১২ দফা দাবিতে রংপুরে কৃষক ফ্রন্টের মিছিল, সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশ

0
1204

অবি ডেস্ক: সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর কৃষক ফ্রন্ট এর উদ্যোগে ৩১ মার্চ রবিবার সকাল ১১টায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য, ১০ টাকা কেজি দরে চাল ও চাকুরীর প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নসহ ১২ দফা দাবিতে রংপুরে কৃষক ফ্রন্টের মিছিল, সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি পালিত হয়। প্রেসক্লাব থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কাচারী বাজারে সমাবেশে মিলিত হয়। সংগঠনের জেলা আহবায়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আহসানুল আরেফিন তিতু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রংপুর জেলার সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, কৃষক ফ্রন্টের জেলা সংগঠক এমদাদুল হক বাবু প্রমূখ।

সভাপতির বক্তব্যে কমরেড কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন কৃষক, ক্ষেতমজুর, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের শ্রমে ঘামে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরে, ক্ষেতে সোনার ফসল ফলে। অথচ এই মানুষেরাই দেশে সবচেয়ে অবহেলার শিকার। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই-কোনকিছুই তাদের নিশ্চিত নয়। উপরন্তু এরাই শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং হয়রানির শিকার হয়। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলার সকল অফিস সাধারণ মানুষের জন্য ফাঁদ। জমি কেনাবেচা, খারিজ, খাজনা পরিশোধ ইত্যাদি কাজে ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি, সেটেলমেন্ট অফিসে যেতে হয়। এসব অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয়না। দুই দিনের কাজে দুই মাস ঘুরতে হয়। আইন অনুযায়ী ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির খাজনা মওকুফ থাকলেও কৃষকের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বর্ধিত হারে তা আদায় করা হচ্ছে। জমি সংক্রান্ত সকল বিষয় অনলাইন করার মধ্য দিয়ে লুটপাটের আর একটা ক্ষেত্র তৈরি করেছে সরকার। অথচ বিনা পয়সায় এই সেবা কৃষকের পাওয়া উচিত। কৃষক বেশি দাম দিয়ে সার, বীজ, কীটনাশক কিনে ফসল ফলায় কিন্তু ন্যায্যমূল্যে সে ফসল বিক্রি করতে পারে না। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। সরকার চাইলে এসব সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে পারে। হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ফসল কিনতে পারে। কিন্তু কখনোই তা করা হয়না। লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষ ক্ষেতমজুর হিসেবে জমিতে কাজ করে। ফসল রোপন থেকে শুরু করে, কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সকল কাজই তারা করে থাকে। অথচ বেশিরভাগ দিন তাদের কষ্টে কাটে। বছরে তিনমাসের বেশি জমিতে কাজ থাকেনা। বাকী সময় রিক্সা চালিয়ে অথবা শহরে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে ঝুঁকি নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে পেট চালাতে হয়। সরকার চাইলে কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করে সারাবছর এই ক্ষেতমজুরদের কাজের ব্যবস্থা করতে পারে। আমাদের দেশের কৃষক ক্ষেতমজুররা যতদিন শরীরে শক্তি থাকে ততদিন কাজ করে যায়। শেষ বয়সে এই মানুষদেরই ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিতে হয়। দেশের ৪ কোটি ৮০ লক্ষ বেকার অভিশপ্ত জীবন-যাপন করছে। এই সরকার ঘরে ঘরে চাকুরীর প্রতিশ্র“তি দিলেও তা বাস্তবায়নে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে ভারতের সাথে কোন প্রকার দরকষাকষিতে যেতে চায় না সরকার। কিন্তু তিস্তা নদীতে শুস্ক মৌসুমে পানি না থাকায় গোটা উত্তরাঞ্চল মরুকরণের হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা এই কর্মসূচির মাধ্যমে অবিলম্বে ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen + fourteen =