাড়াও বাড়িয়ে দেয়। এখন তাদের বাসের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন শ। রুট পারমিট ছাড়া গাজীপুরে আরো অনেক কম্পানির বাস চলছে বলে দাবি করেন তিনি। রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতার প্রভাবের কারণেই কেউ সুপ্রভাতের পারমিট নিয়ে কোনো ঝামেলা করত না। তিনি তথ্য দেন পরিবহন নেতা, পুলিশ ও বিআরটিএ কর্মকর্তাদের মাসিক চাঁদা দিয়ে চলত বাস সার্ভিসটি। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর পরিবহন চালক, শ্রমিক ও মালিকসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পাওয়া যায় চালক রফিকুল ইসলামের দেওয়া তথ্যের। একাধিক বাস মালিক জানান, সাত বছর ধরে গাজীপুর টু রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির রুটে চলছে (রুট নম্বর এ/২০৭) ভিআইপি পরিবহন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি অনুমোদিত বাস রুটের তালিকায় ভিআইপি নামে কোনো কম্পানির অনুমোদন নেই। এ/২০৭ নম্বর রুটটি দুলদুল সার্ভিসের নামে অনুমোদন দেওয়া। চলাচলের অনুমোদন রয়েছে টঙ্গীর চেরাগ আলী থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী পর্যন্ত। ছয়টি বাস ও ২৪টি মিনিবাস মিলিয়ে অনুমোদিত বাসের সংখ্যা ৩০। অথচ দুলদুলের রুট ব্যবহার করে টঙ্গীর পরিবর্তে গাজীপুরের শিববাড়ি পর্যন্ত চলছে ভিআইপির শতাধিক বাস। রুট পারমিটের শর্ত অনুযায়ী নিজস্ব টার্মিনালে বাস পার্কিংয়ের কথা থাকলেও বাস রাখা হচ্ছে সড়কেই। গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন মন্টু জানান, গাজীপুরের কোনো বাস সার্ভিসের রুট পারমিট নেই। তিনি আশ্বাস দেন, রুট পারমিট ছাড়া তুরাগ, গ্রেট তুরাগ, পলাশ, কালিয়াকৈর পরিবহন (কেপি), রাজদূত, পথের সাথী ও চ্যাম্পিয়ন বাস সার্ভিস কিভাবে চলছে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। সার্ভিসগুলোর মধ্যে তুরাগ ও গ্রেট তুরাগ টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে রামপুরা হয়ে যাত্রাবাড়ী, পলাশ পরিবহন গাজীপুরের শিমুলতলী-চন্দ্রা-সাভারের নবীনগর, কেপি পরিবহন জয়দেবপুর-কালিয়াকৈর, পথের সাথী গাজীপুর-কাপাসিয়া, চ্যাম্পিয়ন গাজীপুরের চন্দ্রা-চান্দনা চৌরাস্তা-মাওনা রুটে চলাচল করে। গাজীপুর জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কেপি পরিবহনের পরিচালক আকবর আলী স্বীকার করেন আবেদন করেও রুট পারমিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে রুট পারমিট ছাড়াই তাঁরা বাস চালাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে পুলিশ বাস ধরে মামলা দেয়, আটকও করে। গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কয়েক মাস আগে গাজীপুরে কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই রুট পারমিট ও ফিটনেস ছাড়া বাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এদিকে রাতারাতি রং ও নাম পাল্টে সুপ্রভাতের বাস সম্রাট পরিবহনে পরিণত হওয়ার খবর জানাজানির পর গতকাল দেখা যায়নি এসব বাস। এ প্রসঙ্গে পুলিশের সহকারী কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, সব বাস উধাও হয়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 5 =